প্যারিসের লা ডিফেন্স অ্যারেনা বুধবার রাতে মুখরিত ছিল লিওঁ মারশাঁকে নিয়ে। দু-দুটি স্বর্ণ জিতে রাতটা নিজের ও ফ্রান্সের করে দেন ফরাসি তরুণ। এর মধ্য দিয়ে গড়েছেন ইতিহাস। এ রাতেই সাঁতারের পুলে ইতিহাস গড়েছেন আমেরিকান জলকন্যা কেটি লেডেকিও। মেয়েদের ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি। প্রথম নারী সাঁতারু হিসেবে চারটি ভিন্ন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন লেডেকি। সেই সঙ্গে অলিম্পিকে নারী সাঁতারু হিসেবে আটটি স্বর্ণ জিতে ছুঁয়েছেন স্বদেশী জেনি থম্পসনের রেকর্ড।
প্যারিসে এর আগে ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ব্রোঞ্জ পান লেডেকি। গত বুধবার রাতে জিতেছেন নিজের ১২তম অলিম্পিক পদক। স্বদেশী ডারা টোরেস, নাতালি কফলিন ও জেনি থম্পসনের সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ১২টি পদক জয়ের রেকর্ড গড়েন ২৭ বছর বয়সী লেডেকি।
১৫ মিনিট ৩০.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন লেডেকি, যা নতুন অলিম্পিক রেকর্ড। ভেঙেছেন নিজেরই গড়া আগের রেকর্ড। ফ্রান্সের আনাস্তাসিয়া কিরপিচিনিকোভা রৌপ্য ও জার্মানির ইসাবেল গোস ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের পুলে নামেন ১৫ বছরের লেডেকি। ওই আসরে তিনি ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে স্বর্ণ জিতে নেন। এরপর ২০১৬ সালের রিও গেমসে চারটি ও টোকিও গেমসে দুটি স্বর্ণ জয় করেন। এবার প্যারিসে পেলেন এক স্বর্ণ। সব মিলে আটটি অলিম্পিক স্বর্ণ জিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি।
আজ রাতে নিজের প্রিয় ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে খেলবেন লেডেকি। এদিন তার সামনে সুযোগ রয়েছে যেকোনো খেলা মিলে ইতিহাসের সফলতম অ্যাথলিট সোভিয়েত ইউনিয়নের লারিসা লেটিনিনার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে রেকর্ড গড়েছিলেন লারিসা।
এদিকে সাঁতারের কিংবদন্তি যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেলপসের সঙ্গে তার তুলনা যে নেহায়েত বাড়াবাড়ি নয়, সেটি আরেকবার প্রমাণ করে দিলেন মারশাঁ। বুধবার রাতে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকের স্বর্ণ জয় করেন দাপটে। ১৯৭৬ সালের পর এই প্রথম এক রাতে দুটি স্বর্ণ জিতলেন কেউ। সব মিলে এটা প্যারিসে মারশাঁর তৃতীয় স্বর্ণপদক। এ রাতে দুটিতেই নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক গলায় নিয়েছেন আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা ফরাসি জলমানব।
লা ডিফেন্স অ্যারেনার দর্শকরা গলা ফাটাচ্ছিলেন মারশাঁ মারশাঁ ধ্বনিতে। তাদের নিরাশ করেননি তিনি। ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে তো জিতেই যাচ্ছিলেন রিওতে স্বর্ণজয়ী হাঙ্গেরির ক্রিস্টোফ মিলাক। যদিও শেষ ৫০ মিটারে অভাবনীয় কামব্যাকে শেষ হাসিটা হেসেছেন মারশাঁ। তার বিজয়ে প্যারিসের লা ডিফেন্স অ্যারেনায় যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তিনি সময় নেন ১ মিনিট ৫১.২১ সেকেন্ড। এ ইভেন্টে মিলাক রৌপ্য (১ মিনিট ৫১.৭৫ সেকেন্ড) ও কানাডার ইলিয়া খারুন (১ মিনিট ৫২.৮০ সেকেন্ড) ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
ছেলেদের ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকেও স্বর্ণ জিতে নেন মারশাঁ। তিনি সময় নেন ২ মিনিট ৫.৮৫ সেকেন্ড। এ ইভেন্টে অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক স্টাবলেটি-কুক রৌপ্য (২ মিনিট ৬.৭৯ সেকেন্ড) ও নেদারল্যান্ডসের ক্যাপসার করবিউ (২ মিনিট ৭.৯০ সেকেন্ড) ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
জয় শেষে মারশাঁ বলেছেন, ‘আমি সত্যিই খুব লাজুক মানুষ। এ দুই রেসে আমি ছিলাম আগ্রহের কেন্দ্রে। আমি আসলে দর্শকের কাছ থেকে শক্তি সঞ্চয় করছিলাম। তারা অবিশ্বাস্য, প্রতিটি ফাইনালে তারাই ছিলেন আমার শক্তি।’
ষষ্ঠ ফরাসি হিসেবে একই গেমসে তিনটি স্বর্ণপদক জিতলেন মারশাঁ। সর্বশেষ এ কীর্তি আছে ১৯৬৮ সালের আসরে জঁ-ক্লদ কিলির।