কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতার জেরে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণ চেয়েছে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। একই সঙ্গে চলমান ঋণের কিস্তি স্থগিতের দাবি করেছে সংগঠনটি। এরই মধ্যে গতকাল বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে শ্রমিকদের জুলাইয়ের বেতন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা এবং ব্যাংক প্রদত্ত গৃহীত ও পূর্ণবিকশিত বিল দ্রুত পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে বিটিএমএ।
অর্থমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে অধিকাংশ সময় বস্ত্র কারখানা বন্ধ থাকায় রফতানি খাতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যথাসময়ে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পারা, বাজারগুলো বন্ধ থাকায় স্থানীয় মিলগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় এবং রফতানিমুখী মিলগুলো যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। এছাড়া ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, কারখানায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ও কাঁচামাল সংকটে বস্ত্র কারখানার মালিকরা কঠিন সময় পার করছেন। এর মধ্যে শ্রমিকদের গত জুলাইয়ের বেতন পরিশোধের সময় এসে গেছে।
বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনায় বিটিএমএ মনে করে, চলতি মাসের বেতন পরিশোধে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদহারে এক বছর মেয়াদে ব্যাংক ঋণ দেয়া হলে কারখানাগুলোর পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে। তা না হলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ায় ব্যত্যয় হতে পারে। জুলাইয়ের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে একই হারে (২ শতাংশ) এক বছর মেয়াদে ঋণ দেয়া হলে বস্ত্র ও পোশাক খাতের মালিকরা উপকৃত হবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা প্রণোদনার আবেদন নয়, বরং তারা ঋণ চাচ্ছেন এবং ধারাবাহিকভাবে এক বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করা হবে।
একই সঙ্গে চলমান ঋণের কিস্তি স্থগিতের দাবি করেছে বস্ত্র খাতের বৃহত্তম এ সংগঠন। চিঠিতে সংগঠনটি বলছে, ক্রমাগত লোকসানে থাকা প্রচ্ছন্ন রফতানিমুখী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের পক্ষে এখন মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন। এ অবস্থায় সব মেয়াদি ঋণ আগামী ছয় মাসের জন্য সুদবিহীন করে কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার দাবি করেছে তারা। বিটিএমএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলো ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে সরবরাহকৃত সুতা ও কাপড়ের বিপরীতে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট এলসি প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেসব বিল গ্রহণ করেছে, তা যথাসময়ে পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়েছে। এ বিলের অর্থ পাওয়া গেলে সদস্য কারখানাগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় চলতি পুঁজির সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, কভিড-১৯-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করেছে। এ কারণে ক্রমাগতভাবে বস্ত্র খাতের রফতানি ক্রয়াদেশ কমছে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কিছু কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্যাস সংকট, প্রায় ২৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকদের ৭০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, গৃহীত বিল পরিশোধ না হওয়া, চলতি পুঁজির ঘাটতি এবং তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতে ব্যাংকের অনীহা, সর্বোপরি নগদ সহায়তা কমানো, এসব কারণে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমছে। এ কারণে শিল্পের উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন।