সেপ্টেম্বরে সুদহারে কাটছাঁটের ইঙ্গিত ফেডারেল রিজার্ভের

প্রকাশ: আগস্ট ০২, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে না আসায় দীর্ঘ সময়জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে অবস্থান করছে, যা দেশটির গৃহস্থালি থেকে ছোট বা বড় সব ধরনের ব্যবসায়িক খাতকে প্রভাবিত করছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশটির ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রতি বলেছে, আগামী মাসে সুদহার কমানো শুরু হতে পারে। গত বুধবার মার্কিন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এফটি।

এদিন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল সংবাদ সম্মেলনে জানান, সেপ্টেম্বরে ফেডের পরবর্তী বৈঠকের পরপর সুদহার কমে আসতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে চলতি সপ্তাহে বৈঠক করেছে ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (এফওএমসি)।

সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে ফেডের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশে নামিয়ে আনা। গত মাসগুলোয় এ পদক্ষেপে কিছু সাফল্য পাওয়া গেলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। এফওএমসির বৈঠক লক্ষ্যমাত্রায় মূল্যস্ফীতির নেমে আসাকে চিহ্নিত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেরোমি পাওয়েল বলেন, ‘চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান আমাদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। আশা করি সামনে আরো ভালো ডাটা সে আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে।’

সুদহার কাটছাঁটের বিষয়টি তখনই স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যখন দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রচারণা তুঙ্গে। আগে থেকেই পূর্বাভাস ছিল এ সময় মার্কিনদের জন্য অতি প্রতীক্ষিত ঘোষণাটি আসতে পারে। জেরোমি পাওয়েলের মন্তব্য বলে দিচ্ছে, দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চালিয়ে যাওয়া লড়াই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে এসেছে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বব মিশেল বলেন, ‘তিনি যতটা সম্ভব এ ইঙ্গিত দিচ্ছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যে নাটকীয় কিছু না ঘটলে পরবর্তী বৈঠকে দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্টে সুদহার কমাতে শুরু করবে।’

সুদহার ও মূল্যস্ফীতির দ্বৈরথের মাঝে মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি করেছে বেকারত্বের ক্রমবর্ধমান হার। অর্থনীতিবিদরা এ নিয়ে একাধিকবার সতর্কও করে দিয়েছেন। এখন ফেড বলছে, তারা মূল্যস্ফীতিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখে না বরং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হারও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বেঞ্চমার্ক সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এর থেকে দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নভেম্বরের আগে সুদহার না কমাতে জেরোমি পাওয়েলকে সতর্ক করে দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষ্যে, জেরোমি পাওয়েল যদি সুদহার না কমিয়ে ‘সঠিক কাজটি’ করেন তবেই ফেড চেয়ার হিসেবে মেয়াদ শেষ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জেরোমি পাওয়েল বুধবারের বৈঠকে বলেন, ‘আমরা কখনই কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদ বা কোনো রাজনৈতিক ফলাফলকে সমর্থন বা বিরোধিতা করতে আমাদের কৌশল ব্যবহার করি না।’

বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে উল্লেখ করেন, এরই মধ্যে স্বল্পমেয়াদি বন্ডে সুদহার কমে গেছে। কারণ চলতি বছর সুদহার কমবে বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে ফিউচার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, চলতি বছরে দুই-তিনটি কাটছাঁট আসতে পারে সুদহারে, যার প্রথমটি আসবে সেপ্টেম্বরে। তারা আশা করেন তিনটি কাটছাঁট আসার সম্ভাবনা ৯৬ শতাংশ।

দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে সুদহার দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন। ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস অনুযায়ী ঠিক হয়। এটি দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বনিম্ন স্তর।

কভিড-১৯ মহামারী থেকে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে ওঠার পর মূল্যস্ফীতি এখন মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার দিকে ক্রমাগত কমছে। ফেডের মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে ব্যক্তিগত খরচের মূল্য সূচকের ওপর ভিত্তি করে, যা এখন ২ দশমিক ৬ শতাংশে রয়েছে, এটি ২০২২ সালে ৫ শতাংশেরও বেশি নিয়ে শীর্ষে পৌঁছে। পাওয়েল জানান, সাম্প্রতিক তথ্যগুলো ‘বৃহত্তর মূল্যসংকোচন’ নির্দেশ করেছে। অর্থাৎ, পণ্যের দাম বাড়লেও আগের তুলনায় কম হারে বাড়ছে।

এদিকে মার্কিন শ্রমবাজার সম্প্রসারণ হলেও আগের তুলনায় এর গতি শ্লথ হতে শুরু করেছে, কয়েক মাস ধরে বেকারত্ব ৪ দশমিক ১ শতাংশে বেড়েছে। একই সঙ্গে মজুরির চাপও কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য হলো শ্রমবাজারকে চাঙ্গা করতে নতুন পদক্ষেপ কার্যকর করা।

মরগান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদ স্যাম কফিন জানান, তার প্রত্যাশা ছিল ফেড চলতি বছরের বাকি থাকা প্রতিটি মিটিংয়ে সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্টে কমিয়ে আনবে। নইলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসের চেয়ে কমে ২ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। তার পূর্বাভাস অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫ সালে সুদহারে আরো চারটি কাটছাঁট আনবে, যা পলিসি রেটকে আরো এক শতাংশীয় পয়েন্টে কমিয়ে আনবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫