কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী
শোলাকিয়ায় কঠোর নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল
ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাত। এতে জেলা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখো মুসল্লি অংশ নেয়। আজ সোমবার
(১৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হয় জামাত। এতে ইমামতি করেন জেলা শহরের মার্কাস মসজিদের ইমাম
মাওলানা হিফজুর রহমান খান।
নামাজ শেষে মোনাজাতে
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ, ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠীর আত্মমর্যাদা ও তাদের ওপর নির্মম
নির্যাতন-গণহত্যা থেকে রক্ষায় দোয়া করা হয়। একই সঙ্গে বিশ্বশান্তি, মুসলিম সম্প্রদায়ের
ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব ও দেশের সুখ-সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা কামনা করা হয়। তা ছাড়া মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে
যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, সেই সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনাসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য দোয়া করা হয়।
জামাত শুরু হয়
সকাল ৯টায়। কিন্তু ঈদুল আজহার ত্যাগের আদর্শ ও স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের আশায় ভোর থেকে
জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকে শোলাকিয়ায়। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ
ইজি বাইকে, কেউ সাইকেলে, কেউ বা হেঁটে। চারদিক থেকে আসা মানুষের ঢল যেন মিশে যায় শোলাকিয়া
মাঠে।
জামাত শুরুর আগেই
হাজার হাজার মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ঈদগাহ মাঠ। এ সময় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে
যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
জামাতে কিশোরগঞ্জের
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের
কর্মকর্তা, রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়।
শোলাকিয়া ঈদগাহ
পরিচালনা কমিটি জানায়, এ ঈদে কোরবানির ব্যস্ততা থাকায় সাধারণত ঈদুল ফিতরের মতো লোকসমাগম
হয় না। এর পরও ঐতিহ্য ও সুনামের টানে বিভিন্ন এলাকার লাখো মুসল্লি জামাতে অংশ নিয়েছে।
নিরাপত্তা ঝুঁকি
না থাকলেও ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের সময় জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও
বাড়তি নিরপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় মাঠে। ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ
মাঠের কাছে পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে পুলিশের দুই সদস্য, স্থানীয়
এক নারী ও এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন।
ঈদের জামাতকে
ঘিরে নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। তিন
স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। প্রত্যেক মুসল্লির
দেহ তল্লাশি করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।