‘তামিম-মুশফিক থাকলে এ অবস্থা হতো না’

প্রকাশ: মে ২৬, ২০২৪

রকিবুল ইসলাম

টেক্সাসে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টানা দুই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। গতকাল রাতে দুই দল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়। তবে প্রথম দুই ম্যাচে লজ্জাজনক হারের পর নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে নিয়ে এখন সমালোচনার ঝড়। ১৯ নম্বর র‍্যাংকধারী দলের কাছে ৯ নম্বর র‍্যাংকধারী বাংলাদেশের এভাবে হেরে যাওয়াটা মানতে পারছেন না কেউ। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমর্থকরা ক্রিকেট দলকে তুলোধোনা করেছেন। সাবেক ক্রিকেটার, ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও দলের এ ব্যর্থতাকে মানতে পারছেন না। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শফিকুল হক হীরাও ক্রিকেট দলের এ হারে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। তিনি মনে করেন, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম দলে থাকলে আজ লজ্জাজনক এ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না।

বাংলাদেশ দলের এমন হারের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক সফল ম্যানেজার হীরা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কী আর বলব। এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। দেখুন, সচরাচর মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ—এ তিনজন ছাড়া আমাদের টিম হয় না। মুশফিক যখন ব্যাটিং করে তখন ও উইকেট দিতে চায় না, ওর উইকেটটা নিতে হয়। এ রকম ব্যাটসম্যান আমাদের দরকার। তারা তিনজন থাকলে এমন পরিস্থিতি হতো না।’

সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পরাজয়টা বিশ্বকাপের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা? এ নিয়ে হীরার উত্তর, ‘অবশ্যই পড়বে। কেননা বিশ্বকাপে প্রথমেই তো আমাদের সামনে দুটি স্ট্রং টিম (দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকা)। ক্লাসেনরা (হাইনরিখ) আইপিএলে কী খেলছে দেখো। এরা তো ফুল ফর্মে থাকবে তখন। তো, ওই দুটি ম্যাচ হেরে গেলে তো আর আমরা কোয়ালিফাই করতে পারব না। আমাদের ছেলেরা যেভাবে খেলছে এভাবে খেললে কিছুই করতে পারবে না। সাকিবও তো কিছুই করতে পারছে না। উইকেট পায় না। দুই ম্যাচে উইকেট পায়নি, রানও দিচ্ছে অনেক। এ ম্যাচে ৩০ রান করেছেন। ও যদি ৩০ করে, তবে তো হয় না। এ রান দিয়ে দলকে জেতানো যাবে না। জিততে হলে একজনকে ৭০-৮০ করতে হবে।’

ব্যাটারদের নিবেদনের ঘাটতি নিয়ে হীরা বলেন, ‘শান্ত ৩৫ করে আউট হয়ে যাচ্ছে। ৩৫ তো কোনো স্কোর না ভাই। তুমি এটাকে ফিফটিতে নিয়ে যাও। তুমি ফিফটিতে নিয়ে গেলে আরেকজন যে ব্যাটিং করছে, সে-ও তখন চেষ্টা করবে। এখন কারো ওপরই ভরসা করা যাচ্ছে না। মাহমুদউল্লাহ সব সময় রান পেত, এখন সেও ফ্লপ। সব কিন্তু বোল্ড। আলী খানের কাছে এমন নাকানি-চুবানি কেন খাবে। তারা তো এমন পেস বলে ঘরে-বাইরে অনেক খেলেছে।’

ক্রিকেটারদের বাজে পারফরম্যান্সের পেছনে তিনি মানসিক কারণকে দেখছেন। তার কথায়, ‘বোর্ডের তরফ থেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। সেখানে বোর্ড সভাপতি থাকলেন, সঙ্গে বোর্ড পরিচালকদের মধ্যে খালেদ মাহমুদ সুজন, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, আকরাম খান থাকলেন। ক্রিকেটারদের কেন সমস্যা হচ্ছে, কোথায় সমস্যা হচ্ছে, সেটা তারা শুনলেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কিছু করার থাকলে তারা করবেন।’  

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডটা ঠিক হয় নাই বলে মত দেন হীরা। তিনি বলেন, ‘ওই যে গণ্ডগোলের জন্য স্কোয়াডটা ঠিকমতো হয়নি। তামিমের গণ্ডগোল, সাকিবের গণ্ডগোল, ইমরুলের মধ্যে যে গণ্ডগোল। ইমরুলও ভালো খেলোয়াড়। পুরনো খেলোয়াড় হিসেবে মাহমুদউল্লাহও যেমন ভালো খেলতেছে। ওদের নিয়ে বসে বোঝাপড়া করে তামিমদের নিয়ে একটা ফুল টিম করা উচিত। এটা তো ফুল টিম না।’

তামিম থাকলে এমন বিপর্যয় হতো না বলে অনেকে মত দিচ্ছেন। এ নিয়ে হীরা বলেছেন, ‘সেটা ঠিক। তবে তামিমেরও তো এ রকম কথাবার্তা বলা উচিত হয় নাই। সিরিজের মাঝপথে এসে সে সংবাদ সম্মেলন করে অবসর নিয়ে নেয়। প্রথম থেকেই চুপ থাকা উচিত ছিল। তাহলে বোর্ড কিছু করার সাহস পেত না।’

মুশফিক ও তামিমের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফেরার বিষয়টি অবশ্য এখন আসেই না। মুশফিক ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ও তামিম একই বছর জুলাইয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেন। এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ছয় মাস টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে ‘বিরতি’ নিয়েছিলেন তামিম। সেই সময় শেষ হওয়ার পর পুরোপুরি অবসরই নিয়ে ফেলেন। 

গত বছর ওয়ানডে থেকেও অবসর নেন তামিম। সেটা অবশ্য অভিমান করে। পরদিন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তিনি অবসর ভেঙে ফিরলেও জাতীয় দলে আর ফেরা হয়নি। কেননা বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তাকে নিতে চাননি তখনকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সেই থেকে জাতীয় দলের বাইরে তামিম। বিপিএলে ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জেতালেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে ফেরানোর কোনো আলোচনা হয়নি।

ক্রিকেট দলের বিপর্যয়ের পেছনে শিক্ষা ও যত্নের ঘাটতিকে দায়ী করছেন হীরা। তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা এখন টাকার পেছনে ছুটতেছে। বিপিএল খেললে, লিগ খেললে ১ কোটি টাকা পায়।’ বেশি টাকা-পয়সাই কি দায়ী? তিনি বললেন, ‘সঠিক সঠিক। নাসিরের মতো খেলোয়াড়ের ১৫ কোটি টাকা। আমরা তো ১৫ লাখ টাকাও দেখি নাই।’

বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ধারাবাহিকভাবে খেলে যেতে পারে না বলে মনে করেন হীরা। তিনি বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ খেলার পর আরেকটা সিরিজে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে খেলোয়াড়রা। অথচ আইপিএলে দুই মাস টানা খেলার পর বিশ্বকাপেও ভালো করবে অনেকে। আমাদের খেলোয়াড়রা এটা রপ্ত করতে পারেনি।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক পেস বোলার হাসিবুল হোসেন শান্তর কাছে দলের হার ও বিশ্বকাপে এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘হার তো সব সময়ই খারাপ দলের জন্য। কনফিডেন্স লেভেলটা পড়ে যায়। বিশ্বকাপে এর প্রভাব পড়বেই। তবে এখান থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। নির্ভর করছে, খেলোয়াড়রা কীভাবে নিজেদের তৈরি করবে তার ওপর।’

যুক্তরাষ্ট্রকে কী হালকাভাবে নেয়ার ফল এটি? শান্ত হেসে বললেন, ‘আমি তো আর দলের সঙ্গে নাই। তবে আমি যতদিন খেলেছি কখনো তো হারার জন্য খেলিনি বা কোনো কিছু হালকাভাবে নেইনি। তারা কী চিন্তা করে খেলেছে, সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে। এখন যেটা দরকার, জিদ। দলের জন্য, দেশের জন্য জেতার জিদটা এখন বেশি দরকার।’

সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক শামীম চৌধুরী হারের বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘সাকিব দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে একটা মন্তব্য করেছেন যে তাদের প্রপার প্রস্তুতি হয়নি, প্রস্তুতির স্বল্পতা আছে। আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। আমরা প্রপার প্রস্তুতি নিতে পারিনি হয়তো বড় টিমের সঙ্গে খেলে সেখানে যেতে পারিনি বলে। আমরা যাদের সঙ্গে খেলছি, তারা উগান্ডার সঙ্গে হেরে এসেছে (জিম্বাবুয়ে সিরিজ)। সেখানেও কিন্তু আমরা কিছু ম্যাচ টাইট করে দিয়েছি ও শেষ ম্যাচটা হেরে গেছি। হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছি। আর বাংলাদেশ দল এখন বোলিং-বেইজড দল হয়ে গেছে, অথচ টি-টোয়েন্টি কিন্তু ব্যাটিং-বেইজড খেলা। ব্যাটারদের হাতেই থাকে খেলা। আমরা কিন্তু ওই অভ্যাসটা করতে পারি নাই যে অনবরত ২০০, ১৮০ রান তুলব। টপ অর্ডাররা রান পাচ্ছেন না, আর পাইলেও তাদের স্ট্রাইক রেট খুব খারাপ। আমরা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে ও শেষ পাওয়ার প্লেটা কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের ব্যাটিংয়ের ওপর জোর দিতে হবে।’


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫