নিউইয়র্ক-লন্ডনের তুলনায় এশিয়ায় বাড়ছে বিলাসবহুল আবাসনের মূল্য

প্রকাশ: মে ২৬, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সরবরাহের নিরিখে সম্প্রসারিত হচ্ছে বৈশ্বিক রিয়েল এস্টেট খাত। এ খাতের লেনদেনের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে প্রাইম প্রপার্টি নামে পরিচিত বিলাসবহুল আবাসনগুলো, যেখানে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মূল্য। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, খরুচে বাড়ির চাহিদার দিক থেকে আমেরিকা ও ইউরোপকে টেক্কা দিচ্ছে এশিয়ার কিছু শহর। এতে অবশ্য বাদ পড়েছে আবাসন নিয়ে সংকটে থাকা চীনের শহরগুলো। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

রিয়েল এস্টেট খাতের পরামর্শক নাইট ফ্রাঙ্ক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এশিয়ার বেশকিছু শহরে বিলাসবহুল বাড়ির দাম ক্রমে বাড়ছে। অন্যদিকে একই সময়ে নিউইয়র্ক ও লন্ডনের মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোয় নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষণীয়।

সাধারণত আবাসন বাজারের শীর্ষ ৫ শতাংশ প্রাইম প্রপার্টি হিসেবে সংজ্ঞায়িত। এর আওতায় থাকে অতিধনীদের জন্য নির্মিত বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্পগুলো। নাইট ফ্রাঙ্কের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় নিউইয়র্ক ও লন্ডনে প্রাইম প্রপার্টির মূল্য ২ শতাংশের বেশি কমে গেছে। এশিয়া ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দুই শহর হংকং ও বার্লিনে একই ধরনের পতন লক্ষ করা গেছে। এর বিপরীতে এশিয়ার জনবহুল কিছু বাণিজ্যিক শহরে বিলাসবহুল সম্পত্তির দাম ডাবল ডিজিটে বেড়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান দুই ধরনের অর্থনীতিই রয়েছে। প্রাইম প্রপার্টির মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ম্যানিলা, টোকিও ও মুম্বাই। শহরগুলোয় মার্চে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বিলাসবহুল বাড়ির মূল্য বেড়েছে যথাক্রমে ২৭, ১৩ ও ১২ শতাংশ।

মূলত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এ ধরনের সম্পত্তির চাহিদাকে প্রভাবিত করছে। প্রতিবেদন অনুসারে, উচ্চ সুদহার ও মন্দার ভয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সম্পত্তির বাজারকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে বৈশ্বিক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের চাহিদার কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রধান রিয়েল এস্টেট বাজারগুলোয় গড় মূল্য বেড়েছে। নাইট ফ্রাঙ্কের বিশ্লেষণে থেকে দেখা যায়, বিশ্বের বড় ৪৪টি শহরে আবাসন খাতে বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ।

এশিয়ায় বিলাসবহুল আবাসনের ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী স্থানে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝে দেশটির অর্থনীতি সবচেয়ে শক্তিশালী হারে প্রসারিত হচ্ছে, এর প্রভাব পড়েছে ম্যানিলায় আবাসন খাতে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দুর্বল বিনিময় হার ও ঋণ বাবদ খরচ কম হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে জাপানের রাজধানী টোকিও এখন বেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য।

নাইট ফ্রাঙ্কের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ভারতের বিকাশমান অর্থনীতির সঙ্গে মুম্বাইয়ে বিলাসবহুল আবাসনের চাহিদা বৃদ্ধি বেশ সংগতিপূর্ণ। পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বৈশ্বিক জিডিপি হিস্যায় ২০২৮ সালে শীর্ষ অবদানকারী হয়ে উঠবে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে ভারত।

অবশ্য কভিড-১৯-পরবর্তী প্রাইম প্রপার্টি বাজারে একই ছকে এগোয়নি। ২০২২ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই বছরে বিলাসবহুল আবাসনে প্রবৃদ্ধি ছিল শূন্য। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, উচ্চ সুদহার চাহিদাকে প্রশমিত করেছিল। কিন্তু এখন বাজার নতুন গতি পেয়েছে, প্রায় ৭৮ শতাংশ বাজারে বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে। সম্পত্তি বাজারে সাম্প্রতিক এ পরিস্থিতি নাইট ফ্রাঙ্কের প্রাইম প্রপার্টি সূচককে আরো ইতিবাচক দিকে উন্নীত করেছে। সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।

এ বিষয়ে নাইট ফ্রাঙ্কের গবেষণা দলের বৈশ্বিক প্রধান লিয়াম বেইলি জানান, দামের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সাময়িক নয়, বরং তুলনামূলক স্থিতিশীল চাহিদার কারণে প্রাইম প্রপার্টির বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে কম সরবরাহের বিপরীতে বিলাসবহুল আবাসনের চাহিদা ক্রমে বেড়ে চলেছে। সামগ্রিকভাবে এ প্রভাব পড়েছে মূল্যবৃদ্ধিতে।  

এদিকে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এশিয়ার আরেক আবাসন বাজার দুবাইয়ের চিত্র তুলে ধরেছে নাইট ফ্রাঙ্ক। সেখান বলা হয়, প্রাইম প্রপার্টির বিক্রির ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে লন্ডন ও নিউইয়র্কের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে দুবাই। দুবাইয়ে ১ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের বাড়ি বেড়েছে ২৬ শতাংশ।  চলতি বছর এ বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে। 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫