সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় ঝুঁকির মুখে জ্বালানি তেলের আমদানি-রফতানি

প্রকাশ: মে ২৫, ২০২৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের বাড়তি উচ্চতা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি-রফতানিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। হুমকির মুখে পড়বে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছে থিংক ট্যাংক চায়না ওয়াটার রিস্ক (সিডব্লিউআর)। খবর রয়টার্স।

প্রতিবেদনে সিডব্লিউআরের গবেষকরা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে বিশ্বের প্রধান সমুদ্রবন্দরগুলো তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বন্দর ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া সমুদ্র-তীরবর্তী পরিশোধনাগার ও পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনাগুলোও এর প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা শুধু এক মিটার বাড়লে বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি ট্যাংকার টার্মিনালের মধ্যে এশিয়াভিত্তিক পাঁচটিসহ মোট ১২টি ট্যাংকার টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সিডব্লিউআর। এর মধ্যে নিচু বন্দর ও বাঙ্কারিং স্থাপনাগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

চীনভিত্তিক সংস্থাটি আরো জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের বাড়তি উচ্চতার কারণে সৌদি আরব, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির প্রায় ৪২ শতাংশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এর প্রভাব পড়বে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও নেদারল্যান্ডসের ৪৫ শতাংশ তেল আমদানির ওপর। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে এশিয়ার দেশগুলো। বিশেষ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো জ্বালানি তেল আমদানিনির্ভর দেশগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যবহার হয় এমন বন্দরগুলোর তিন-চতুর্থাংশই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক ও সিডব্লিউআরের পরিচালক দেবরা তান বলেন, ‘‌ঝুঁকি এড়াতে বন্দরগুলোর প্রতিরোধ অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানো নিয়েও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত ব্যবহারই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।’

প্রতিবেদনে সিডব্লিউআর জানায়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখা না গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন মিটার বা এর চেয়ে বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে জ্বালানি তেল আমদানি-রফতানিতে ব্যবহার করা হয় এমন আরো বেশি বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এর আগে ২০২১ সালে এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সংস্থা ‘‌ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে এক পূর্বাভাস দিয়েছিল। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক-দুই মিটার পর্যন্ত বেড়ে যাবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫