আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় পাম অয়েলের। বিপুল সরবরাহ ও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য তেলের তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে এর কদর বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি দাম কমে যাওয়ায় পাম অয়েলের চাহিদা কমছে। পাম অয়েল ক্রেতারা দামের সুবিধা নিতে প্রতিদ্বন্দ্বী এসব তেলের বাজারে ঝুঁকছেন। এতে পণ্যটির মূল্য পুনরুদ্ধার ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
গত বছর মালয়েশিয়ান বাজার আদর্শ পাম অয়েলের গড় দাম প্রায় ১১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে চলতি বছরের শুরুতে এর বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। তবে বছরের বাকি সময় ফের নিম্নমুখী চাপে পড়তে যাচ্ছে পণ্যটির বাজার।
পাম অয়েলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্য সয়াবিন তেল। সাধারণত বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের চেয়ে কম দামেই পাম অয়েল বিক্রি হয়। কিন্তু বাজারে বর্তমানে এ প্রবণতার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় রেকর্ড পরিমাণ সয়াবিন তেল উৎপাদন হয়েছে। ফলে এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পাম অয়েলের চেয়েও কম দামে মিলছে সয়াবিন তেল। ফলে ব্যবসায়ীরা এর ক্রয় বাড়াচ্ছেন।
দুবাইভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যানটেক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভিপিন গুপ্তা বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের উৎপাদন বাড়ছে। বিপরীতে কমছে পাম অয়েল উৎপাদন। ফলে পণ্যগুলোর মূল্য প্রবণতায় ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। তুলনামূলক বেশি দামের কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্যটি ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। ফলে আগামী মাসগুলোয় এর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাম অয়েল খাতসংশ্লিষ্টরা লোকসানের মুখে পড়বেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডিলাররা জানান, ভারতে আগামী মার্চে সরবরাহের জন্য চুক্তিকৃত প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েলের আমদানি মূল্য (ব্যয়, বীমা ও জাহাজ ভাড়াসহ) দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৯৩০ ডলারে। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের আমদানি মূল্য ৯১৫ এবং সূর্যমুখী তেলের দাম ৯১০ ডলার।
অথচ গত বছরের নভেম্বরেও প্রতি টন পাম অয়েলের দাম সয়াবিন তেলের চেয়ে ২০০ ডলার কম ছিল। মূলত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো শীর্ষ দেশগুলোয় এল নিনোর প্রভাবে উৎপাদন কমে যাওয়ায় পাম অয়েলের দাম লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারক। দেশটির ক্রেতারা পাম অয়েল আমদানি কমাচ্ছেন। আগামী মাসগুলোয় দেশটি সয়াবিন তেল আমদানি বাড়াবে বলে জানিয়েছেন ভারতের শীর্ষ পাম অয়েল ক্রেতা কোম্পানি পতঞ্জলী ফুডস লিমিটেডের সিইও সঞ্জিব আস্থানা।
তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে ভারত ৭ লাখ ৮৭ হাজার টন পাম অয়েল আমদানি করে, যা তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিপরীতে সয়াবিন তেল আমদানি ২৪ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৯০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।
ভোজ্যতেলের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান সানবিন গ্রুপের সিইও সন্দিপ বাজোরিয়া জানান, আগামী মার্চে ভারতের পাম অয়েল আমদানি ৩ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এপ্রিলে এটি বেড়ে পৌঁছতে পারে ৪ লাখ টনে।
ভোজ্যতেলের বাণিজ্যিক ও ব্রোকার প্রতিষ্ঠান জিজিএনের ম্যানেজিং পার্টনার রাজেশ প্যাটেল বলেন, ‘বর্তমানে পাম অয়েল পরিশোধনাগারগুলোয় মুনাফা মার্জিন কম। বিপরীতে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল পরিশোধনে বেশি লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পাম অয়েলের বিপরীতে এসব তেলের চাহিদা বেশি।
ভারত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে পাম অয়েল আমদানি করে। অন্যদিকে সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল আসে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।
অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়ার কারণে ইউরোপের ক্রেতাদের কাছে পাম অয়েল আরো বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। অঞ্চলটিতে সয়াবিন, সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের চেয়ে টনপ্রতি ১০০ ডলার বেশি দামে পাম অয়েল কিনতে হচ্ছে।