ব্রাজিলের
‘ফুটবল মন্দির’ মারাকানায় ২০২১ সালে স্বাগতিকদের ফাইনালে হারিয়ে ১৫তম কোপা আমেরিকা
শিরোপা জিতে নেয় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। সেই যে মোমেন্টাম পেল আলবিসেলেস্তেরা, যাতে
ভর করে পরের বছর কাতার থেকে বিশ্বকাপও মুকুট জিতে নিল দলটি। সেই মারাকানায় প্রায়
আড়াই বছর পর ফিরছেন মেসি ও তার সতীর্থরা। এবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে
সেলেসাওদের মুখোমুখি হবেন আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বুধবার
ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে।
৫
ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন অঞ্চলের বাছাইপর্বে শীর্ষে আর্জেন্টিনা। সমান ম্যাচে ১০
পয়েন্ট নিয়ে তাদের পরেই উরুগুয়ে, যারা টানা দুই ম্যাচে হারিয়েছে ব্রাজিল ও
আর্জেন্টিনাকে। আজ ঘরের মাঠে বলিভিয়ার বিপক্ষেও সেই মোমেন্টাম ধরে রাখতে চাইবেন
ডারউইন নুনেজরা। এছাড়া আজ একুয়েডর ঘরের মাঠে চিলির বিপক্ষে ও পেরুর মাঠে খেলবে
ভেনেজুয়েলা।
ব্রাজিল
৫ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচে অবস্থান করছে। সর্বশেষ তিন ম্যাচ থেকে মাত্র
এক পয়েন্ট পাওয়া ব্রাজিল ভীষণ চাপে থেকেই বুধবার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হচ্ছে। এই
ম্যাচে তারা আবার পাবে না ক্যাসেমিরো, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও নেইমারকে। চোটে আহত
ব্রাজিলকে কি আরেকবার মারাকানায় হারের যন্ত্রণা দিতে পারবে মেসির দল? নাকি
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলকে হারিয়ে টেবিলে অবস্থান সংহত করতে পারবে ব্রাজিল?
বিশ্বকাপ-২০২৬
বাছাইপর্বে আরো অনেক ম্যাচ মাঠে গড়ালেও ফিফা র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল আর্জেন্টিনা
ও তিন নম্বর দল ব্রাজিলের এই ম্যাচই থাকছে আলোতে।
এখন
পর্যন্ত ১১০টি অফিসিয়াল ম্যাচে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে
ব্রাজিল ৪৩টি ও আর্জেন্টিনা ৪১টি জিতেছে, ড্র হয় ২৬টি ম্যাচ। এই দ্বৈরথে সেলেসাওরা
পাঁচটি বেশি গোল দিতে সমর্থ হয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা হয়েছে মোট চারবার, যার
মধ্যে ব্রাজিল দুটিতে ও আর্জেন্টিনা একটিতে জিতেছে। সর্বশেষ দশবারের মোকাবেলায় দুই
দল সমান চারটি করে জয় পেয়েছে, ড্র হয় দুটি ম্যাচ।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
দ্বৈরথে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (১৬টি) খেলেছেন আর্জেন্টিনার হাভিয়ের জানেত্তি। এরপর
আর্জেন্টিনার দিয়েগো সিমিওনে (১৩), ব্রাজিলের কাফু (১৩), আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি
(১৩), হাভিয়ের মাশচেরানো (১২), ব্রাজিলের রবার্তো কার্লোস (১১), নেইমার (১১),
ব্রাজিলের পেলে (১০) প্রমুখ।
১৯৭০
থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ব্রাজিল। ওই
সময় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছে সেলেসাওরা। এটিও
দ্বৈরথের অন্যতম একটি রেকর্ড।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
দ্বৈরথে সর্বোচ্চ গোল করার কৃতিত্ব দেখান প্রয়াত কিংবদন্তি পেলে। তিনি দশ ম্যাচে আট
গোল করেন। এই দ্বৈরথে মোট আটটি হ্যাটট্রিক হয়েছে। পেলে, রোনালদো, লিওনেল মেসি
ছাড়াও হ্যাটট্রিক করেছেন রিভালদো, হোসে সানফিলিপো, নরবার্তো মেন্দেস, কার্লোস
পিউসেল্লে ও ম্যানুয়েল সিওয়ান।
ফিফা
সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারে আর্জেন্টিনার চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে ব্রাজিল
(৮-৭)। ১৯৯১ সালে ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ নাম পাওয়ার পর এই পুরস্কার
পেয়েছেন ব্রাজিলের রোমারিও, রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহো ও কাকা) এবং আর্জেন্টিনার
একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে মেসি।
ব্রাজিলের
বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় জয় ৬-১ গোলের। ১৯৪০ সালে কার্লোস পিউসেল্লের
হ্যাটট্রিকে এত বড় জয় পায় আলবিসেলেস্তেরা। এর পাঁচ বছর পর আর্জেন্টিনাকে ৬-২ গোলে
হারানোর কৃতিত্ব দেখায় ব্রাজিল।
বিশ্বকাপ
শিরোপা জয়ে আর্জেন্টিনার চেয়ে এগিয়ে ব্রাজিল। সেলেসাওরা পাঁচবার (১৯৫৮, ১৯৬২,
১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২) ও আলবিসেলেস্তেরা তিনবার (১৯৭৮, ১৯৮৬ ও ২০২২) পেয়েছে বিশ্ব
শিরোপা। সর্বশেষ ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত আসরে ফ্রান্সকে ফাইনালে হারিয়ে তৃতীয়
মুকুট পায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। যদিও কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের চেয়ে অনেক
এগিয়ে আর্জেন্টিনা। তাদের ১৫ শিরোপার তুলনায় ব্রাজিল জিতেছে নয়টি।