আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চট্টগ্রাম হবে বিনিয়োগ হাব

প্রকাশ: অক্টোবর ২৮, ২০২৩

দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম সড়ক ও সুড়ঙ্গপথ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। কর্ণফুলী নদীর দুদিকের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে যুক্ত করতে এ পথ নির্মাণকে অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছেন, এখন কৌশলগত সব বিষয় নিশ্চিত করা গেলে চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস হাবে দাঁড় করাতে এ টানেল হতে পারে উপযুক্ত অবকাঠামো। যোগাযোগ করিডোর তখন রূপান্তর হবে অর্থনৈতিক করিডোরে। টানেলকে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই করতে আঞ্চলিক যোগাযোগ সহজ ও সম্প্রসারণসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু মতামত তুলে ধরেছেন দেশের প্রথম সারির শিল্পোদ্যোক্তারা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বণিক বার্তার চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান রাশেদ এইচ চৌধুরী 

মো. মাহবুবুল আলম

প্রেসিডেন্ট 

এফবিসিসিআই

ব্যবসা সহজ ও সম্প্রসারণে কানেক্টিভিটি হলো মূল কথা। যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে অনুধাবন করেছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রাম এমনিতে অবহেলিত জনপদ। এখন সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ কনসেপ্ট ধরে টানেল নির্মাণের ফলে ওই অঞ্চলে আরেকটি সিটি গড়ে উঠবে। হবে শিল্পায়ন। তবে এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান খুবই জরুরি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাটবাজার কিংবা অন্য যেসব প্রতিবন্ধকতা, সেগুলো একদিকে যেমন দুর্ঘটনার কারণ অন্যদিকে পণ্য পরিবহন খরচকে বাড়িয়ে তুলছে। তাই চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কোনো বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসের মধ্যে সংযোগ হিসেবেও কাজ করবে। আবার টানেল নির্মাণ হলেও কক্সবাজার কিংবা মাতারবাড়ীর যে সংযোগের কথা বলা হয়েছে তাতে শুধু সড়কপথে আনোয়ারার উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো তেমন ভালো নয়। ফলে টানেলের সুফল শুরুর দিকে কতটা পাওয়া যাবে সেটিও বিবেচনায় আনতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এ বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া গেলে দেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু যেভাবে ভূমিকা রেখেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলও অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।

আমীর আলীহুসাইন

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

বিএসআরএম গ্রুপ 

বঙ্গবন্ধু টানেল নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্পের সঙ্গে যে কানেক্টিং সেটা প্যারালালি ডেভেলপ করাটা খুবই জরুরি। যেমন সেখানে কীভাবে ইকোনমিক জোন কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলোর সঙ্গে সড়কপথে কতটা দ্রুত যোগাযোগ গড়ে উঠছে। আর ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্টটা বাস্তবিক অর্থেই গড়ে তুলতে হবে। এখনো যেটা বুঝতে পারছি, শুরুর দিকে টানেলটি সাধারণ লোকই ব্যবহার করবে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের তেমন একটা সুযোগ নেই। তাই যতটা দ্রুত সম্ভব বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযুক্ততা গড়ে তুলতে হবে। যেমন পদ্মা সেতু। এর বাণিজ্যিকভাবে অনেক বেনিফিট রয়েছে, আবার জনসাধারণও প্রকল্পটি থেকে দারুণ উপকৃত হচ্ছে। তাই বলব কক্সবাজার সড়ক প্রয়োজনমতো প্রশস্ত করা, মাতারবাড়ীর সঙ্গে কানেক্টিভিটি তৈরিসহ এসব পদক্ষেপেই মূলত আসল বেনিফিট আসবে। আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম একটা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুব বেশি দরকার। এটার যে বেনিফিট আসবে অন্য আরেকটা প্রকল্পে সেটা দেখানো দুরূহ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়ক ও রেলকে অনেক বেশি ফোকাস করতে হবে। আরেকটা ব্যাপার হলো ওয়ান সিটি টু টাউন কসসেপ্ট বাস্তবায়নের জন্য আরো ব্রিজ বানিয়ে মূল শহরের সঙ্গে আনোয়ারা অংশকে পুরো কানেক্ট করে নিতে হবে। এতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে দক্ষিণ অংশে। 

মো. আমীরুল হক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেড

মাতারবাড়ী আমাদের জন্য একটা ইকোনমিক হাব হবে। কক্সবাজার থেকে যে রাস্তাটা আসবে সেটা মাতারবাড়ীর সঙ্গে সংযোগ করতে হবে। তাহলে টানেল হয়ে এটা মিরসরাই ইকোনমিক জোনে যেতে পারবে। সেই সঙ্গে ঢাকা পর্যন্ত যদি আলাদা একটা ১০ লেনের সড়কের উদ্যোগ নেয়া হয়, এক্সপ্রেসওয়ে যদি হয় এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা সম্ভব। এভাবেই আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। টুইন সিটির যে কনসেপ্টটা বলা হচ্ছে সেটা কার্যকর করার জন্য এখনো কিন্তু কোনো প্ল্যান দেখতে পাচ্ছি না। ৩০ অথবা ৫০ বছরের জন্য নদীর ওপারটাকে একটা মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনা বেশি জরুরি। কোথায় আবাসিক, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে, আবার কোথায় শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হবে এ সবই একটা নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী করতে হবে। এক্ষেত্রে পর্যটনকেও আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। নদীর ওপারে একটা ট্যুরিজম স্পট করা দরকার। যেনতেনভাবে যেন এত বড় একটা অপরচুনিটি ধ্বংস করা না হয়। কারণ একবার অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা গড়ে উঠলে ওই অংশ আর ডেভেলপ করা যাবে না। এছাড়া টুইন সিটি কনসেপ্ট বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য নদীর দুইপারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরো বেশি সংযোগ তৈরি করতে হবে।