বলিউডসহ সারা ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে চলছে অ্যাটলি কুমারের গুণগান। জওয়ান মুক্তির আগে থেকেই তা শুরু হয়েছে, তবে মুক্তির পর বেড়েছে আরো। কিন্তু অ্যাটলির এ গুণগান নতুন নয়। দক্ষিণের সিনেমা যারা দেখে অভ্যস্ত, অ্যাটলিকে তারা আগে থেকেই চেনেন। তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের এ সন্তান নিজেকে বেশ কয়েক বছর আগেই দক্ষিণের, বিশেষত তামিল ও তেলেগু সিনেমায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাত্র পাঁচটি সিনেমা পরিচালনা করেই তিনি হয়ে উঠেছেন এ সময়ের অন্যতম সেরা নির্মাতা। অ্যাটলির সিনেমা এখন তার নিজস্ব গুণ ও ধারার কারণে পরিচিত। বড় পরিসরে এখন তাকে জওয়ান দিয়ে দর্শক চিনলেও অ্যাটলি আসলে অর্ধযুগ আগেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অ্যাকশন-ড্রামার নির্মাতা হিসেবে।
অ্যাটলি কুমারের বয়স এখন ৩৬ বছর। কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাজ শুরু করেন মাত্র ১৯ বছর বয়সে। সিনেমায় বহু নির্মাতারই কাজ শুরু হয় স্বনামধন্য আরেকজন নির্মাতার সহকারী হিসেবে। অ্যাটলিও সেভাবেই কাজ শুরু করেছিলেন। তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল দক্ষিণী নির্মাতা শংকরের সহকারী হিসেবে। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া রজনীকান্ত অভিনীত ‘এন্থিরান’ (হিন্দিতে ‘রোবট’) সিনেমায় তিনি শংকরের সহকারী পরিচালক ছিলেন। এরপর কাজ করেছেন একই পরিচালকের ‘নানবান’ (২০১২) সিনেমায়। এটি ছিল রাজকুমার হিরানীর ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার রিমেক। শংকরের সঙ্গে কাজ করার সময়ই অ্যাটলি নিজে সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবতে শুরু করেন। ফিচার ফিল্মে প্রথমেই আসেননি তিনি। ২০১১ সালে একটি শর্টফিল্ম নির্মাণ করেন। ‘মুগাপুথাগাম’ নামের এ শর্টফিল্ম দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাওয়ার পর তিনি ফিচার ফিল্ম নির্মাণের কথা ভাবেন।
ক্যারিয়ারের
শুরুতে শংকরের নির্দেশনা পাওয়ার পর তিনি প্রযোজক
হিসেবে পেয়েছিলেন এআর মুরুগাদোসকে। গজনী নির্মাতা মুরুগাদোস ২০১৩ সালে অ্যাটলির প্রথম ফিচার ফিল্ম প্রযোজনা করেন। ‘রাজা রানী’ দিয়ে
নির্মাতা হিসেবে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিষেক হয় অ্যাটলির। এ
সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আর্য, জয়, নয়নতারা, নাজারিয়া নাজিম ও সত্যরাজ। সিনেমাটি
একটি রোমান্টিক কমেডি। এ দিয়েই হয়েছিল
অ্যাটলির যাত্রা। সিনেমাটির জন্য বিজয় অ্যাওয়ার্ডসের অভিষেকে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া সিনেমাটি সেই ২০১৩ সালে বক্স অফিসে আয় করেছিল ৫০
কোটি রুপি। ওই সময়ই দক্ষিণ
ভারত বুঝেছিল নতুন একজন নির্মাতা তারা পেতে যাচ্ছে এবং ২০২৩ সালে এসে নিজেকে প্রমাণ করেছেন অ্যাটলি।
সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়া জওয়ান অ্যাটলি-শাহরুখ ও বলিউডকে এনে দিয়েছে সেরা ওপেনিং। এর সঙ্গে ধারণা করা হচ্ছে, বক্স অফিসের বহু রেকর্ড ভেঙে ফেলবে সিনেমাটি। কিন্তু বক্স অফিসে রেকর্ড করা অ্যাটলির অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘থেরি’। অ্যাকশন ও ফ্যামিলি ড্রামার মিশেলে থেরি হয়ে উঠেছিল একটি পারফেক্ট দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা। এর মধ্য দিয়ে অ্যাটলি তার নির্মাণে স্বাতন্ত্র্যের যাত্রা করেন। কেননা থেরি এমন কিছু বিষয় এনেছিল, যা অ্যাটলির পরবর্তী সিনেমাগুলো দেখা যায়। থেরি দেখিয়েছিল সমাজের ক্ষমতাসীনদের অহংকার ও দুর্নীতি। পাশাপাশি তিনি সিনেমায় এনেছিলেন পরিবার ও সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, রোমান্স ও অ্যাকশন। এরপর প্রতিটি বিষয়ই তার সিনেমায় ঘুরেফিরে এসেছে। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া থেরি ওই বছর বক্স অফিসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (১৫০ কোটি রুপি) আয় করা সিনেমা।
থেরির সাফল্যের পরের বছরই তিনি মুক্তি দেন ‘মার্শাল’। সিনেমায় বিজয়ের ছিল ট্রিপল রোল। মার্শাল বক্স অফিসে আয় করেছিল ২৬০ কোটি রুপি।
মার্শালের চেয়েও বেশি আয় করেছিল বিগিল। এ সিনেমায়ও ছিলেন বিজয়। খেলা ও সম্পর্কের গল্প বলেছিল বিগিল। সিনেমাটিকে অনেকেই ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ বা ‘ইকবাল’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। বিগিলেও বিজয় অভিনয় করেছিলেন দ্বৈত চরিত্রে। সিনেমাটি বক্স অফিসে আয় করেছিল প্রায় ৩০০ কোটি রুপি।
জওয়ান শাহরুখ খানের জন্য লাভজনক হলো নাকি অ্যাটলির জন্য, তাতে তর্কের কিছু নেই। কেননা এর মধ্য দিয়ে বক্স অফিসে নতুন করে ইতিহাস তৈরি করেছেন দুজন মিলে। তবে এর আগেই অ্যাটলি এমন একজন নির্মাতায় পরিণত হয়েছেন যার সিনেমা মানেই ব্লকবাস্টার।