সীমিত জনবল ও লজিস্টিকস নিয়ে ভোক্তা অধিকার কাজ করছে

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩

এএইচএম সফিকুজ্জামান জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (১৩তম বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে তার কাজের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের বর্তমান কার্যক্রম, ভোক্তাদের সচেতনতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার কারসাজি রোধ, ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানসহ নানা প্রসঙ্গে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন

ভোক্তা অধিদপ্তরের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই। 

মূলত ২০০৯ সালের আইনবলে আমাদের অধিদপ্তর কাজ করে থাকে। আমাদের অর্গানাইজেশনাল যে স্ট্রাকচার আছে—আমাদের হেড অফিস, আটটি বিভাগে বিভাগীয় অফিস আছে, ৬৪ জেলায় জেলা অফিস আছে। আমাদের কার্যক্রমের মূল ফোকাস হলো, একজন ভোক্তা তার অধিকার জানে না। তাকে জানানো অর্থাৎ ভোক্তাসচেতনতা বৃদ্ধি করা। দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করি সেটা আপনারা সবসময় দেখেন—বাজার মনিটরিং। বাজার মনিটরিংয়ের আবার দুটো পার্ট আছে। একটি হলো, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের বাজার মনিটরিং হয়। আরেকটি হলো, নকল-ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যদি খাবার বিক্রি হয়; এ দুই ক্ষেত্রে আমরা বেশি কাজ করি। বিভিন্ন মিডিয়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে বা নকল পণ্যের বিরুদ্ধে আমরা যে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করি সে খবরগুলোই বেশি প্রচার হয়। তৃতীয়ত, আরেকটা কাজ আমরা করে থাকি—আমাদের ভোক্তারা যদি প্রতারিত হয়ে যায়, তখন আমাদের এ আইনের কাভারেজে প্রতারণার ইস্যুভিত্তিক এখানে বিভিন্ন ধারায় তারা অভিযোগ দায়ের করতে পারে এবং সে অভিযোগগুলো আমরা নিষ্পত্তি করে থাকি। আমাদের এ আইন একটি ইউনিক আইন। অর্থাৎ যিনি অভিযোগ করেন, সেখানে যে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা, সেখানে যে অর্থদণ্ড করা হয়, সে অর্থদণ্ডে শতকরা ২৫ টাকা যিনি অভিযোগ করেন তিনি পেয়ে থাকেন। এ আইনের সৌন্দর্যই এটা। ভোক্তারা অনেক ক্ষেত্রে সামান্য ব্যাপারে অভিযোগ করতে চায় না, সেক্ষেত্রে অভিযোগ দায়েরকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য, অর্থাৎ অভিযোগ দায়েরের জন্য ভোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে মূলত আইনে এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমরা মূলত এ তিন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকি। 

আমাদের ভোক্তাদের সচেতনতা কতটুকু বেড়েছে? এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

খুবই সুন্দর একটি প্রশ্ন করেছেন। আসলে ভোক্তা বলতে আমাদের ১৭ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই ভোক্তা। মায়ের গর্ভের শিশু থেকে প্রতিটি মানুষই কিন্তু ভোক্তা। সেক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জটা, অর্থাৎ আমি ১৭ কোটি মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছব? সেক্ষেত্রে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথমে ধরুন, আমাদের ঐতিহ্যবাহী যে পদ্ধতি, লিফলেট বা এ ধরনের উপকরণ ব্যবহার করে প্রচারণা কার্যক্রম চালাতাম। সে প্রাচীন পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোকাস করছি। আমরা পাবলিক ও প্রাইভেট মিলে বিভিন্ন কার্যক্রম করছি। শুধু রাজধানীতেই নয়, বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করছি। এটি আমাদের একটি টুলস। অর্থাৎ সেমিনার বা সিম্পোজিয়ামে আইন বিষয়ে আমরা যে কথাগুলো বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনুষ্ঠানগুলো করছি, সেখানে আমরা একটি বড় গ্রুপকে সচেতন করছি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এখন যেটা করছি, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির সঙ্গে আমরা একটা এমওইউ করেছি, তার মাধ্যমে আমরা যা করছি, ইস্যুভিত্তিক ডিবেট আয়োজন করছি। ছায়া সংসদের আদলে দুই দল ডিবেট করছে। সেগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে। এর মাধ্যমেও ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। আরেকটি বড় কাজ যেটা প্রচার হচ্ছে ইদানীংকালে—আমরা একটি অফিশিয়ালি ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজ করেছি। সাত-আট মাস আগে এটা চালুর পর ঠিক এ মুহূর্তে আমাদের ফেসবুকে দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখের মতো ফলোয়ার আছে এবং ইউটিউবে ১ লাখ ৬৭ হাজার সাবস্ক্রাইবার আছে। এখানে আমরা কীভাবে প্রচার করছি জানতে চাইলে বলব, আমাদের যে অভিযানগুলো হয় নকল-ভেজাল থেকে শুরু করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কার্যক্রমের ভিডিও ধারণের জন্য একটি টেকনিক্যাল টিম আছে, তারা এসবের ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেগুলো প্রচার করছে। এর মাধ্যমে আমরা যে মেসেজটা দিতে চাই তা কিন্তু ভোক্তার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এখানে কিছু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে। আমাদের কিছু কনটেন্ট, যেগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হচ্ছে। আমাদের একটি কনটেন্ট প্রচুর ভিউ হচ্ছে। মানে আমি কিন্তু একটা ভিডিও দিয়ে কোটি মানুষের কাছে চলে যাচ্ছি। আমাদের অনেকগুলো ভিডিও আছে ১০, ১৫, ২০ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। এর মানে হলো, আমরা যে কাজগুলো করছি, মানুষ যখন এ কাজগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছে, তখন কিন্তু সে সচেতন হচ্ছে। সে সচেতনতার একটি প্রমাণ হলো, আমাদের যে অভিযোগের মাত্রা, সেটিও অনেক বেড়ে গেছে। আমরা এখন চেষ্টা করছি কীভাবে আরো সহজে ভোক্তারা অভিযোগ দায়ের করবে সেজন্য নতুন কিছু উদ্ভাবন বা সংযোজন করতে। আমরা একটা টুলস অ্যাপ্লাই করছি। ঢাকায় প্রায় ৭০টি আউটলেট আছে সুপারশপের। সেখানে টিভি স্ক্রিন আছে। সেখানে আমাদের কিছু অ্যানিমেটেড কনটেন্ট দিচ্ছে—অমুক আইনে ভোক্তার এ প্রতিকার আছে—এগুলো। সেখানে কিন্তু প্রতিদিন দুই-আড়াই লাখ মানুষ ভিজিট করছে। তারা কিন্তু আমাদের এই মেসেজগুলো পেয়ে যাচ্ছে। আগে আমাদের যে কার্যক্রম ছিল, যেমন র‍্যালি করা, উপজেলা পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে, বিভাগ পর্যায়ে; ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা, এগুলো আমরা করছি। এর বাইরে আমরা এ কার্যক্রমগুলো করে যাচ্ছি। সচেতনতার জন্য আমরা সোশ্যাল মিডিয়াকে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এখন আমাদের অফিসে একটি স্টুডিও বানিয়েছি। এখানে আমরা সচেতনতামূলক টক শোর আয়োজন করব। এভাবে আমরা বিভিন্ন টুলসে ভোক্তার কাছে পৌঁছার চেষ্টা করছি। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার কারসাজি রোধে আপনাদের বর্তমান সক্ষমতা যথেষ্ট কি? সংস্থার পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?

এখানে দুটো বিষয় আছে। একটা হলো, আমাদের আইনে কতটুকু ম্যান্ডেট দেয়া আছে? আমরা তো একটা আইন মেনে চলি। আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট কতটুকু আছে? প্রথম কথা হলো, আমাদের যে কার্যক্রম এখন আমরা পরিচালনা করছি, ২০০৯-এ যে আইন প্রণয়ন হয়েছে, সে কাঠামোর মধ্যে করতে হয়। সে কাঠামোর মধ্যে যা করছি, আপনারাও দেখছেন—বাজারমূল্য যখন বেড়ে যায় তখন আমরা খুচরা বাজারে যাচ্ছি, পাইকারি বাজারে যাচ্ছি, এমনকি আমরা বড় বড় ডিলার-আড়তেও যাচ্ছি। আমরা বড় বড় রিফাইনারিতেও কাজ করছি। এখন আপনি যেটা বললেন—কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বা কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা হয়তো রিফাইনারি, তারা হয়তো পাঁচ-ছয়টা কোম্পানি, এখানে একটা কিছু বলার সুযোগ থাকে। কিন্তু যখন কারসাজিতে হাজার হাজার লোক জড়িত, যেমন পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বলেন, আলুর ক্ষেত্রে হলো, ডাবের ক্ষেত্রে হলো, মরিচের ক্ষেত্রে হলো, ডিমের ক্ষেত্রে এখানে তো হাজার হাজার লোক জড়িত; এসব ক্ষেত্রে আমরা আইডেন্টিফাই করছি, এখানে ইন্টারভেশন করছি এবং এসব তথ্য সরকারের কাছে তুলে ধরছি। আমাদের কিন্তু আরেকটি আইন আছে কম্পিটিশন কমিশন আইন। আপনি যে ইঙ্গিত করলেন, অর্থাৎ কেউ এখানে বাজার কৃত্রিমভাবে অস্থির করছে কিনা, সেক্ষেত্রে কিন্তু কম্পিটিশন কমিশন তাদের আইন অনুযায়ী ৭৪টি মামলা করেছে। সেখানে ডিম থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রেই মামলা করেছে। তেলের ক্ষেত্রে হয়েছে। চিনির ক্ষেত্রে হয়েছে। ডিটারজেন্টের ক্ষেত্রে হয়েছে। কসমেটিকসের ক্ষেত্রে হয়েছে। আইন অনুযায়ী বিচার হচ্ছে। আমি বলতে চাচ্ছি, আইনি কাঠামো অনুযায়ী আমার যেটুকু করার কথা, আমি সেটুকুই কিন্তু করছি। লজিস্টিকসের বিষয়ে বলব—আমাদের প্রচুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের জেলা পর্যায়ে একজন অফিসার আর একজন কম্পিউটার অপারেটর দেয়া আছে। ঠিক এ মুহূর্তে আমাদের বেশ কয়েকটি জেলায় অফিসার নেই। সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আমাদের যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলো করতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমরা জনবল বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে লিখেছি। আমরা আশা করব, সরকার বিষয়টি, বিশেষ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এটা খুব ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে। আমাদের এখন যে কাজের ব্যাপ্তি বেড়েছে, মানুষের চাহিদা বেড়েছে, আমি মনে করি, আমাদের এ সীমিত জনবল দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দ্রুত যেন জনবল বৃদ্ধির বিষয়টিতে নজর দেয়া হয়।

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে অপরাধের তুলনায় অনেক কম জরিমানা করা হয় এমনটি বলতে শোনা যায়। এ বিষয়ে কী বলবেন?

আমাদের তো আসলে একটা আইনি কাঠামো অনুযায়ী চলতে হয়। আমাদের আইন অনুযায়ী যা আছে, আমাদের কর্মকর্তাদের কিন্তু বিচারিক ক্ষমতা নেই। তারা কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন না। তারা একটা মনিটরিং টিম হিসেবে কাজ করছেন। সেখানে আমাদের আইন অনুযায়ী যা আছে, আমরা সেটাই সর্বোচ্চ পরিমাণে করে থাকি। আবার আমাদের এটাও বিবেচনা করতে হয়—একটা ছোট মুদি দোকানে ১ লাখ টাকা জরিমানা করলে তো বিষয়টা অন্য রকম দেখায়। আমরা তাদের জন্য মোটিভেশনাল কাজই করছি। আমরা প্রতীকী কিছু জরিমানা করছি। সেটাও আমাদের আইন কাঠামোর ভেতর থেকেই। তবে বিদ্যমান আইনে জরিমানার পরিমাণ বা শাস্তির পরিমাণ—এটি আমি বলব কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। অনেক অপরাধ আছে, অনেক বড় ধরনের অপরাধ। সে কারণে আমাদের আইনটা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে এটা ফাইনাল স্টেজে আছে। সেখানে প্রতিটি ধারায় বর্তমানে যে জরিমানার হার আছে সেটা প্রায় দ্বিগুণ করা হচ্ছে। ই-কমার্স ইস্যুটা সেখানে ছিল না। ই-কমার্স চ্যাপ্টারটা এখানে ঢোকানো হয়েছে। আরেকটা হলো, সার্ভিস সেক্টরে আমরা ১০টি সেক্টর নিয়ে কাজ করতাম। এখন পুরোটা সেক্টর যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে নতুন সেক্টরের মধ্যে পর্যটন-শিক্ষা এ বিষয়গুলো ইনক্লুড করা হয়েছে।

ভোক্তা অধিদপ্তর বড় ব্যবসায়ীদের চেয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি যাচ্ছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। এক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কী?

অভিযোগটি আসলে সঠিক নয়। উদাহরণ দিয়ে বললে বিষয়টা বুঝতে পারবেন। প্রথম কথা হলো, আমাদের আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা আমরা করতে পারিনি। বিপণন ব্যবস্থায় চরম ঘাটতি আছে। ট্র্যাডিশনাল সিস্টেমে প্রতিটি সেক্টরেই কিন্তু অনেকে সুযোগ পেয়ে কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দেয়। আমাদের যিনি উৎপাদক বা কৃষিপণ্য উৎপাদন করেন কৃষক; তারা যেমন কম দাম পাচ্ছেন, সঠিক দাম পাচ্ছেন না; আবার ভোক্তা পর্যায়ে দামটা বেড়ে যাচ্ছে। এখানে দুপক্ষই ভুক্তভোগী হচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে যারা মধ্যস্বত্বভোগী, হাত বদল হয়, তিন-চারটা হাত বদল হয়, কৃষিপণ্য ওখানে ফড়িয়াদের মাধ্যমে পাইকারি আড়তে আসে, সেখান থেকে পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা বাজারে আসে। প্রতিটি ধাপে দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত বাড়ানো হচ্ছে। আমরা যখন কোনো একটা বিষয় নিয়ে কাজ করি—আমরা প্রথমে খুচরা বাজারে যাই, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে পাইকারি বাজারে যাই। পরে আড়তে যাই বা ডিলারদের কাছে যাই, সেখান থেকে মূলত যিনি উৎপাদন করেন, বিশেষ করে যিনি রিফাইনারি তার কাছে যাই। আমরা কিন্তু একাধিকবার বিভিন্ন রিফাইনারিতে ভিজিট করেছি, মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে ভিজিট করেছি, তাদের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে যা একটু আগে বলেছি—কমপিটিশন কমিশনের প্রতিযোগিতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমাদের সুপারিশ আমলে নিয়েই কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ী, যারা বাজার অস্থির করছে, তাদের বিরুদ্ধে ৭৪টি মামলা হয়েছে। আমাদের আইনের যে সীমাবদ্ধতা আছে, ওই জায়গাটায় আমাদের আসলে এখতিয়ার নেই। যাদের আছে তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন।

ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কখনো কখনো অভিযানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়তে দেখা যায়। আগে এমনটা দেখা যেত না। এটা কেন হচ্ছে?

আমাদের কাজটা তো আসলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। তারা তো কখনই আমাদের কার্যক্রমে স্বস্তি বোধ করবে না। তারা যেটা করছে—অনেক ক্ষেত্রে অন্যায় করছে। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে আমি বলব যে মিডিয়া থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের বিভিন্ন সংস্থা যেগুলো আছে তাদের পুরো সাপোর্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি এখানে দেড় বছর ধরে কাজ করছি। এ সময়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যেটিকে আমরা তীব্র বাধা বলতে পারি। দু-একটা জায়গায় যেগুলো ঘটেছে এটা তাৎক্ষণিকভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা বাধা দিয়েছে তারা তাদের দোষ স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছে। যে ধরনের বাধার কথা বলছেন, আমি জানি না অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কী হয়েছে, আমাদের ক্ষেত্রে আমি বলব যে তেমন তীব্র বাধার মুখে আমরা পড়িনি। সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ যদি আসে আমরা সেটা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আপনারা কাজ করছেন, কিন্তু সত্যি বলতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষ কষ্টে আছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে আপনি কী বলবেন?

দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটসহ অনেক কিছুই দায়ী। স্থানীয়ভাবে আমরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছি—এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বলতে অনেক কিছু দু-তিন বছরে ঘটে গেছে। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, আমাদের বিপণন ব্যবস্থা ও উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে একটু অস্থির অবস্থা আছে। যেটা গ্লোবাল বৈশ্বিক ইস্যু, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। সেটা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু স্থানীয় যে বিষয়গুলো আছে আমরা সেটা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি আপনারা দেখেছেন আমরা আলু নিয়ে মিটিং করেছি, স্যালাইন নিয়ে মিটিং করব। এর আগে ডাব নিয়ে করেছি, ব্রয়লার মুরগি নিয়ে কাজ করেছি, ডিম নিয়ে কাজ করেছি, কাঁচামরিচ নিয়ে কাজ করেছি। প্রতিটি ইস্যুভিত্তিক আমরা কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। এখন এক্ষেত্রে যে বিষয় আমি বলব—অনেকেই এক্ষেত্রে সুযোগ নিতে পারে, এ সুযোগটা যেন না নিতে পারে, সে কারণে আমাদের যে কার্যক্রম সেটা আরো সহজ করার জন্য আমরা চিন্তা করেছি অ্যাপসনির্ভর বাজার ব্যবস্থাপনার। এজন্য অলরেডি কাজে হাত দিয়েছি। বিশেষ করে রিফাইনারিগুলো, তারা কতটুকু প্রডাকশন করছে, তারা কতটুকু মিল গেট থেকে কার কাছে কোন ডিলারের কাছে কতটুকু যাচ্ছে, সেটা জেলা পর্যায়ে কার কাছে কতটুকু যাচ্ছে—এ তথ্যগুলো আমরা অনলাইনে ট্র্যাক করতে পারব। সে তথ্যগুলো আমরা লিংক করতে পারব। এভাবে মনিটরিং সিস্টেম ডিজিটালাইজড করতে পারলে যে যে জায়গায় অসংগতি হচ্ছে, কারা কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করছে, সেসব জায়গায় আমরা ইন্টারভেশন করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫