ইন্দোনেশিয়ার উপকূল রক্ষা করছে নারিকেলের ছোবড়া

প্রকাশ: মার্চ ২৬, ২০২৩

বণিক বার্তা অনলাইন

ইন্দোনেশিয়ার উপকূল। বিদেশ থেকে আসা অনেকে দৃশ্যটি দেখলে প্রথমে অবাকই হবে। উপকূল ঘেঁষে সারি সারি নারিকেলের ছোবরা। অবশ্য স্থানীয় কোনো বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসা করলেই স্পষ্ট হবে রহস্যটা।

উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিক্ষয় এখন বড়সড় সমস্যা আকারে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করেছে। মূলত বালিতে নারিকেলের ছোবড়া ফেলে রক্ষা করা হচ্ছে উপকূল। আগের মতো ধুয়ে যাচ্ছে না ভূমি।

বার্তা সংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে জানায়, উপকূলের ভাঙন ঠেকাতে নারিকেলের ছোবড়া কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে প্রমাণিত। দীর্ঘদিন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটা প্রয়োগ করা হয়েছে।

সহজলভ্য ও যথেষ্ট টেকসই নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহারে সম্পদশালী দেশগুলোও পিছিয়ে নেই। বরং কৃত্রিম উপাদানের বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবহারের প্রবণতা।

সাধারণত কাঠ, স্টিল ও পাথরের মতো উপাদান এতদিন ধরে উপকূল রক্ষায় ব্যবহার হতো। এমন ব্যয়বহুল উপকরণের চেয়ে নারিকেলের এ উপজাতকে প্রাধান্য দিচ্ছে অনেক দেশ। তার উদাহরণ দেখা যাবে, মার্কিন নগরী নিউ জার্সির শার্ক নদীর তীরে। সেখানে সরকারি ও স্থানীয় তহবিল মিলিয়ে আমেরিকান লিটরাল সোসাইটি চালু করেছে ১৩ লাখ ডলারের প্রকল্প। ২০১২ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূল রক্ষায় নেয়া হয়েছে এ উদ্যোগ।

আমেরিকান লিটরাল সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক টিম ডিলিংহাম বলেন, আমার কেবল ঢেউয়ের শক্তিকে কমিয়ে দিতে চাচ্ছি। প্রাকৃতিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে চাই আমরা।

ছবি: এপি

বাঁধ দেয়ার এ উপাদানগুলো বেশ সহজলভ্য। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। অন্যান্য বাঁধের উপকরণের চেয়ে এটা সস্তাও। নারিকেলের খোসা থেকে তন্তু সরিয়ে নিয়ে ব্যাগ ও মাদুর তৈরি করা হয়। তৈরি করা হয় দড়ি ও জাল। একে উপকূলে স্রোতের আঘাত ঠেকাতেও ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। প্রতিরোধ করা যায় ভূমিক্ষয়। তাছাড়া নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহারের মানে, কোনো কিছুকে পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ। যা হয়তো আবর্জনায় পরিণত হতো।

২০২০ সালে রোডস দ্বীপের উপকূলে ও ২০২১ সালে জ্যামাইকাতে ২৪ হাজার ফুট এলাকা জুড়ে নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করা হয়েছে। কেপ কড, ম্যাসাচুসেটস থেকেও গত বছর একই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে করে কমে আসছে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নারিকেল উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া। এক কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি নারিকেল উৎপাদন করেছেন ২০২১ সালে। বিজ্ঞানীরা সেখানে ছোবড়া দিয়ে সমুদ্রে দেয়াল তৈরি করেছেন ২০১৮ সালে। এটি যে ভূমিক্ষয় কমিয়ে দেয় তা প্রমাণিত। তবে কোনো কোনো জায়গায় তীব্র ঢেউয়ের কারণে কাজ করে না। যেমন কানাডার চ্যাপেল দ্বীপে নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করা হয়েছিল, টেকেনি।

তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া এখন পর্যন্ত বেশ সফলতাই মিলেছে নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহারে। জলবায়ু সচেতনতা বেড়ে চলছে বিশ্বজুড়ে। স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক সমাধান ও পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন উপকরণে আগ্রহ বাড়বে সামনের দিনগুলোতে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫