The festival of Muharram is associated with the Shi’as. It is celebrated during the first ten days of the month of Muharram in commemoration of the martyard of Hasan and Husain. The main feature of the Muharram festival, as performed by Muslims of Bengal as also of other parts of India-Pakistan, were their mournings and procession of symbolic tombs, called Ta’ziya, and other details associated with it. মধ্যযুগের বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রাজ্ঞ গবেষক এমএ রহিমের উপর্যুক্ত উক্তিটি তার Social and Cultural History of Bengal গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ড (পৃষ্ঠা ২৫৪) থেকে নেয়া। লেখক সর্বভারতীয় মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে সুবা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এ সংকলনে Social Festivities, Habits and Beliefs শিরোনামের অধ্যায়ে মহররম উদযাপনের নানা দিক তুলে ধরেছেন। উৎসব উদযাপন বা অনুরূপ প্রস্তাব শিয়া কিংবা সুন্নি মুসলিমদের মহররম পালনের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ইমানি জোসের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক। মহররম উদযাপনের আত্মিক উপাদান হলো শোক, ত্যাগ ও ন্যায়ের পথে আত্মদানের। উদযাপন-উৎসব আনন্দের আর তাজিয়া মিছিল কিংবা মহররম পালন হলো শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার স্মৃতিকে বারবার মনে করা। কারবালার প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদের (সা.) প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) এবং অন্যান্য শহীদানের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখা। বাংলার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন জায়গায় এ উদযাপন ও ভাবনার সামাজিক রূপান্তরের কিছু বর্ণনা পাঠকের স্মৃতিতে তুলে ধরার প্রয়াস নিচ্ছি পরবর্তী অংশে। ভারতীয় উপমহাদেশে মহররমের তাজিয়া মিছিল কোন সময় থেকে শুরু হয়েছিল, তার কোনো ঐতিহাসিক তথ্যাদি পাওয়া কষ্টকর। বাগদাদে বুয়াইদ শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয়ভাবে মহররমের ১০ তারিখকে জাতীয় শোক দিবস এবং এ উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিলেন। খ্রিস্টান মিশনারি পাদ্রি ফাদার মনসেরাত মোগল বাদশাহ আকবরের রাজদরবারের অভিজ্ঞতা অংশে মহররম পালনের বর্ণনা চিত্রিত করেছেন নিম্নরূপে: মহররমের সময় মুসলমানরা এ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখত, শুধু নিরামিষ খেত এবং জনসভায় উচ্চমঞ্চ থেকে ইমাম হাসান ও হোসাইনের আদর্শ জীবন এবং সত্যের জন্য ত্যাগের ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার করুণ কাহিনী বর্ণনা করত। এতে সমবেত শ্রোতাদের মধ্যে শোকোচ্ছ্বাস এবং অশ্রুপ্রবাহ বয়ে চলত। শেষের দিন (১০ মহররম) তারা সমাধি-চিতা তৈরি করত এবং এগুলোকে একটির পর একটি করে পুড়িয়ে ফেলত। লোকেরা জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং এরপর তারা তাদের পা দিয়ে নিভে যাওয়া ছাইগুলো ছড়িয়ে ফেলত। তারা হাসান-হোসাইনের নাম করে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে উঠত। (মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও ফযলে রাব্বি অনূদিত, পৃষ্ঠা: ১৯৯) ফাদার মনসেরাতের প্রায় এক শতাব্দী পর জার্মান অভিযাত্রী জোহান আলব্রেচট দ্য ম্যানডেলসলো বাদশাহ শাহজাহানের সময় (১৬৩৮) মোগলদের দরবার এবং প্রধান নগরগুলো ভ্রমণ করেন। ম্যানডেলসলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। গুজরাটের ইতিহাসবিদ মান্যবর এম এস কম্মিসস্যা রিবেট কর্তৃক ম্যানডেলসলোর ডায়েরিটি Mandelslo’s Travels in Western India (A.D. 1638-9) শিরোনামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এ অনুবাদটিতে সমসাময়িক আগ্রা নগরীতে তাজিয়া মিছিলের দৃশ্যটি ছিল: There were carried about the city coffins covered with bows and arrows, turbans, scimitars and garments of silk, which the people accompany with sobbings and lamentations. Some among them dance at the ceremony, others strike their sword one against other; nay, there are those who cut and slash themselves, so as that the blood comes out in several places, wherewith they rub their clothes, and by that means represent every strange procession. Towards night they set up seniral figures of men made of straw, to personate the murderers of those saints [Hasan and Husain]; and having shot a great srrows at them, they set them on fire, and reduce them to ashes. (পৃষ্ঠা ৪২) ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক বিস্তার হয়েছিল ইরাক-ইরান-তুর্ক-আফগানিস্তান থেকে আগত মুসলিম শাসক-সুফি-উলেমা-সেনানায়কদের মাধ্যমে। ফলে ১১ শতাব্দী থেকেই সুন্নিদের পাশাপাশি শিয়ারাও এ অঞ্চলে এসেছে। ষোড়শ শতাব্দী মোগলদের মাধ্যমে ভারতে শিয়া সংস্কৃতি-রাজনীতির আনুষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় উদযাপনের শুরু। মোগল সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে পূর্ব ভারতীয় সুবাহ বাঙ্গালাহতেও এর প্রভাব পড়েছিল। মির্জা নাথানের বাহারিস্তান-ই-গায়েবির প্রাপ্ত একমাত্র পাণ্ডুলিপিতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্যারিসের বিবলিওথিকে ন্যাশনালে সংরক্ষিত ফারসি পাণ্ডুলিপির ইংরেজি অনুবাদ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ বোরাহ (দুই খণ্ডে ১৯৩৬ সালে আসামের গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত)। সম্পাদক ও অনুবাদক হিসেবে প্রদত্ত ভূমিকা অংশে জানা যায় যে মূল ফারসি পাণ্ডুলিপির মালিক ছিলেন একজন শিয়া বা সৈয়দ মুসলিম। এর আগে পাণ্ডুলিপিটির প্রথম খবরদাতা যদুনাথ সরকারের প্রস্তাব ছিল যে পাণ্ডুলিপিটি মির্জা নাথান প্রদত্ত সংশোধন ও সংযোজন সংবলিত। বোরাহ যদুনাথ সরকারের বক্তব্য নাকচ করে যুক্তি দেন যে ফোলিওর মার্জিনে সংযোজিত টীকা বা সংশোধন অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোগল অফিসারদের কার্যকলাপ সম্পর্কিত মির্জা নাথানের ভাষ্যের সমালোচনা। মোগল সেনাবাহিনীতে প্রচলিত অনেক কর্মকাণ্ডকেই ইসলামী আইন ও রীতিবিরুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে ফোলিওর মার্জিনে প্রদত্ত টীকাকার বা ব্যাখ্যাপ্রণেতা কখনই নিজের নামটি লিখেননি। এ টীকাকার সৈয়দ কর্মকর্তাদের অসৈয়দ কর্মকর্তাদের অধীন রাখাকে রাসুল (সা.) এবং তার পরিবারের প্রতি অসম্মান হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। এমনকি তিনি মহররম মাসের রীতিনীতি ও আনুষ্ঠানিকতা পালন না করাকে গুনাহ বলেছেন। মির্জা নাথানের বক্তব্যেও এটি স্পষ্ট হয় যে ১৭ শতাব্দীর মধ্যেই বাংলার মুসলিমদের সমাজ ও ধর্মীয় জীবনে তাজিয়া বা মহররম পালনের নানা ভাবনা-প্রথা-আনুষ্ঠানিকতা চালু হয়েছিল। সিলেট এলাকায় মোগল বাহিনীর কাছে খাজা ওয়ালি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তিনি মোগল সেনাপতি শাজাত খানের কাছে মহররম মাসের শুরুতেই আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন। মির্জা নাথান খাজা ওয়ালির আত্মসমর্পণ প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করেছিলেন নিম্নোক্তভাবে: শোক প্রকাশের [কারবালার ঘটনা স্মরণে] নির্ধারিত সময় প্রতিবন্ধক না হলে আমি প্রথম দিনই খাজা ইয়াকুবকে নিয়ে হাজির হতাম। মহররমের দশম দিন এবং ওসমানের শোকানুষ্ঠান সামনে, এর চারদিন গত হয়েছে, বাকি রয়েছে মাত্র ছ’দিন। তাই আজ থেকে সপ্তম দিবসে যখন শোকানুষ্ঠান কার্য শেষ হবে, তখন উঁচু নিচু সবাই আত্মসমর্পণের জন্য হাজির হবে। (খালেকদাদ চৌধুরী অনূদিত, পৃষ্ঠা ১৫৯) সতেরো-আঠারো শতকে মহররম উদযাপন ও তাজিয়া মিছিলের বর্ণনা সমসাময়িক আরবি-ফার্সি-বাংলা সাহিত্যে নেই বললেই চলে। যদিও কারবালার মর্মান্তিক স্মৃতিকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে বাংলা মর্সিয়া সাহিত্য ও জারি গান। এমনকি উনিশ-বিশ শতকেও কারবালাকেন্দ্রিক গদ্য ও গান রচনার প্রবণতা লক্ষণীয়। আহমদ হাসান দানি Dhaka A Record of Its Changing Fortunes (আবদুল মমিন চৌধুরী সম্পাদিত, পুনঃপ্রকাশ, ২০০৯) গ্রন্থের Mughal Life অধ্যায়টিতে ঢাকায় মহররম মাসের প্রথম ১০ দিনের রীতি-রেওয়াজের নানা দিক নথিভুক্ত করেছেন। মহররমের ১০ তারিখ বের হতো শোক মিছিল। আরবি আশরাহ (১০) থেকে এ দিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে আশুরাহ প্রত্যয়ে। জরিহ মুবারক বা প্রতীকী কবর সহযোগে তাজিয়া জাহাঙ্গীরনগরের (মোগল ঢাকা) বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লা প্রদক্ষিণ করত। শেষে শিয়াদের পাশাপাশি সুন্নি মুসলিমরাও তাজিয়া মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করত। আহমদ হাসান দানি ঢাকার মহররম উদযাপনের শিকড় অনুসন্ধান করতে গিয়ে বলেন, We do not know how far back in history this type of celebration can be traced in Dacca. But that it was observed in some form from a very long time. (পৃষ্ঠা ৭৭) দানি ১০১১ হিজরিতে (১৬০০ খ্রিস্টাব্দ) নির্মিত ফরাশগঞ্জের বিবি কা রওজা মহল্লার ইমামবাড়াটিকে শহরের সর্বপ্রাচীন শিয়া স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করেন। আমির খান নামে একজনের নির্মিত স্থাপনাটি আরএম দোসানজি ১৮৬১ সালে সংস্কার করেন। কিন্তু ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শিয়া স্থাপনা হলো হোসেনি দালান। মোগল নওয়ারার (নৌবহর) অ্যাডমিরাল মীর মুরাদ ১০৫২ হিজরিতে (১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) ইমামবাড়াটি নির্মাণ করেন। ঢাকা ছাড়াও মোগল আমলে হুগলি এবং পরবর্তী রাজধানী শহর মুর্শিদাবাদেও অত্যন্ত জাঁকজমক এবং রীতি-রেওয়াজের সঙ্গে মহররম, বিশেষত তাজিয়া মিছিল আয়োজন করা ছিল সমাজ-ধর্মের অংশ। ঢাকার পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ ও হুগলি শহরে আঠারো শতকে অনুরূপভাবে মহররম পালন করা হতো। মুর্শিদাবাদের এ অসংখ্য শিয়া ইমামবাড়া এ শহরের প্রাণ। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ইতিহাসের আলোকে ঢাকার ধর্মীয় উৎসব নিবন্ধে উনিশ-বিশ শতকে মহররম ও তাজিয়া আয়োজনের নানা তথ্য পাওয়া যায়। আলম মুসাওয়ারা নামক একজন চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবিতে ঢাকার মহররমের মিছিলে হাতির পিঠে সওয়ার হয়ে কালিমা, আল্লাহ ইত্যাদি আরবি লেখা সংবলিত পতাকা বহনের দৃশ্য ফুটে উঠেছে। (পৃষ্ঠা: ৩১০-১১) এছাড়া ১৮৬৬ সালের তৎকালীন ঢাকা প্রকাশ-এর নিম্নোক্ত খবরটিকে মান্যবর ঢাকা গবেষক মুনতাসীর মামুন তার নিবন্ধে উপস্থাপন করেছেন। সংবাদটিতে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী শব্দজপে মহররমের নানা দিক তুলে আনা হয়েছে। পাঠকের ভালো লাগবে ভেবে নিম্নে তা হুবহু উপস্থাপন করা হলো: হোসেনি দালান ... মুসলমানদিগের মহরম পর্বানুষ্ঠানের প্রধান স্থান। মহরমের সময় ঢাল, তরবার এবং অন্য নানা প্রকার অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি দ্বারা ইহার মধ্যভাগ উত্তমরূপে সুসজ্জিত করা হইয়া থাকে এবং দালানের প্রাচীরের কোনো কোনো স্থল কৃষ্ণ বস্ত্রে আবৃত অথবা মসী দ্বারা রঞ্জিত করা হয়। ... মহরমে হোসেনি দালানের চারিদিকে একটা বাজার বসিয়া যায়। যতদিন ১০ম দিবস অতীত না হয়, ততদিন রাত্রি-দিনের মধ্যে প্রায় এবং মুহূর্তকালও বাজার অবরুদ্ধ হয় না। যখন যাও, তখনি ক্রয় বিক্রয় হইতেছে, দেখিতে পাইবে। রাত্রিকালে হোসেনি দালান আলোকমালায় বিলক্ষণ সুশোভিত করা হয় ... মুসলমানরাও মহরমের সময় নিকটবর্তী হইলে ‘ইয়া হোসেন’ বলিয়া বক্ষে করাঘাত করিতে অভ্যাসি করে। ... জারি গানের চিৎকার ধ্বনি এবং করাঘাতের দুপদাপ শব্দে মুহূর্তের মধ্যে কণ্ঠ বধিরপ্রায় হইয়া উঠে। ইহাদিগের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের অভাব থাকে না। ১০ম দিবসে ঢাকার পশ্চিম ভাগে একটা কল্পিত কারবালার ময়দানে তাজিয়াসহ গমন করিয়া মহরম পর্ব শেষ হইয়া যায়। ঢাকার উপনিবেশ আমলের ইতিহাসের অন্যতম আকরসূত্র হিসেবে বিবেচিত ঢাকা প্রকাশ-এর সংবাদটি কারবালার স্মৃতি সামষ্টিক স্মৃতি-রীতিতে পরিণত হওয়ার খবর দিয়েছে। ঢাকা প্রকাশ-এর সংবাদের শেষ অংশটি নিম্নরূপ: আমরা কোনো কোনো বিশ্বস্ত লোকের মুখে শুনিলাম, অনুসন্ধান করিয়া জানিলাম, কায়েতটুলী প্রভৃতি স্থানবাসী হিন্দুদিগের মধ্যে অনেকে মহরমের সময় মুসলমানদিগের ন্যায় উপবাসাদি করিয়া থাকে। এবং কেহ কেহ মৎস্য আহার করে না। শিয়া মুসলিম ছাড়া সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে মহররমের প্রথম ১০ দিনে সিয়াম সাধনার প্রচলন এখনো বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু উনিশ শতকের সত্তরের দশকে পুরান ঢাকার হিন্দু পরিবারে উপবাস থাকা এবং মাছ না খাওয়ার দৃষ্টান্ত মহররমের শোক ও স্মৃতির সামাজিক অস্তিত্বের প্রমাণ, যা ধর্মীয় কাঠামোর সীমানা অতিক্রম করে অন্য ধর্মের প্রতিবেশীদের প্রভাবিত করেছিল। তাজিয়া মিছিলের বিক্ষিপ্ত কথনের সমাপ্তি টানতে চাই বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশায় আয়োজিত তাজিয়া মিছিলের বর্ণনার মাধ্যমে। প্রায় তিন শতকের বেশি সময় ধরে নবাব বাড়ির পৃষ্ঠপোষকতা ও নেতৃত্বে পৃথিমপাশার শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠী মহররম পালন করছে। ৬১ হিজরি বছরে কারবালার প্রান্তরে হওয়া নির্মমতার স্মৃতিকে স্মরণ করে মহররমের প্রথম ১০ দিন মজলিস, ওয়াজ, দোয়া, জারি, জিয়ারত, মাতম এবং তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তাজিয়া মিছিলটি সাধারণত পৃথিমপাশা নবাববাড়ি থেকে শুরু হয়ে পদ্মদীঘির পাড়ে শেষ হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আগত আলেমদের বক্তৃতার মজলিস ও দোয়া এখানকার মহররম পালনের অত্যাবশ্যক অনুষঙ্গ। স্থানীয় শিয়াদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিয়ারা এ তাজিয়া মিছিলে অংশ নেন। এখানকার নবাব বাড়ির মসজিদটিও বিশেষ উল্লেখের দাবিদার, শিয়া ও সুন্নি মুসল্লিদের একসঙ্গে নামাজ আদায় করার কারণে। উল্লেখ্য, সুন্নিদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক অমুসলিমও তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এ যেন কারবালার অন্যায়ের স্মৃতি নাকচ করার সামাজিক প্রচেষ্টা। শোক রূপান্তর হয় দ্রোহে, স্মৃতি পরিণত হয় শক্তিতে। হিন্দু-মুসলিম (শিয়া ও সুন্নি) একযোগে স্মরণ করেন ফোরাতের তীরে পিপাসার্ত শহীদদের। কৃতজ্ঞতা ইতিহাসবিদ এমএ রহিমের অনবদ্য গবেষণার কাছে বর্তমান লেখক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। মধ্যপর্বের কালসীমা পেরিয়ে উনিশ-বিশ শতকের ঢাকার তাজিয়া মিছিলসংক্রান্ত তথ্যাদি আমার শিক্ষক মান্যবর ঢাকা নগর ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের এ-বিষয়ক গবেষণা ছাড়া অপূর্ণাঙ্গ। বর্তমান লেখক এ দুজন ইতিহাসবিদের কাছে কৃতজ্ঞ। শহিদুল হাসান: সহযোগী অধ্যাপক ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিল্পীর চোখে মুর্শিদাবাদের মহররমের তাজিয়া সূত্র: কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আর্কাইভস