দেশে
মোট ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড অন্যতম। ১৯৯৯ সালের ২২ ডিসেম্বর যেটি প্রথমে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স পায়। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ‘এখনই সময়’ স্লোগানে রি-ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড। আর্থিক এ প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল লিমিটেড নামে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক দুটি সাবসিডিয়ারি রয়েছে। আর আমাদের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, যারা দীর্ঘ ১৮৮ বছর ধরে এ দেশে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে এবং যাদের হাত ধরে বেসরকারি খাতে প্রথম ব্যাংকের যাত্রা। ব্যালান্স
শিট ও আমাদের গ্রাহক যদি দেখেন—চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করপোরেট ৫৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, এসএমই ২৮ দশমিক ৪৬ এবং বাকি ১৮ শতাংশ রি-টেইল পোর্টফোলিও। এর সঙ্গে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক কার্যক্রম তো রয়েছেই। বড় কথা হলো, সম্পূর্ণ এ বিজনেস সাইকেলের মধ্যে গ্রাহকের সম্পূর্ণ সমাধান দেয়ার জন্য আমাদের গ্রুপের সঙ্গে আরো যেসব কার্যক্রম থাকা দরকার সেসব সুবিধাও রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যেসব ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে আমরা যদি সব কাজে লাগাই তাহলে আগামী তিন বছরের মধ্যে শীর্ষ তিনে অবস্থান করবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। আমাদের কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য, নিজেদের একটি শত ভাগ কমপ্লায়েন্সড আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। উন্নত করপোরেট সুশাসনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশে নিজেদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন। আমাদের
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব হচ্ছে নিজস্ব বিজনেস
মডেল, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা। বিজনেস মডেল হিসেবে যদি দেখেন তাহলে আমরা বিভিন্ন উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান এবং যারা ডিস্ট্রিবিউশনের কাজে নিয়োজিত এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রীকরণের মাধ্যমে একদম প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও গ্রাহকের কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ সরবরাহ করছি। টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ও সাপ্লাই লাইন লিমিটেড মুদি দোকানিদের মাত্র একদিনেই পুঁজির জোগান দেবে। পাঁচ হাজার গ্রাহককে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। শুধু তাই নয়, আমাদের ঋণের মাধ্যমে আকিজ গ্রুপ, বাংলা মার্ক ও বাংলা ট্রাকের সঙ্গে লিয়াজোঁ স্থাপন করে নির্মাণ ও কৃষি উদ্যোক্তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও ট্রাক্টরসহ কৃষির অন্য যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারবেন। গরু মোটাতাজাকরণ ও ডেইরির জন্য প্রাণীসেবার মাধ্যমে নিতে পারবেন আর্থিক মূলধন। নারী উদ্যোক্তাদের আমরা খুবই সহজে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে চার দিনে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছি। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের জনপ্রিয় এ পণ্যের নাম ‘বিজয়’। ফলে আমাদের বিজনেস মডেলের মধ্যে আমরা এসএমই ও রি-টেইল ব্যবসাকে অনেক বেশি ফোকাস করেছি এবং করছি। করপোরেটের
ক্ষেত্রে আমরা, যারা প্রথম সারির শীর্ষস্থানীয় বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে এমন পরীক্ষিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করছি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কোম্পানির রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ক্রেডিট পলিসি, অপারেশন্স মডেল, আইটি পলিসিসহ সবকিছুকে এমনভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে; যার ফলে আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আমাদের ক্রেডিট রেটিং দীর্ঘমেয়াদে ডাবল ‘এ’ এবং স্বল্পমেয়াদে এসটি-ওয়ান, যা অত্যন্ত শক্তিশালী আর্থিক সক্ষমতার কথা প্রকাশ করে। পরবর্তী বিষয় হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা। পুরোপুরি পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যার যার কাজের যে পরিধি আছে সেভাবেই প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে পরিচালনা করা হয়। এর প্রতিফলন আমাদের আর্থিক ফলাফলে প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশ
ফাইন্যান্সে কাজ শুরু করার পরই আমি কিছু নতুন পরিকল্পনায় হাত দিয়েছিলাম। এ বছরের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক উইং খোলার অনুমোদন পেয়ে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের উত্তরোত্তর সফলতার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে সেরা আর্থিক প্রতিবেদনের জন্য আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। একই বছর ভালো সুশাসনের জন্য পেয়েছে আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। এমনকি এ বছরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে সাউথ এশিয়ান ফেডারশেন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের (সাফা) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অ্যাওয়ার্ডের স্বীকৃতিও এসেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ঘরে। টেকসই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া সেরা পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেডও একটি।
করোনার কঠিন পরিস্থিতির পরও স্বদর্পে মাথা উঁচু করে অর্জন অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স। ২০১৯ সালের এ প্লাস ক্রেডিট রেটিং থেকে আজ আমাদের ক্রেডিট রেটিং ডাবল-এ। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের পালকে যুক্ত হওয়া এসব সফলতা অব্যাহত রেখে গ্রাহকের নির্বিঘ্ন আর্থিক সেবা দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। গেল মে মাসে দেশে প্রথমবারের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলা হয়েছিল ঢাকায়। সে আয়োজনের অভাবনীয় সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবারও বণিক বার্তার আয়োজনে এবার যশোরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘এনবিএফআই মেলা যশোর’। ঢাকার বাইরে দেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলার এ আয়োজনে প্রধান সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড। শুধু তাই নয়, একই ছাদের নিচে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ মিলনমেলা সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সহজ শর্তে আর্থিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে এনবিএফআইয়ের আর্থিক পরিষেবাগুলো উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও সর্বসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পেতে এ মেলা টনিক হিসেবে কাজ করবে।