[রামনাথ
বিশ্বাস ভ্রামণিক
হিসেবে পরিচিত।
তিনি সাইকেলে
চড়ে বিশ্বভ্রমণ
করেছিলেন। তার
রচিত ভ্রমণ
কাহিনী এখনো
পাঠকদের আকর্ষণ
করে। ভ্রামণিক
ও ভ্রমণ
কাহিনী লেখক
হিসেবে অধিক
পরিচিত হলেও
তিনি ছিলেন
একজন বিপ্লবী
ও সৈনিক।
১৮৯৪ সালের
১৩ জানুয়ারি
তিনি সিলেট
জেলার বানিয়াচং
গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায়
জন্মগ্রহণ করেন।
এটি বর্তমানে
বাংলাদেশের সিলেট
বিভাগের হবিগঞ্জ
জেলার অন্তর্গত।
১৯৩৬-৪০
সালের মধ্যে
তিনি আফ্রিকা
ভ্রমণ করেন।
মুম্বাই থেকে
তিনি জাহাজে
মোম্বাসায় পৌঁছে
সেখান থেকে
সাইকেল যাত্রা
শুরু করেন।
তিনি কেনিয়া,
উগান্ডা, নায়াসাল্যান্ড,
রোডেসিয়া হয়ে
দক্ষিণ আফ্রিকায়
পৌঁছান। তার
লেখা ‘অন্ধকারের
আফ্রিকা’ পাঠক
মহলে সমাদৃত।
গ্রন্থটি থেকে
নির্বাচিত অংশ
এখানে সঙ্কলিত
হলো] ব্রিটিশ পূর্ব
আফ্রিকার কেনিয়া
প্রদেশটি যথাসম্ভব
ভ্রমণ করে
কেনিয়ারই সবচেয়ে
বড় বন্দর
মোম্বাসাতে এসে
বিশ্রাম করছিলাম।
ভ্রমণের গ্লানি
দু-তিনদিনের
মধ্যেই কমেছিল।
পুনরায় পথের
ডাক আমার
হূদয়তন্ত্রীতে বেজে
উঠেছিল, কিন্তু
মোম্বাসা ছেড়ে
যাওয়ার ইচ্ছা
হচ্ছিল না।
মন চাইছিল
আরো কয়েক
দিন শহরে
থেকে আমার
পূর্বপরিচিত নিগ্রো
সাথীটিকে খুঁজে
বের করে
তাকে সঙ্গে
নিয়ে আবার
রওনা হই।
কিন্তু ঘর
হতে বের
হওয়ার ইচ্ছা
হতো না।
শুয়ে থাকতেই
ভালোবাসতাম। সপ্তাহ অতিবাহিত
হয়নি, হঠাৎ
একদিন বিকাল
বেলা আমার
পূর্বপরিচিত সাথী
তারু এসে
হাজির। তারু
আমার সঙ্গে
কেনিয়ার অনেক
স্থান ভ্রমণ
করেছিল। আমি
তাকে কেনিয়া
ভ্রমণের মধ্যপথে
বিদায় দিয়েছিলাম
এবং বলেছিলাম
সে যেন
আমার জন্যে
মোম্বাসায় অপেক্ষা
করে। কেনিয়া
ভ্রমণ সমাপ্ত
করে মোম্বাসার
কোথায় এসে
থাকব তাও
তাকে বলেছিলাম।
তিন মাস
আগে তাকে
বিদায় দিয়েছিলাম।
এ তিন
মাসের মধ্যেই
তার শরীরে
যৌবন এসে
দেখা দিয়েছিল। পেটেল সমাজের
ধর্মশালায় এসেই
সে আমার
রুমে প্রবেশ
করে কাছে
বসল। তারপর
মুখের এমনি
একটা ভঙ্গি
করল, যা
দেখে মনে
হলো সে
আমার কাছ
হতে একটু
আদর যত্ন
চায়। আমি
তাকে কাছে
বসিয়ে নানা
কথা বলে
সান্ত্বনা দিলাম,
তারপর বললাম,
‘শরীর
একটু ভালো
হলেই এবার
টাংগার দিকে
রওনা হব।’ তারু আমার
আরো একটু
কাছে এসে
আমার হাত
ও পা
ভালো করে
পরীক্ষা করে
ক’টা
ডুডু পোকা
বের করে
ফেলল এবং
সিগারেট প্যাকেট
থেকে একটা
সিগারেট ধরিয়ে
বাইরে চলে
গেল। সে
যখন বাইরে
যাচ্ছিল তখন
তার দিকে
আমি চেয়ে
বেশ ভালো
করে বুঝতে
পেরেছিলাম এবার
ছেলেটার অশান্ত
মন শান্ত
হয়েছে। সে
গিয়েছিল পাক
ঘরে। পাক
ঘরে সে
আমার জন্য
গরম জল
করে বাথরুমে
রেখে কাছে
এসে বলল,
‘বানা,
স্নান করে
এসো, আমি
কতক্ষণ পর
তোমার জন্য
পাক করব।’
আমি যখন
স্নান করতে
গিয়েছিলাম তখন
আমার মানিব্যাগ
বিছানার ওপরই
রেখে গিয়েছিলাম।
স্নান করে
ফিরে এসে
দেখি তারু
আমার মানিব্যাগ
খুলে টাকা
গুনছে। আমাকে
দেখেই বলল
‘বানা,
এবার অনেক
পাউন্ড তোমার
কাছে আছে,
এবার আরো
চারটা সাথী
নেব, কেমন
রাজি আছ
তো?’ মাথা
নেড়ে সম্মতি
জানালাম এবং
তাকে একটি
শিলিং দিয়ে
বাজারে বিদায়
করে দিলাম। তারু খাবার
নিয়ে এল।
বেশ মোটাসোটা
মাছ ভাজা
আর ভাত।
তাই খেলাম।
এরূপ খাবার
কিন্তু আমার
সহ্য হতো
না, তাই
ফের দুধ
নিয়ে আসতে
পাঠালাম। পরদিন
থেকে তারু
আমার গৃহকাজের
সব ভারই
নিয়েছিল আর
আমি মুক্ত
মনে নতুন
পথের সন্ধান
নিতে লাগলাম। মোম্বাসা থেকে
টাংগায় প্রায়
ভারতবাসীই জাহাজে
করে যায়,
সেজন্য স্থলপথের
সংবাদ বড়
কেউ রাখে
না। যারা
সে সংবাদ
রাখে তারা
নিতান্ত দরিদ্র
লোক ও
অল্পবয়সী। তাদের
কাছ থেকেই
সংবাদ সংগ্রহ
করতে লাগলাম।
একটি ছেলে
আমাকে বলেছিল,
অনেক মাইল
যাওয়ার পর
একখানা গ্রাম
পাওয়া যাবে
এবং সে
গ্রাম থেকে
দরকারি জিনিস
কেনার সুবিধা
হবে। এরপর
পথে এমন
কোনো গ্রাম
পাওয়া যাবে
না যা
থেকে কিছু
কিনতে সক্ষম
হব। এ
যুবক যা
বলেছিল তার
অনেকটা সত্য
প্রমাণ হয়েছিল,
যারা আর
যা কিছু
বলেছিল তা
একদম বাজে
কথা। মিথ্যা কথা
বলে বাহাদুরি
অর্জন করা
এটা যেন
একটা ফ্যাশন।
আফ্রিকা সম্বন্ধে
আফ্রিকায়ই আমাদের
লোকের কাছ
থেকে এত
বাজে কথা
শুনেছিলাম, যা
না শুনাই
আমার কর্তব্য
ছিল। আমি
হয়তো একদম
চুপ করে
বসে আছি,
এমনি এমন
একজন গণ্যমান্য
ভদ্রলোক এসে
উপদেশ দেয়ার
ভান করে
নিগ্রোদের বিরুদ্ধে
এমন কিছু
বলতে আরম্ভ
করলেন যে
নিগ্রোরা যেন
মানুষই নয়,
অথচ তারু
আমার কাছেই
বসে আমার
সাহায্য করছে
দেখতে পেয়েও
তাদের মন
উঠছিল না।
মোম্বাসা থেকে
টাংগা মাত্র
৫৮ মাইল
অথচ সে
পথটাকে কেউ
একশতে কেউ
দুইশতে পরিণত
করেছিলেন। মোম্বাসা থেকে
বিদায় নিতে
আমার মোট
১০ দিন
লেগেছিল। এ
১০ দিন
শুধু বসেই
কাটিয়ে ছিলাম।
বিদায় নেয়ার
দুদিন আগে
একজন যুবক
আমার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করেন
এবং তিনিও
আমার সঙ্গে
যাবেন বলে
বেশ লম্ফঝম্প
করেন। কিন্তু
যেদিন আমি
শহর ছেড়ে
চলে যাই,
সেদিন তিনি
কোথায় ডুব
দিয়েছিলেন তার
সন্ধান করে
উঠতে পারিনি। আমার প্রচলিত
নিয়মমতে ঘুম
থেকে খুব
সকালে উঠলাম।
দরকারি জিনিস
সাইকেলের পেছনে
বাঁধলাম তারপর
তারু ও
তার সাথী
তিনজনকে পেছনে
রেখে রওনা
হলাম। আমাদের
পথ সমুদ্রতীর
দিয়ে গিয়েছে।
সমুদ্রতীর আমাদের
দেশের মতো
নয়। হঠাৎ
যেন একখণ্ড
ভূমি সমুদ্র
ভেদ করে
উঠেই আকাশ
ছুঁইতে চলেছে।
এতে আমাদের
অসুবিধা মোটেই
হলো না।
সমুদ্রের বাতাস
এসে আমাদের
শরীর শীতল
করতে লাগল।
দিকটা ভয়ানক
গরম সমুদ্রের
বাতাস না
পেলেও চলতাম
নিশ্চয়ই, তবে
অসুবিধা হতো
খুব বেশি।
আমরা যে
পথে চলছিলাম
তাকে মোটরপথ
বলা যেতে
পারে না,
কারণ অনেক
স্থানেই পথ
ভাঙা এবং
পথের ওপর
বড় বড়
পাথর পাহাড়ের
গা থেকে
খসে পথের
ওপর পড়ে
রয়েছিল। মাইল
দুই চলার
পর আর
সাইকেলে বসতে
পারলাম না।
হেঁটেই চলতে
লাগলাম। ঠিক
করেছিলাম সকালে
৩ ঘণ্টা
আর বিকালে
৩ ঘণ্টা
চলে যতটুকু
পথ চলা
যায় ততটুকুই
চলব। সুখের
বিষয় প্রথম
দিনই সন্ধ্যার
সময় আমরা
একটি নিগ্রো
গ্রামে পৌঁছেছিলাম। নিগ্রো গ্রাম
যদিও ছোট
তবু তাতে
লোক ছিল।
লোক শিক্ষিত
ও সভ্য।
মামুলি একটি
খাবারের দোকান
ছিল। খাবারের
দোকানে ভারতীয়
ধরনে মুরগির
তরকারি আর
ভাত বিক্রি
হচ্ছিল। থাকারও
ছোট ছোট
ঘর ছিল।
আমরা সবাই
একখানা ঘরই
ভাড়া করে
ফেললাম। তারু
তাদের জন্য
মিলি-মিলি
সেদ্ধ করে
নিয়েছিল। মুরগির
তরকারিও তারা
একটু একটু
খেয়েছিল। কাছের
নালায় স্নান
করে এসে
আমি নিগ্রো
চা খেয়ে
বিশ্রাম করতে
বসলাম এবং
ম্যাপখানা ভালো
করে দেখে
নিয়ে পাইচারি
করতে লাগলাম।
এত পরিশ্রম
করার পরও
তারু ও
তার সাথীরা
এক প্রৌঢ়
স্ত্রীলোকের সঙ্গে
নানা কথা
বলে বেশ
আমোদ করছিল।
শুধু তারাই
আমোদ করছিল
তা নয়,
অন্যান্য যারা
গ্রামের খাবারের
দোকানে উপস্থিত
ছিল তারাও
নানা কথা
বলে বেশ
আনন্দ উপভোগ
করছিল। এখানে
দুটি সভ্যতার
সংমিশ্রণ হয়েছে
দেখতে পেলাম;
আরব সভ্যতা
ও ইউরোপীয়
সভ্যতা। আরব
সভ্যতা মতে
স্ত্রীলোককে কোণঠাসা
করা, আর
ইউরোপীয় সভ্যতা
মতে স্ত্রীলোককে
ক্ষমতা দেয়া।
এখানে স্ত্রীলোকরা
কোণঠাসা হয়নি,
তবে বিচ্ছিন্ন
হয়েছে। স্ত্রীলোকের
স্বাধীনতা আছে,
তবে পুরুষের
একসঙ্গে নয়,
পৃথকভাবে। এ অঞ্চলের
লোকের ভাষা
সোহেলী। সোহেলী
ভাষাতে এতই
আরবি শব্দ
রয়েছে যে
যারা আরবি
ভাষা অবগত
আছে, তারা
অতি সহজে
সোহেলী ভাষা
বুঝতে পারে।
সোহেলী ভাষা
সর্বত্র সমানভাবে
প্রচলিত নয়।
কোথাও নিগ্রো
শব্দ কম
আর কোথাও
নিগ্রো শব্দ
বেশি, এই
যা পার্থক্য।
বাস্তুদের কাছে
শুনেছিলাম, বর্তমানে
সোহেলী ভাষার
রকম বদলে
গিয়েছে। নতুন
ছাঁচে ভাষার
গড়ন হচ্ছে।
দৈনন্দিন কাজ
চলার জন্য
যেসব শব্দের
দরকার সে
পদগুলো সোহেলী
ভাষাতেই রয়েছে।
সে শব্দগুলোকেই
শিক্ষিত নিগ্রোরা
তাদের নিজের
ভাষায় ব্যবহার
করছে। এ
বিষয়ে পুরনো
মতাবলম্বীরা অনেকেই
বাদ সাধছে,
কিন্তু আফ্রিকার
পুরনো অন্য
ধরনের। বেঁচে
থাকার অধিকার
তাদের নেই।
এতে কাজের
অনেক সুবিধা
হয়েছে। সোহেলী ভাষার
একটি বাহাদুরি
আছে, সে
বাহাদুরিটা কেপটাউন
থেকে কাইরো
পর্যন্ত গ্রাম্য
ভাষার ধাতু
একই ধরনের।
বিদেশী ভাষা
নিগ্রোদের শুধু
বিচ্ছিন্ন করেছে।
আফ্রিকায় মিশনারিরা
সে বিচ্ছিন্ন
অংশটাকেই ‘ভাষায়
অনেক প্রভেদ’
দেখিয়ে দিয়ে
অনেকগুলো ছোটখাটো
ভাষার সৃষ্টি
করেছন। তাদের
এ বাহাদুরি
কিন্তু চলবে
না, কারণ
বর্তমান সময়ের
নিগ্রোরা পৃথক
হয়ে প্রাদেশিকতা
করতে রাজি
নয়। চাকরির
মোহই তাদের
অতি অল্পই
দেখতে পাওয়া
যায়। চাকরির
মোহই প্রভেদের
মূল কারণ। রাতে শোয়ার
সময় আমি
মশারি খাটালাম।
তারু ও
তার সাথী
তিনজন বাইরেই
শুয়ে থাকল।
আমি ভাবছিলাম
গভীর রাত্রে
হয়তো বন্য
জীব এসে
উৎপাত করবে,
কিন্তু এদিকে
বন্য জীবের
কোনো উপদ্রব
নেই, অথচ
আমাদের দেশের
লোক অনেকেই
বলেছিলেন, এদিকে
এত বন্য
জীব রয়েছে
যে দিনের
বেলায়ই সিংহ
মানুষ আক্রমণ
হরে। নেকড়ে
বাঘ এদিকে
অনেক দেখতে
পাওয়া যায়।
এসব নেকড়ে
মানুষকে বেশ
ভয় করে।
ঘুম থেকে
উঠে মনে
পড়ল বিদ্যাসাগর
মহাশয়ের প্রথম
ভাগের কথা।
তিনি এক
স্থানে লিখেছিলেন
‘যত
কল্প তত
নয়’। আনুমানিক ১৫
মাইল পথ
আগের দিন
আমরা চলেছিলাম।
আজ যাতে
২০ মাইল
পথ চলতে
পারি, সেজন্য
সকালেই কিছু
পাক করে
নিয়ে পথে
বের হলাম।
এদিকের পথটাও
যেন একটু
ভালো বলেই
মনে হতে
লাগল। একসঙ্গে
পাঁচ-ছয়
মাইল পথ
চলে আমি
পথের কাছে
বিশ্রাম করতাম,
তারপর তারু
ও তার
সাথীরা অনেকক্ষণ
পর যখন
আসত, তখন
তারাও কতক্ষণ
বিশ্রাম করত,
তারপর আবার
আমরা পথে
বের হতাম।
এমনি করে
আমরা বিকাল
৪টা পর্যন্ত
পথ চলে
একটি শুষ্ক
নদীতীরে রাত
কাটানোর জন্য
মশারি খাটালাম। নদী সর্বত্র
শুকিয়ে যায়নি।
আমরা যে
স্থানে মশারি
খাটিয়েছিলাম তার
অল্প দূরে
জল আটকে
রয়েছিল। জল
বড়ই পরিষ্কার
ও ঠাণ্ডা।
শীতল জলে
স্নান করে
নেয়ার পর
তারু একটা
প্রকাণ্ড হাড়িতে
ভাত বসাল।
ভাত হয়ে
গেলে নুন
ও সামান্য
তরকারির সংযোগে
খাওয়া হলো।
খাবার পর
একটু বিশ্রাম
করেই আমি
কাছের জঙ্গল
দেখতে বেরিয়ে
পড়লাম। জঙ্গল
মারাত্মক ছিল
না। এরূপ
জঙ্গল আমাদের
দেশেও অনেক
আছে। সন্ধ্যার
আগে তারু
আমাকে জানিয়ে
দিল, এ
নদীই হলো
কেনিয়ার সীমান্ত।
একটু রাত
থাকতে এখান
থেকে উঠে
জংলি পথ
ধরে যেতে
হবে নতুবা
পথের পাশের
কাস্টমস অফিসার
তাদের ধরবে
এবং হয়তো
ট্যাক্সও আদায়
করতে পারে।
এরূপ ঝঞ্ঝাট
এড়ানোর জন্যই
জংলি পথ
ধরতে হবে।
আমি তাকে
সম্মতি জানিয়ে
মশারির ভেতর
গিয়ে শুয়ে
পড়লাম। রাত বোধহয়
১০টা হবে।
হঠাৎ আকাশ
মেঘে ভর্তি
হয়ে গেল।
একটু একটু
বাতাসও বইতে
আরম্ভ করল।
তারু উঠে
বসল এবং
মশারিটা উঠিয়ে
বেঁধে ফেলল।
আমাদের সব
জিনিস যখন
বাঁধা হয়ে
গেল তখন
প্রবল বেগে
বৃষ্টি আরম্ভ
হলো। আমরা
নদীতীরে মশারি
খাটাইনি, নদীর
মধ্যেই মশারি
খাটিয়েছিলাম। দেখতে
দেখতে নদীতে
জল বইতে
আরম্ভ করল।
জল গভীর
হলো। জলে
নানারূপ বৃক্ষ
শাখা ভেসে
চলতে লাগল।
তারপর আর
বৃক্ষ শাখা
নয়, মোটা
মোটা গাছই
ভেসে যেতে
লাগল। গাছে
নানা জাতীয়
বন্য জীব
আশ্রয় নিয়েছিল।
তারাও ভেসে
যেতে লাগল।
তার মাঝে
নানা জাতীয়
সাপই বেশি।
রাত অন্ধকার
ছিল না।
বলেই এসব
আমাদের দেখার
সুবিধা হয়েছিল।
আমাদের সঙ্গে
টিপ বাতি
থাকায় দূরের
জিনিস দেখার
পক্ষে আরো
সুবিধা হয়েছিল। অনেকক্ষণ সে
দৃশ্য দেখে
আমরা পথ
ধরলাম এবং
বন্যপথে চলে
সকালেই টাংগা
নামক শহরে
এসে একটি
ধর্মশালার বারান্দায়
আশ্রয় নিলাম।
তখনো লোক
বেশ আরাম
করে ঘুমাচ্ছিল।
আমার ইচ্ছা
ছিল না
কাউকে এ
সময়ে ডেকে
তুলি। তারুর
বন্ধুরা ধর্মশালার
বারান্দায় আমাদের
বসিয়ে রেখেই
গ্রামের দিকে
চলে গিয়েছিল
এবং বলে
গিয়েছিল বিকালে
এসে দেখা
করবে। সকালে
যখন অনেকেরই
ঘুম ভাঙল
তখন আমি
ধর্মশালার সেক্রেটারির
সঙ্গে দেখা
করলাম এবং
থাকার বন্দোবস্তও
করলাম। সেক্রেটারি
মহাশয় আমাকে
একখানা রুম
ছেড়ে দিলেন।
আমি রুমখানাকে
পরিষ্কার করিয়ে
শোয়ার বন্দোবস্ত
করেই শহরটায়
বেড়াতে বেরোলাম।
শহরে বেশিক্ষণ
থাকলাম না
কারণ তখনো
যেন ঘুমে
চোখ ভেঙে
আসছিল। ধর্মশালায় গিয়েই
বিছানা পেতে
শুয়ে পড়লাম।
কোনো কিছু
ভাবার আগেই
গাঢ় নিদ্রা
আমাকে আলিঙ্গন
করল। বিকালে
যখন ঘুম
ভাঙল তখন
কয়েকজন স্বদেশবাসী
আমাকে জিজ্ঞাসা
করল ‘নিগ্রোও
কি তোমার
সংগ নিয়েছে?’
আমি তাদের
বললাম নিগ্রোরা
আমার সংগ
নেয়নি আমি
তাদের আমার
সঙ্গে এনেছি।
নিগ্রোদের সঙ্গে
নেয়াটা যে
মহা খারাপ
কাজ সে
কথাটাই তারা
আমাকে ভালো
করে বোঝাতে
চেষ্টা করল।
আমি কারো
কথার জবাব
না দিয়ে
নিগ্রো পাড়ায়
গিয়ে তারু
ও তার
তিনজন বন্ধুকে
খুঁজতে লাগলাম।
এদের খুঁজে
বের করতে
না পেরে
নিকটস্থ হোটেলে
গিয়ে খেয়ে
ফের ধর্মশালায়ই
এসে এদের
অপেক্ষায় বসে
থাকলাম। সন্ধ্যা হয়
হয়। তখনো
পথে-ঘাটে
বিজলি বাতি
জ্বলে ওঠেনি।
তখন তারু
অতি সন্তর্পণে
আমার কাছে
এসে বসল
এবং আমার
নিজের রুমে
যেতে বলল।
দিনটা ছিল
ভয়ানক গরম,
বাইরে বসে
থাকতেই ইচ্ছা
হচ্ছিল। তাকে
অভয় দিয়ে
বললাম ‘এখানে
তোমার ভয়ের
কোনো কারণ
নেই, বলো
তো তোমার
কী হয়েছে?’
তারু বলল
‘এ
যে বিদেশ
বানা, এখানকার
পুলিশ আমাদের
পরিচয় পেলেই
পোল ট্যাক্স
চার্জ করবে।’
নিগ্রোদের মাথাপিছু
১০ শিলিং
করে পোল
ট্যাক্স দিতে
হয়, প্রত্যেক
বছর। যাদের
বাড়িঘর আছে
তাদের প্রত্যেক
ঘরের জন্যও
১০ শিলিং
করে দিতে
হয়, যদি
সেই ঘর
কোনো মিউনিসিপালিটির
অন্তর্গত থাকে।
আমি তারুর
হাতে ২
পাউণ্ড দিয়ে
বললাম এখন
আর ভয়
নেই তো?
তারু ২
পাউন্ড পেয়ে
এক দৌড়ে
তার বন্ধুদের
ডেকে নিয়ে
এল। তারা
প্রত্যেকেই বুঝল
এখন আর
তাদের ভয়ের
কোনো কারণ
নেই। আমিও
অনেকটা নিশ্চিন্ত
হলাম। সেদিন আর
কোথাও গেলাম
না। তারু
আমার জন্য
ধর্মশালায়ই পাক
করল এবং
আমার রুমেতেই
তারা শুয়ে
থাকল। আমার
শরীরে বেশ
ব্যথা হয়েছিল,
তাই গরম
জল দিয়ে
স্নান করে
শুয়েছিলাম। রাত
তখন বোধহয়
২টা হবে।
দুজন ভারতবাসী
আমাকে ডেকে
তুলে বললেন
যদি আমি
নিগ্রো সংগ
পরিত্যাগ না
করি, তবে
যেন সকাল
হওয়ার আগেই
ধর্মশালা ত্যাগ
করি অর্থাৎ
এখনই যেন
বেরিয়ে যাই।
আমি সে
আদেশের প্রতীক্ষায়
ছিলাম। গভীর
রাতেই আমি
একটি আম্রবৃক্ষের
নিচে আশ্রয়
গ্রহণ করলাম।
রাত কাটল
বেশ ভালোই। আমি তখনো
গভীর নিদ্রায়
মগ্ন ছিলাম।
সূর্যালোক গাছের
পাতা ভেদ
করে আমার
মুখের ওপর
পড়ছিল দেখে
তারু একখানা
কাপড় আমার
চোখে বিছিয়ে
দিয়েছিল। চারদিকে
মাছি ভনভন
করছিল দেখে
অন্য তিনজন
লোক গাছের
ছোট ডাল
দিয়ে মাছিগুলোকে
তাড়িয়ে দিচ্ছিল।
দৃশটা অনেকের
চোখেই পড়ছিল।
দুজন গ্রিক
এসে আমার
কাছে দাঁড়াতে
তারু তাদের
কাছে গত
রাতের কথা
বলল। গ্রিকরা
হেসে বললেন,
‘এক
ঘৃণিত অন্য
ঘৃণিতকে ঘৃণা
করে এবং
সে কথাটা
বারবার যখন
ইন্ডিয়ানদের সামনেই
গ্রিকরা বলল
তখন একজন
স্কুল মাস্টার
আমাকে জাগিয়ে
ধর্মশালায় যেতে
বললেন। আমি
গত রাত্রের
কথা তাকে
বলায় তিনি
আমার হাত
ধরে একরূপ
টেনেই ধর্মশালায়
নিয়ে গেলেন।
ধর্মশালায় গিয়ে
আমি ফের
ঘুমিয়ে পড়লাম।
তারু পাক
বসাল, অন্য
তিনজন আমার
কাপড় পরিষ্কার
করতে লাগল। সেদিনই বেলা
২টার সময়
একটি বিদ্যালয়ে
লেকচার দিলাম।
বিদ্যালয়ে শুধু
ভারতবাসীরাই প্রবেশ
করতে পারত।
ইউরোপীয়রা ঘৃণা
করে সেই
বিদ্যালয়ে যেত
না। আর
নিগ্রোদের বিদ্যালয়ে
প্রবেশ করতে
দেয়া হতো
না। শিক্ষক
মহাশয়কে অমি
সবিনয়ে বললাম
‘যেসব
নিগ্রো ভিড়
করে দাঁড়িয়ে
আছে তাদেরও
বসতে দেয়া
হোক।’ শিক্ষক
মহাশয় আমার
কথায় রাজি
হলেন এবং
নিগ্রোদের বসতে
বললেন। হিন্দুস্তানিতেই
আমার বক্তব্য
বিষয় বলেছিলাম।
দেখলাম অনেক
নিগ্রো হিন্দুস্তানি
বেশ বোঝে।
লেকচারের শেষে
একজন নিগ্রোকে
ডেকে এনে
আমার কাছে
দাঁড় করালাম
এবং বললাম,
‘আমি
যা বলেছি
তাই তুমি
সোহেলীতে তোমার
জাতভাইদের কাছে
বলে ফেল।’
এতে লোকটি
রাজি হলো
এবং আমি
যা বলেছিলাম
তাই প্রায়
আধ ঘণ্টাব্যাপী
বলল। তার
দোভাষীর কাজ
দেখে আমার
বেশ আনন্দ
হয়েছিল। লেকচার
দেয়া হয়ে
গেলে আমার
মজুরি গ্রহণ
করলাম এবং
ফের ধর্মশালায়
চলে এলাম। সেদিনই বিকালে
একজন ভাটিয়ার
সঙ্গে আমার
সাক্ষাৎ হয়।
ভাটিয়া মহাশয়
অনেক দিন
কলকাতায় ছিলেন
এবং তার
প্রথম পক্ষের
স্ত্রীও বাঙালি
থাকায় তার
সহূদয়তা আমার
প্রতি আপনি
এসে পড়েছিল।
তিনি বাংলা
বেশ ভালোই
জানতেন এবং
আফ্রিকায় গিয়েও
সাপ্তাহিক হিতবাদীর
গ্রাহক ছিলেন।
তিনি কয়েক
সংখ্যা হিতবাদী
আমাকে পড়তে
দিয়েছিলেন, এতে
আমার ভ্রমণকাহিনী
সমালোচনা ছিল। ভাটিয়া ভদ্রলোক
কচ্ছের অধিবাসী।
ঐতিহাসিক সংবাদ
ও স্থানীয়
সংবাদ তার
কাছ থেকে
প্রচুর পেয়েছিলাম।
৫০০ বছর
আগেও যে
এদিকে ভারতবাসীর
চলাচল ছিল
তার অনেক
নিদর্শনও আমাকে
দেখিয়েছিলেন। গোয়ার
ভারতবাসীরা কোনো
এক সময়ে
পর্তুগিজ অধিকারের
আফ্রিকা দখল
করে বসেছিল
তাও তারই
কাছ থেকে
শুনেছিলাম। পুরনো
ঐতিহাসিক ঘটনা
নিয়ে আমি
বেশি মাথা
ঘামাই না
দেখে ভাটিয়া
ভদ্রলোক একটু
দুঃখিত হলেন
বটে; কিন্তু
যখন তিনি
শুনলেন আমি
নিগ্রো ও
ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে
একত্রে বসবাস
করতে পক্ষপাতী,
তখন তার
আর আনন্দের
সীমা রইল
না। পরের
দিন তার
বাড়িতে আমার
খাবার নিমন্ত্রণ
করে আপ্যায়িত
করলেন। সেদিন
সন্ধ্যার আগে
সমুদ্রতীরে বেড়াতে
যাই। যেদিকে
নিগ্রোরা থাকে
সেদিকে চলেছি
দেখে সঙ্গের
ভারতীয়রা আমার
সংগ পরিত্যাগ
করল। আমি
আমার নিগ্রো
সাথীদের সঙ্গে
নিয়ে সেদিকেই
চললাম। পথের
দুদিকে সারি
দিয়ে পাতায়
ছাওয়া ঘর।
নিগ্রো জেলেরাই
সেখানে থাকে।
আমরা যখন
চলছিলাম তখন
আমাদের ডান
দিকে একটি
নিগ্রো ‘উদয়
শংকরী’ নৃত্য
করছিল। আমাকে
দেখেই লোকটা
আমার কাছে
দৌড়ে এসে
বলল, ‘তুমি
এদিকে কেন?
তুমি যাবে
সেদিকে, যেদিকে
ইউরোপীয়রা তোমাদের
পদাঘাত করে,
এদিকের সাগরজলে
ভয়ানক লবণ,
সাগরতীর দুর্গন্ধযুক্ত,
এদিকে এসো
না, তোমাদের
এতে ক্ষতি
হবে।’ আমার
সাথীদের দিকে
তাকিয়ে বলল,
‘এগুলো
বোধহয় তোমার
কেনা গোলাম,
নিশ্চয়ই কেনা
গোলাম।’ এ
বলেই লোকটা
ফের নাচতে
লাগল। তারু
আমাকে বলল,
‘বানা,
লোকটা পুলিশের
চোখে ধুলো
দিচ্ছে। এখানে
ইউরোপিয়ানদের বিরুদ্ধে
কথা বলে
নিগ্রোদের ক্ষেপিয়ে
তোলাই এর
কাজ, এর
কাছ থেকে
দূরে থাকাই
তোমার উচিত।’
কথা না
বাড়িয়ে সাগর
তীরের দিকে
আগিয়ে গিয়ে
জলের কাছে
বসে সূর্যের
শেষ কিরণটুকু
সাগরজলে কেমন
করে প্রতিবিম্বিত
হয়, তাই
দেখে ফের
ধর্মশালায় ফিরে
এলাম। রাত্রে কয়েকজন
বিশিষ্ট লোক
আমার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করতে
এলেন। তারা
এসেছিলেন আমাকে
উপদেশ দিতে।
নীলপদ্মের জন্মভূমি
কুল-মানজার
অর্থাৎ মান্দার
পর্বত দেখতে
আমাকে অনুরোধ
করলেন। কুল-মানজার
পর্যন্ত একটা
রেলপথ এখান
থেকে চলে
গিয়েছে। চিন্তা
করে দেখলাম
স্থানটা দেখলে
মন্দ হবে
না, হয়তো
ভালোই হতে
পারে, তাই
স্থানীয় লোকের
উপদেশ মতো
তারুকে নিয়ে
কুল-মানজারের
দিকে চতুর্থ
দিন রওনা
হই। এদিকে
নিগ্রোদের জন্য
তৃতীয় শ্রেণীর
এক প্রকার
কম্পার্টমেন্ট থাকে,
যাতে বসার
জন্য শুধু
চাটাই বিছিয়ে
দেয়া হয়।
আমাদের জন্য
দ্বিতীয় শ্রেণীর
কম্পার্টমেন্ট থাকে।
সেই কম্পার্টমেন্টে
ইউরোপিয়ানরা ভুলেও
আসে না।
আমি তারুকে
নিয়ে দ্বিতীয়
শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টেই
উঠলাম। তার
জন্যও দ্বিতীয়
শ্রেণীর টিকিটই
কিনেছিলাম। গাড়িতে ওঠার
পর তারুকে
নিয়ে মহাবিপদে
পড়লাম। ভারতীয়
চেকার তারুকে
কোনোমতেই দ্বিতীয়
শ্রেণীতে বসতে
দেবে না।
শেষটায় আমিও
স্বরূপ ধরলাম।
তোমার আইন
তোমার কাছে
রাখো, নতুবা
মেরে হাড়
ভেঙে দেব,
যখন বললাম
তখন লোকটার
চৈতন্য হলো।
চেকার আমাকে
‘কংগ্রেসি’
বলে গালি
দিয়ে গাড়ি
ত্যাগ করল। ঠিক সন্ধ্যার
সময় গাড়ি
সিসেল বাগিচার
ভেতর দিয়ে
কুল-মানজার
স্টেসনে গিয়ে
পৌঁছল। তখন
বৃষ্টি পড়ছিল
প্রবল বেগে।
তারু আমাকে
স্টেশনে বসিয়ে
স্থানীয় ধর্মশালায়
গিয়ে স্থান
করে এল।
আমি যথাসময়ে
পৌঁছে ধর্মশালায়
উপস্থিত হলাম।
তারু আমার
সুখ-সুবিধার
ত্রুটি করল
না। পরের
দিন সকালে
আমরা গ্রাম
বেড়াতে বের
হলাম। গ্রামে
প্রায় দোকানদারই
ভারতীয় আগাখাঁনী
মুসলমান। তারা
হিন্দুদের মতোই
নানা রূপ
অন্ধ ধারণা
পোষণ করে,
সেজন্যই অনেকে
নীলপদ্ম সম্বন্ধে
নানারূপ গল্প
বলতে লাগল।
কেউ বলে
পাহাড়ের ওপর
থেকে নীলপদ্ম
বাতাসে ছিঁড়ে
নিয়ে আসে
আর কেউ
বলে নীলপদ্ম
কুল-মানজার
পর্বতের ওপরে
একটি সরোবরে
জন্মে, যারা
পুণ্যাত্মা তারাই
নীলপদ্ম দেখতে
পায় অন্য
কেউ দেখতে
পায় না।
আমি নীলপদ্ম
দেখার আর
চেষ্টা করলাম
না। এখানকার প্রায়
লোকই সামনের
দাঁতগুলোকে বিড়ালের
ধাতের মতো
ধারাল করে।
এদের দাঁত
দেখেই অনেকে
রামায়ণ সৃষ্টি
করে ফেলে।
সংবাদ নিয়ে
জানলাম এটা
এদের একটা
ফ্যাশান মাত্র।
এখানকার লোক
নরমাংস কখনো
খেয়েছে বলে
আজ পর্যন্ত
কেউ শোনেওনি।
ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ার জন্য পাহাড়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সাড়ে সাত হাজার ফুট একদম খাড়া পাহাড়টিতে ওঠা বড় সোজা কথা নয়। পাহাড়ের অগ্রভাগ তখনো বরফে ঢাকা ছিল অথচ পাহাড়ের নিচে অনবরত ট্রপিক্যাল বৃষ্টি হচ্ছিল। জনকয়েক জার্মান সিসেল ক্ষেত্রের মালিকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তারাও ব্রিটিশ প্রথামতে ভারতবাসীকে কেরানী, অ্যাকাউন্ট্যান্ট এসব কাজে নিযুক্ত করেই ভারতবাসীকে সুখী রাখে, মন খুলে কথা বলতেও ঘৃণা বোধ করে। সেজন্য যে কয়জন জার্মানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তারা নীলপদ্মের কথা আমার কাছে বলা দূরে থাক, তাদের বাংলো হতে যাতে আমি চলে যাই, সেজন্য সামান্য দু-এক কথা বলেই বিদায় দিয়েছিল। লজ্জায় ও ঘৃণায় আমার মন এত দুর্বল হয়েছিল যে নীলপদ্মের কথা ভুলে গিয়ে ফেরত গাড়িতে সেদিনই টাংগাতে ফিরে এসেছিলাম। তবে নীলপদ্ম বলে এক রকমের পদ্ম আছে এ কথা অতি সত্য। টাংগানিয়াকায় যখন ভ্রমণ করছিলাম তখন কয়েকজন গরিব জার্মান এবং একজন জার্মান ডাক্তার আমাকে নীলপদ্ম দেখিয়েছিলেন। পদ্মগুলোর পাপড়ি গাঢ় নীল এবং সহজে শুকিয়ে যায় না। ১০০ শিলিংয়ে তারা একটি পদ্ম বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলেন। আমি কিন্তু ৬৫ টাকা সেজন্য খরচ করতে রাজি ছিলাম না।