বিশেষ সংখ্যা

আলোচিত বাংলাদেশী উদ্যোক্তা

কেনিয়ায় ম্যাকাডেমিয়া বাদাম ফ্যাক্টরি

কেনিয়ায় মোহাম্মদ খানের ম্যাকাডেমিয়া বাদাম প্রসেসিং ফ্যাক্টরি (বাঁয়ে)। তার কোম্পানির নাটিস ল্যান্ড ব্রান্ডের তেল (ইনসেটে)

পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ কেনিয়া। প্রবাসজীবনের গন্তব্য হিসেবে দেশের নাম ভাবতেই পারেন না অনেক বাংলাদেশী। কেনিয়া নিয়ে অনেকের ভাবনা এটি একটি ডার্ক কন্টিনেন্ট, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে এমন সব মন্তব্যে সীমাবদ্ধ। এসব কারণেই এখন পর্যন্ত খুব কমসংখ্যক বাংলাদেশীর বাস কেনিয়ায়। কিন্তু সেখানে যে সম্ভাবনার কতগুলো দুয়ার রয়েছে তা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন উইশ কেনিয়া লিমিটেডের ডিরেক্টর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ খান। কেনিয়ায় ম্যাকাডেমিয়া বাদামের ফ্যাক্টরি স্থাপন করে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হন খান। ২০১০ সালে ব্যবসায় ভাগ্য গড়তে কেনিয়ায় পা রাখেন মোহাম্মদ খান। তারপর গড়ে তোলেন তার বাদাম ফ্যাক্টরির রাজত্ব। অনেকেই বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা বিষয়ে জানেন না, মনে করেন এগুলো বিলাসবহুল পণ্য। এই বাদামের যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে প্রবল তেমনই রয়েছে সরবরাহস্বল্পতা। তাতেই বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ বাড়ে মোহাম্মদ খানের। সে সুযোগ অবশ্য তিনি ছাড়েননি। ম্যাকাডেমিয়া বাদাম থেকে তৈরি করেন নানা পণ্য এবং চেষ্টা করেন মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করার। ম্যাকাডেমিয়া বাদাম থেকে তেল তৈরির ক্ষেত্রে সব পর্যায়েই মান বজায় রাখার চেষ্টা করেন খান। এমনকি তৈরি প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো ধরনের দূষণ বা মানের ঘাটতি এড়াতে এই ফ্যাক্টরি ভিজিটিংয়ের ক্ষেত্রেও মেনে চলা হয় বিশেষ সতর্কতা। অনেক বিচার-বিশ্লেষণ শেষে পেশা বেছে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ খান। দীর্ঘ সময় কেনিয়ায় ম্যাকাডেমিয়া নিয়ে কাজ করা খান নিশ্চিত করেন, অন্যান্য দেশে যেসব ম্যাকাডেমিয়া উৎপাদন হয় সেগুলোর তুলনায় কেনিয়ার ম্যাকাডেমিয়া অনেক ভালো। কারণ ওসব দেশের ম্যাকাডেমিয়ায় অনেক কেমিক্যাল যুক্ত থাকে যেটা কেনিয়ারটায় থাকে না। ওসব পরিষ্কার করতে গিয়ে ম্যাকাডেমিয়ার কিছু অত্যাবশ্যক পুষ্টিও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ম্যাকাডেমিয়া, সেটিকে ঘিরে নিজের ব্যবসাজীবন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সফর এবং আগামী প্রজন্মের জন্য নিজের বক্তব্য নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে আরো বিস্তারিত কথা বলেছেন কেনিয়াপ্রবাসী মোহাম্মদ খান। শুনেছেন শানজিদ অর্ণব।

 

গন্তব্য হিসেবে কেনিয়া বাংলাদেশীদের জন্য খুব জনপ্রিয় নয়। আপনি কেনিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন?

গল্পটা অনেক বড়। সংক্ষেপে যদি বলি, এর সঙ্গে দুটো বিষয় জড়িত ছিল। এক. আর্থিক সক্ষমতা, দুই. স্বপ্ন। আমি ছোটবেলা থেকেই যখন পড়াশোনা করতাম তখন টেক্সট বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়তাম। সেসব বইয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন গল্পকথা চলে আসে। তখন সেই বয়স থেকেই আমার মাথায় প্রশ্ন ঘুরত উন্নত বিশ্বের উন্নত জীবনযাপন রেখে মানুষ কেন আফ্রিকায় আসে! তার মানে এখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা আছে। বিভিন্ন বইয়ের বিভিন্ন গল্পের এসব বিষয় আমাকে উৎসাহিত করেছে। একসময় চিন্তা করলাম দেশের বাইরে যাব, ব্যবসা-বাণিজ্য করব। যেহেতু আমি একজন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, বাবা সরকারি কর্মচারী ছিলেন। সেখানে আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টা চলে আসে। আমার পরিবারের পক্ষে উন্নত বিশ্বে যাওয়ার খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। এজন্য আমি চিন্তা করলাম আফ্রিকাতেই শুরু করি। তবে আমার প্রথম আসা কেনিয়ায় না। কেনিয়া আসার আগে আমি বতসোয়ানা জিম্বাবুয়েতে ছিলাম।

কেনিয়ায় বাংলাদেশী হিসেবে আপনার শুরুর দিনগুলো কেমন ছিল?

যেহেতু আমার আফ্রিকায় আসা ২০০০ সালে এবং কেনিয়ায় আসা ২০১০ সালে। ১০ বছর ধরে আফ্রিকায় আমার একটা অভিজ্ঞতা আছে। সে হিসেবে আমার জন্য খুব কঠিন কোনো বিষয় ছিল না। আমি পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছুতেই অভ্যস্ত ছিলাম। এখানকার মানুষের আচার-আচরণ থেকে শুরু করে খাবার-দাবার দৈনন্দিন জীবনযাপনের যে স্টাইল আছে, সেটির সঙ্গে আমি অভ্যস্ত ছিলাম। সেজন্য আমার খুব বেশি সমস্যা আসলে হয়নি। 

আপনি কেনিয়ায় ম্যাকাডেমিয়া বাদামের ফ্যাক্টরি স্থাপন করে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত। উদ্যোগের শুরুর গল্পটা জানতে চাই।

গল্প আসলে একটু পেছনে গিয়ে বলতে হবে। আমি যখন জিম্বাবুয়েতে ছিলাম, সেখানে আমি কৃষি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমার একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিল, সে কেনিয়ান। সে আমাকে উৎসাহিত করল কেনিয়ায় আসার জন্য। জিম্বাবুয়েতে তখন অর্থনৈতিক রাজনৈতিক একটা সমস্যা যাচ্ছিল, তাই আমিও চিন্তা করছিলাম আফ্রিকার অন্য কোন দেশে যাওয়া যায়। আমি যাচ্ছিলাম অবশ্য জিম্বাবুয়েতে, তখন এখানে ট্রানজিটটা নেয়ার কারণে আমি কেনিয়ায় কয়দিন থাকার সিদ্ধান্ত নিই। এখানে নেমে আসলে কিছু বিষয় আমাকে অন্যভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে। কেনিয়ায় একদিন আমি ঘুরতে বের হলাম। আমার মনে হয় আপনি যদি কোথাও ঘুরতে যান, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যদি না মেশেন তাহলে তাদের জীবনযাপন, সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থার একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় না। সেজন্য আমি যখনই বাইরে যাই, তখনই রাজধানী শহর থেকে বাইরে একটু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মেশার চেষ্টা করি। কারণ আমার মনে হয় রাজধানী শহর সব দেশেরই একটা ফ্যাব্রিকেটেড শহর, সেখান থেকে আসলে সঠিক ধারণাটা পাওয়া যায় না। সে ভাবনা থেকেই আমি নাইরোবি থেকে একটু বাইরের দিকে গেলাম। তখন হাইওয়ে রাস্তায় কাজ চলছিল। সেটিকে এখন বলা হয় থিকা সুপার হাইওয়ে। যেহেতু সুপার হাইওয়ে, তাই সেখানে ব্যাপক একটা কর্মযজ্ঞ চলছিল। তখন আমার চিন্তাটা একটু অন্যভাবে এল। আমার জানামতে, সাধারণত কোনো দেশের ক্যাপিটাল সিটি থেকে যে রাস্তাগুলো যায় তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর রাস্তাটা হয় পোর্ট সিটির সঙ্গে। কিন্তু এখানে দেখলাম ঠিক উল্টোদিকে একটা রাস্তা হচ্ছে, যেটিকে বলা হচ্ছে থিকা সুপার হাইওয়ে। তখন আমার মাথায় চিন্তা এল, পোর্ট সিটিকে প্রাধান্য না দিয়ে যেদিকে এত ভালো রাস্তা করা হচ্ছে সেখানে নিশ্চয়ই কোনো অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত আছে। তখন আমি দেখলাম এখানে অর্থনৈতিক সুযোগ কী কী রয়েছে। তারপর আমি খুঁজে দেখলাম, সত্যিই এখানে ডেলমন্টে জুস এক্সপোর্টার কোম্পানির একটি পাইনঅ্যাপল প্রসেসিং ফ্যাক্টরি আছে, সেটি অনেক বড়। এরপর আমি শুরু করলাম অন্য কী আছে? দেখলাম অঞ্চলে চা কফি উৎপাদন হয়। একে বলা হয় মাউন্ট কেনিয়া রিজিয়ন। সেই সঙ্গে খুঁজে পেলাম একটা জিনিস, তা হলো ম্যাকাডেমিয়া। এর আগে ম্যাকাডেমিয়া কী সেটা আমি জানতাম না। আমার আসলে ম্যাকাডেমিয়ার শুরু সেখান থেকে। এরপর আমি পড়াশোনা করে দেখলাম পৃথিবীর হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি দেশ ম্যাকাডেমিয়া নাট উৎপাদন করে। এর আরেক নাম কুইন্সল্যান্ড নাট, অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড এর উত্পত্তিস্থল। সেখান থেকে হাওয়াই, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া এর বড় উৎপাদক দেশ। তাছাড়া মালাও, ব্রাজিল গুয়াতেমালাও কিছু করে। এরপর আমি দেখলাম এর স্বাস্থ্য উপকারিতা কী, এরপর দেখলাম দাম। সে সময় আমার একটি ফ্যাক্টরি ভিজিট করার সুযোগ হয়। সব মিলিয়ে আমি দেখলাম এটির চাহিদা বাড়ছে, স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রচুর। এছাড়া এটি উৎপাদনে অনেক সময় লাগে, প্রসেসিং জটিল। যে জিনিসের উৎপাদনে সময় বেশি লাগে এবং প্রসেসিং জটিল সেটার একটা সম্ভাবনা আছে। মানে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সে পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে না। এসব চিন্তা করে আমার ম্যাকাডেমিয়া সেক্টরে আসা। শুরুতে খুবই ছোট পরিসরে শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে বড় করি। যেহেতু এটি এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড, তাই ফুড সেফটির বিষয়টি পুরোপুরি মেইনটেইন করা হয়। প্রথমে আমার ফ্যাক্টরি হাসাব সার্টিফায়েড করা হলো, তারপর আইএসও ২২০০০ সার্টিফায়েড। আর এখন এফএসিসি ২২০০০ সার্টিফায়েড এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড ফ্যাক্টরি রান করছি আমি। 

আপনার ফ্যাক্টরি প্রডাক্ট সম্পর্কে পাঠকদের আরো বিস্তারিত কিছু জানান।

ম্যাকাডেমিয়া নাট, এটা আমরা -ফর্মে এক্সপোর্ট করি নর্থ আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। যেমন জাপান, তাইওয়ান, ওদিকে কিছু প্রডাক্ট যায়। এটা যখন ইনিশিয়াল ফর্মে আসে তখন আমরা বিভিন্ন স্টেজে প্রসেস করে ভেতর থেকে কানেলটা বের করে বিভিন্ন গ্রেড তৈরি করি। এর অন্তত আটটা গ্রেড আছে। এসব গ্রেড করে এক্সপোর্ট করি। যেহেতু এটির স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, আমি আমার পরিবার এর উপকার পাওয়ার পরে চিন্তা করলাম, মোরাল অবলিগেশন থেকে আমি যে দেশে থাকি সেখানকার মানুষের জন্য কিছু করা দরকার। আমরা এক্সপোর্টের পাশাপাশি লোকাল বাজারেও বিক্রি শুরু করি। যদিও পরিমাণ খুব কম। সেজন্য ড্রাই রোস্টেড সল্টেড ম্যাকাডেমিয়া তৈরি করি আমরা, রিটেইল প্যাকেটে। এছাড়া আমরা ম্যাকাডেমিয়া অয়েল তৈরি করছি লোকাল মার্কেটের জন্য, যা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কুকিং অয়েল। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিউট্রিয়েন্টের বিষয়গুলোয় তা বোঝা যায়। এটা ৭৫০, ৫০০ ২৫০ মিলির বোতল আকারে পাওয়া যায়। আর এক্সপোর্টের জন্য যেটা তৈরি করা হয় সেটা নির্ভর করে ক্লায়েন্টের চাহিদার ওপর। আমরা সাধারণত ১৯৪ লিটারের স্টেইনলেস স্টিল ফুডগ্রেড মেটাল ড্রামে করে সেটা এক্সপোর্ট করি। আর বাল্ক প্রডাক্ট যেটা এক্সপোর্ট হয় সেটা ১১ দশমিক ৩৪ কেজি বা ২৫ পাউন্ড নাইট্রোজেন প্লাস্ট অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে প্যাক করে এক্সপোর্ট করা হয়। 

আপনার ফ্যাক্টরিতে কি স্থানীয়রাই কাজ করেন, নাকি বাংলাদেশীরাও আছেন?

আমার ফ্যাক্টরিতে গত মাস পর্যন্ত দুজন বাংলাদেশী ছিলেন। এখন একজন চলে গেছেন বাংলাদেশে, আরেকজন আছেন। স্থানীয় ৪৫০ জনের বেশি কাজ করেন একটি ফ্যাক্টরিতে।

আপনি তো পণ্য রফতানিও করেন? বাংলাদেশেও কি রফতানি করছেন?

আমরা আসলে ৯৭ শতাংশ এক্সপোর্ট করি। সর্বোচ্চ - শতাংশ লোকাল মার্কেটের জন্য রাখা হয়। বাংলাদেশে এটি রফতানি করা হয়েছে। বাংলাদেশে ম্যাকাডেমিয়া নাট গিয়েছে যার নাম নাটিস ল্যান্ড। বাংলাদেশের টি আর ট্রেড নামের একটি কোম্পানি আমাদের প্রডাক্ট মার্কেটিং করছে। বাংলাদেশে ম্যাকাডেমিয়া নাটস আছে, তারপর ম্যাকাডেমিয়া অয়েল ক্যাশু নাট, সেই সঙ্গে কেনিয়ার বিখ্যাত চা কেরিচো গোল্ডও বাংলাদেশের বাজারে রফতানি করা হচ্ছে। কেরিচো গোল্ডের ৪২ ফ্লেভারের চা রয়েছে।

আপনার কোম্পানির টার্নওভার সম্পর্কে বলা যাবে?

করোনা মহামারীর কারণে তো সবই একটু আপস অ্যান্ড ডাউনস হয়েছে। তবে আমাদের কোম্পানির মোট টার্নওভার প্রতি বছর ১০-১৫ মিলিয়ন ডলার। আমাদের নতুন একটি ক্যাশু নাটের ইউনিট শুরুর পর্যায়ে আছে। এটি হয়তো দুই মাসের মধ্যে অপারেশনাল হবে। সেটি যদি হয় তাহলে আমাদের টার্নওভারের মধ্যে বছরে আরো - মিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে।

কেনিয়ায় আরো কী কী করার পরিকল্পনা আছে?

যদিও আমি  ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত কাজকর্ম করি, কিন্তু আমার হূদয় মাটির কাছে ফিরতে চায়। আমি এখানকার কৃষিতে যুক্ত হতে চাচ্ছি। সেক্ষেত্রে গ্রাউন্ড নাট, পিনাট বা চীনাবাদাম যেটি বলি, সেটি বড় পরিসরে করার চিন্তাভাবনা আছে। আমার সিসেমি বাংলাদেশে যেটা তিল, সানফ্লাওয়ার সিড অয়েল করারও চিন্তা আছে। লোকাল মার্কেটে আমরা প্রায় দুই বছরের মতো হলো এটি করছি। যেহেতু আমি ফুড রিলেটেড বা এগ্রো প্রসেসিং খাতে জড়িত, সেক্ষেত্রে আমি আসলে ফুড নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। সেখানে হয়তো স্পাইস আসবে, এসেনশিয়াল তেল নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। আমি আরো বড় পরিসরে ফার্মিংয়ের চিন্তাভাবনা করছি।

কেনিয়ায় আপনার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

আমি আসলে অনেক বছর দেশের বাইরে বসবাস করছি। সব মিলিয়ে ২০ বছরের বেশি। আমার পরিবারের তিনজন এখানে। আমি, আমার স্ত্রী আর এক মেয়ে। তবে মনের দিক দিয়ে আমি বাংলাদেশকে ধারণ করি। একজন সাধারণ বাংলাদেশীর জীবনযাপন যেমন এখানে আমার জীবনযাপনও তেমনই।

কেনিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের সংখ্যা কেমন? তাদের জীবন সম্পর্কে আপনার কাছে শুনতে চাই।

এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশী খুব কম। সংখ্যাটা প্রায় ১৫০। এখানে যারা আছেন বেশির ভাগই হাইলি প্রফেশনালস। যেমন জাতিসংঘে চাকরি করেন এমন। এছাড়া স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস মাইক্রোফাইন্যান্স আশার কিছু লোকজন আছেন। বাকিরা প্রফেশনাল আর গাড়ির ইমপোর্টার কয়েকজন আছেন। তবে কমন বিজনেস প্র্যাকটিসে আমাদের বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ খুবই কম।

তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

তরুণ প্রজন্মের মনে দেশের বাইরে যাবে, পড়াশোনা করবে, চাকরি করবে এমন স্বপ্ন থাকে। আমি তাদের বলব, আফ্রিকাকে টার্গেট করো। এখানে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সে হিসেবে এখানে চ্যালেঞ্জ কম। আমরা মিডিয়ায় দেখি যে অনেকে বলে ডার্ক কন্টিনেন্ট, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে, এসব কথা আসলে সর্বতোভাবে ঠিক নয়। আফ্রিকার একটি দেশ থেকে অন্য দেশের অনেক পার্থক্য। সামাজিক বিষয়, জীবনাচরণ, অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ভেতরে অনেক পার্থক্য। দেশ থেকে দেশের ভিন্নতা অনেক। এখানে অনেক কিছু করার সম্ভাবনা আছে। এটা একটা ট্রানজিট পয়েন্ট হতে পারে। কেউ এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে, নিজের ফিল্ডে স্ট্রং হয়ে অন্য কোথাও যেতে পারে। তবে আমার দেখামতে, যারা আফ্রিকায় স্ট্যাবলিশ হয়ে যায়, তারা অন্য কোথাও যেতে চায় না। হয়তো ঘুরতে যেতে চায়, সেটল হতে নয়। এটি অনেক বড় মহাদেশ। আগামী শতাব্দীতে পৃথিবীকে খাবারের জোগান দেবে আফ্রিকা। বিশেষ করে কৃষি খাতে। তার পাশাপাশি বাণিজ্য, ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে এখানে প্রচুর সুযোগ। এখানকার মানুষ অনেক বন্ধুভাবাপন্ন। আর আমরা যে সিকিউরিটির কথা বলি, সেটি পৃথিবীর অনেক দেশেই রয়েছে। সেসব চাইলে মেইনটেইন করে এখানে সুন্দরভাবে চলা সম্ভব।