বিশেষ সংখ্যা

মোজাম্বিকে বাস করছেন ১৫ হাজার বাংলাদেশী

আবু তাহের


দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে বাস করেন প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশী। এক দশক ধরে এসব বাংলাদেশী সেখানে বসবাস করছেন। মূলত দালালের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দিতে মোজাম্বিক থেকে আর বের হতে পারেননি এসব বাংলাদেশী। এক পর্যায়ে দেশটির একটি অঞ্চলে কৃষি খাতে কাজ করে জীবিকা অর্জন করছেন। বর্তমানে মোজাম্বিকের মকুবা শহরে আশপাশে কৃষি খাতে দাপটের সঙ্গে সফলতা পেয়েছেন।

মোজাম্বিকের মকুবা অঞ্চলে দীর্ঘ এক দশক ধরে বসবাস করছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এসএম হালিম। স্থানীয় বাসিন্দারের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে নিজেই সেসব জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি। মূলত সরিষা বাদাম উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী ফসলের বীজের ব্যবসা করে সেখানে খ্যাতি অর্জন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসী হালিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কর্মসংস্থানের জন্য দালালের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার জন্য মোজাম্বিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে আর দক্ষিণ আফ্রিকায় তাকে পৌঁছে দেয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন সেখানে থেকে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে সেখানকার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মোজাম্বিক মূলত কৃষিজ অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া ক্রমবর্ধমান শিল্প, খাদ্য, পানীয় রাসায়নিক পেট্রোলিয়াম উৎপাদন দেশ হিসেবে মোজাম্বিকের পরিচিতি রয়েছে। এছাড়া পর্যটন খাতে দেশটি ব্যাপক সম্ভাবনাময়। দক্ষিণ আফ্রিকা হলো মোজাম্বিকের ব্যবসায়িক প্রধান অংশীদার। এছাড়া সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের প্রধান উৎস বেলজিয়াম, ব্রাজিল, পর্তুগাল স্পেন। মোজাম্বিক মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানাবর্তী দেশ। দালালরা মোজাম্বিককে রুট হিসেবে ব্যবহার করে। পথ ধরে মোজাম্বিকসহ বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। অন্যদিকে যারা যেতে পারেন না তারা মোজাম্বিকে থেকে জীবিকার পথ খোঁজার চেষ্টা করেন। গত এক দশকে মোজাম্বিকে যে ১৫ হাজার বাংলাদেশী পৌঁছেছেন, তারা সবাই অবৈধপথে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার উদ্দেশে দেশটিতে পাড়ি দিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্য়ের বিষয় মোজাম্বিকে যারা গিয়েছেন, তারা সবাই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। মোজাম্বিকে অভিবাসনের ৮০ শতাংশই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। একই অঞ্চলের কীভাবে সবাই মোজাম্বিকের মকুবা শহরে পৌঁছেছে জানতে চাইলে মোজাম্বিক প্রবাসী মাওলানা শামসু বলেন, মূলত এখানে সবাই একে অন্যের আত্মীয়। সম্পর্ক ধরেই যোগাযোগ করে মোজাম্বিকে পৌঁছেছেন তারা। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা দুটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, যারা মোজাম্বিকে গিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই উদ্দেশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেয়া। এজন্য তারা দালালের হাতে ১০-১৫ লাখ টাকা করে দিয়ে মোজাম্বিক পর্যন্ত গিয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন বন-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছেন। আফ্রিকার ১৬টি দেশে পাসপোর্ট ছাড়াই বাংলাদেশীরা প্রবেশ করতে পারেন। তার মধ্যে একটি দেশ হলো মোজাম্বিক। দক্ষিণ আফ্রিকার পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় অনেকে মোজাম্বিকে যাচ্ছেন। বিশেষ করে দেশটির কৃষি খাতে বাংলাদেশীদের সাফল্য উঠে আসায় অনেকে দেশটিতে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন।

 

আবু তাহের: সাংবাদিক