কোম্পানি পেইন্টিংয়ের
আগে মূলত
মোগল পৃষ্ঠপোষকতায়
ভারতীয় চিত্রকর্মে
পশ্চিমা প্রভাব
পড়েছিল। বিশেষত
আকবর এবং
পরবর্তী মোগল
বাদশাহদের সময়ে
বইয়ের পাণ্ডুলিপিতে
মিনিয়েচার করানো
হতো। এছাড়া
রাজপুতরা নিজেদের
পোর্ট্রেট করিয়ে
রাখতেন। মোগল
আমলে পারস্যের
মিনিয়েচার জনপ্রিয়
হওয়ার পাশাপাশি
এ সময়
থেকে ভারতে
ইউরোপীয় বেনিয়াদের
আগমন, ব্যবসা
ও ব্যবসার
প্রসারের কারণে
চিত্রকলায়ও তাদের
প্রভাব পড়ে।
পরবর্তী সময়ে
কলকাতা, মাদ্রাজ,
দিল্লি, লক্ষৌ,
পাটনা ও
ব্যাঙ্গালোরে কোম্পানির
কার্যালয় তৈরি
হলে এসব
অঞ্চলেই চিত্রকলার
বাড়বাড়ন্ত দেখা
যায়। এসব
কোম্পানি পেইন্টিংয়ের
বেশির ভাগের
বিষয়বস্তু ছিল
পশু-পাখি।
এছাড়া তাদের
দিয়ে প্রকৃতি,
প্রতিকৃতি ও
ভারতীয়দের চিত্রও
তৈরি করানো
হয়েছিল। তবে এ
ধরনের চিত্র
ও চিত্রকররা
ততটা জনপ্রিয়
হননি। না
হওয়ার একটি
অন্যতম কারণ
এ চিত্রগুলো
পোর্টফোলিও বা
অ্যালবামে রাখা
হতো। কাজগুলো
বেশির ভাগই
ছিল ব্যক্তি
উদ্যোগের। তাই
প্রদর্শনীর কোনো
ব্যবস্থা ছিল
না। পরবর্তী
সময়ে ক্যামেরা
আসার পরপর
এ ছবিগুলোর
কাজ বন্ধ
হয়ে যায়।
ছবিগুলো চাপা
পড়ে থাকে
ব্যক্তিগত সংগ্রহে
বা সংগ্রহশালায়।
কিন্তু ভারতের
চিত্রকলার ইতিহাসে
এ ধারা
ও চিত্রকরদের
নিয়ে আলোচনা
হওয়া প্রয়োজন।
এ লেখায়
ভারতীয় চিত্রকলার
এ ধারা
এবং বিস্মৃত
শিল্পীদের নিয়ে
আলোচনার চেষ্টা
করা হবে। শেখ মোহাম্মদ আমীর কারিয়াহ ব্রিটিশরাজের
সময়কার একজন
চিত্রকর শেখ
মোহম্মদ আমীর।
তিনি আমীর
কারিয়াহ নামে
পরিচিত। ঊনবিংশ
শতাব্দীর এ
শিল্পীর গুণ
১৮৩০-৪০
খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী
সময়ের প্রকাশিত
হয়। তার
চিত্রকর্মের সামান্যই
বর্তমানে পাওয়া
যায়। কিন্তু
সে সামান্য
কাজ থেকেই
সনাতন ভারতীয়
শিল্প ও
পশ্চিমা শিল্পের
মধ্যে পার্থক্য
করা যায়।
ব্রিটিশরা যেখানেই
উপনিবেশ স্থাপন
করেছে সেখানে
নিজেদের সংস্কৃতি
প্রচার করার
সর্বোচ্চ চেষ্টা
করেছে। পরিপার্শ্ব
থেকে নিজেরা
গ্রহণ করেনি।
ভারতে ব্রিটিশ
উপনিবেশের ক্ষেত্রেও
ভিন্ন কিছু
হয়নি। ‘সভ্য
করে তোলা’র
নামে তারা
নিজেদের অভ্যাস
ও আচার
বপন করেছে
প্রতিটি উপনিবেশে।
এর ফলে
ভারতে নতুন
নীতি, ধারণা,
যোগাযোগ ব্যবস্থায়
নতুন যান
ও মাধ্যম
তৈরি হয়েছিল।
ক্রমে এসব
যান, ব্যবস্থা
ও জীবনের
নানা অনুষঙ্গ
চিত্রকররা ‘সাবজেক্ট’
হিসেবে বেছে
নিতে থাকেন।
এর মধ্যে
এক ঘোড়ায়
টানা একটি
দ্বিচক্রযানের ছবি
দেখা যায়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর
শুরুর দিকে
ইংরেজরা এ
ধরনের দ্বিচক্রযান
ভারতে এনেছিল।
নিশ্চিত করে
বলা যায়
না যে
শেখ মোহাম্মদ
আমীরই এ
ছবির চিত্রকর,
কিন্তু এটি
নিশ্চত যে
ব্রিটিশ অনুষঙ্গ
তিনি ভারতীয়
ধারার চিত্রের
মাধ্যমে উপস্থাপন
করেছিলেন। শেখ মোহম্মদ
আমীর মূলত
গৃহ এবং
কর্মীদের চিত্রিত
করার বিশেষভাবে
মনোযোগ দিয়েছিলেন।
পাশাপাশি তিনি
কিছু গৃহপালিত
পশুদেরও তার
ছবির বিষয়
হিসেবে নির্বাচিত
করেন। ব্রিটিশরা
ভারতে ঘোড়ার
প্রয়োজনীয়তা জানতেন।
তারা যাতায়াত
ও নানা
কাজে ঘোড়া
ব্যবহার করতেন।
নানা জাতের
ঘোড়া তাই
আমীরের চিত্রের
বিষয়বস্তু হয়ে
ওঠে। এর
মধ্যে একটি
হলো এক
সহিসের হাতে
দুই ঘোড়ার
লাগাম ধরা
একটি ছবি।
হ্যাট মাথায়
সহিসটির গায়ে
রেশমের পোশাক
থাকলেও তাকে
ভারতীয় বলে
শনাক্ত করা
যায়। ছবি
থেকেই বোঝা
যায় ঘোড়াগুলো
কৃষিকাজে ব্যবহূত
হতো না।
এগুলোকে কোনো
না কোনো
টাঙায় (দ্বিচক্রযান)
যুক্ত করার
জন্য তৈরি
করা হচ্ছিল। আরেকটি ছবিতে
ঘোড়াকে সহিসের
সঙ্গে দেখা
যায়। ঘোড়টি
জমিতে কাজে
ব্যবহার করা
হতো। ঘোড়াটির
গলার দড়ি
এবং সহিসের
সাধারণ পোশাকআশাক
এ বিষয়টি
নির্দেশ করে।
শেখ মোহাম্মদ
আমীর এখানে
ঘোড়া ও
মানুষের অবয়বের
পাশে ছায়া
দেয়ার মাধ্যমে
ত্রিমাতৃক দৃশ্য
তৈরির চেষ্টা
করেছেন। দৃষ্টিগ্রাহ্য
আরেকটি ব্যাপার
হলো পটভূমির
তুলনায় সাবজেক্টগুলো
আকারে বেশ
বড়। পটভূমি
ও সাবজেক্টের
আকারের বিষয়টি
টু
ডগস ইন
দ্য কম্পাউন্ড অব আ
ক্যালকাটা হাউজ
আরো
স্পষ্ট করে
তোলে। ছবিতে
দুটি কুকুর—জেনারেল
নামে একটি
পশমি সালুকি
(পুরুষ) ও
আইয়ার নামে
একটি পশমহীন
সালুকি (মাদি)
কুকুর দেখা
যায়। এখানে
ছবিটি যে
দৃশ্য ও
ধারা প্রকাশ
করে তা
কোনোভাবেই দেশীয়
নয়, বরং
এ ছবিতে
ইউরোপীয় প্রভাব
স্পষ্ট। মানুষকে সাবজেক্ট
হিসেবে নেয়ার
ক্ষেত্রে শেখ
আমীর কেবল
দেশীয়দের বেছে
নিয়েছেন। তবে
এক্ষেত্রে দেশীয়রা
মূলত ছিলেন
ইংরেজদের ভৃত্যস্থানীয়।
অবশ্য একটি
ছবিতে এক
ইংরেজ শিশুকে
তিনি এঁকেছেন।
ছবিতে একটি
ঘোড়ার পিঠে
কন্যাশিশুটিকে দেখা
যায়। শিশুটির
সঙ্গে ছিলেন
তিনজন ভৃত্য।
একজন তার
মাথায় ছাতা
ধরে আছেন,
একজনের হাতে
ঘোড়ার লাগাম
এবং আরেকজন
শিশুটিকেই ধরে
আছেন। এ
ছবি থেকে
কয়েকটি বিষয়
ধারণা করা
যায়। প্রথমত,
ইংরেজ ঘরের
দেশীয় ভৃত্যরা
ইংরেজ পরিবারের
নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতেন। অন্যদিকে
বলা যায়
ইংরেজরা তাদের
শিশুদের জন্য
আলাদা করে
একাধিক ভৃত্য
রাখত। ছবিটির
একটি বৈশিষ্ট্য
হলো শিশুটির
অবয়ব দেয়া
হলেও তার
মুখ এবং
এমনকি হাত-পা
দৃশ্যমান নয়।
কাপড় দ্বারা
তার এ
অঙ্গগুলো ছবিতে
আবৃত। বিশ্লেষকদের
এক্ষেত্রে দুটি
মত রয়েছে।
প্রথমত, শেখ
আমীর ইংরেজ
পরিবারের প্রতি
সম্মান দেখাতে
শিশুটির শরীর
প্রদর্শন করেননি।
আরেকটি মত
হলো ইংরেজরা
ভারতের ওপর
শাসন ফলাচ্ছে,
এ বিষয়টির
প্রতিবাদ করেছিলেন
আমীর। তবে
প্রথমটিই অধিক
সমর্থিত। শেখ জয়েন
উদ্দিন জয়েন
উদ্দিন ছিলেন
মূলত পাটনার
অধিবাসী। তার
জীবন সম্পর্কে
খুব বেশি
কিছু জানা
যায় না।
প্রথম জীবনে
এ শিল্পী
মোগল মিনিয়েচারে
প্রশিক্ষণ লাভ
করেছিলেন। কিন্তু
তিনি এলিজা
ইম্পে ও
লেডি ইম্পের
জন্য আঁকা
চিত্রকর্মের জন্য
অধিক পরিচিত।
ইম্পে ও
তার স্ত্রী
মেরি ইম্পে
(১৭৪৯-১৮১৮)
ভারতীয় নানা
গাছগাছালি ও
পশু-পাখি
সংগ্রহ করেছিলেন।
তারা চিত্রকরদের
দিয়ে এসব
গাছপালা ও
পশু-পাখির
চিত্র তৈরি
করান। শেখ
জয়েন উদ্দিন
ছিলেন এদের
মধ্যে অন্যতম।
কলকাতায় স্থায়ী
হয়ে লেডি
ইম্পে নানা
রকম দেশীয়
পশু-পাখি
সংগ্রহ করেন।
জয়েন উদ্দীন
ভারতের সনাতনি
ধারায় ফ্ল্যাট
স্টাইলে এ
ছবিগুলো এঁকেছিলেন।
লেডি ইম্পের
অনুরোধে জয়েন
উদ্দিন গাছে
চড়া পশু-পাখি
আঁকতে শুরু
করেন। এর
মধ্যে চন্দন
গাছের ডালে
নীলকণ্ঠ পাখির
ছবি বিখ্যাত।
এখানে ফ্ল্যাট
আর্টের সঙ্গে
রঙের ব্যবহারের
কারণে পরবর্তী
সময়ে এক
ক্রেতা একে
জাপানি চিত্রকর্ম
বলে ভুল
করেছিল। পাখির পাশাপাশি
জয়েন উদ্দিন
অন্যান্য প্রাণীর
প্রাকৃতিক বাসস্থানের
নৈমিত্তিক পরিবেশে
জীবনযাপনের ছবিও
এঁকেছিলেন। এর
মধ্যে মালাবারের
কাঠবিড়ালি অন্যতম।
মালাবারের এ
কাঠবিড়ালিগুলো ‘দৈত্যাকার
কাঠবিড়ালি’ বলে
পরিচিত। কেননা
এটি এক-দেড়
ফুট লম্বা
হয়। কেবল
ভারতেই নয়,
পৃথিবীর অন্যতম
বৃহত্তর কাঠবিড়ালির
প্রজাতি এরা।
এ ছবির
ক্ষেত্রে একটি
লক্ষণীয় বিষয়
হলো প্রাণীগুলোকে
এদের বাসস্থলের
তুলনায় বড়
বলে মনে
হয়। কোম্পানি
ঘরানার চিত্রকর্মের
প্রাথমিক সময়ের
এটি একটি
অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কাঠবিড়ালির প্রসঙ্গ
থেকে সরে
জয়েনের চিত্রকর্মের
দিকে লক্ষ
করা যাক।
সেখানে দেখা
যায় তার
সব চিত্রকর্ম
ভারতের ‘ফ্ল্যাট’
ধারা অনুসরণ
করে না।
ভারতের এ
ধারায় খুব
সাধারণভাবে সাবজেক্টকে
অঙ্কন করা
হতো। চিত্রে
উপমা, অনুষঙ্গ,
রঙের ব্যবহারে
বৈচিত্র্য থাকত
তুলনামূলক কম।
কিন্তু পরবর্তী
সময়ে জয়েনের
অঙ্কনে এসব
বৈশিষ্ট্য দেখা
যায়। জয়েনের
আঁকা ছবিতে
ছোট ছোট
‘ডিটেইল’
যুক্ত হতে
থাকে। তিনি
সূক্ষ্ম তুলি
ব্যবহার করে
খুঁটিনাটি তুলে
ধরার চেষ্টা
করেন। ছবিগুলো
সে সময়
আরো বিস্তারিত
দৃশ্য প্রকাশ
করতে শুরু
করে। একটি
বনরুইয়ের ছবিতে—যা
লেডি
ইম্পে’স প্যাঙ্গোলিন নামে
পরিচিত—জয়েনের
এ পরিবর্তনের
উত্কৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
প্রতিটি মাত্রা
নিখুঁত করে
আঁকার কারণে
এটিকে রীতিমতো
ত্রিমাতৃক বলে
মনে হয়।
বনরুইটির পায়ের
নিচে ছায়া
দেয়ার কারণে
বিষয়টি আরো
স্পষ্ট হয়ে
উঠেছে। কোম্পানির কর্তারা
শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা
করতেন এবং
তাদের অন্যতম
ফরমায়েশি কাজ
ছিল নিজেদের
পোর্ট্রেট ও
গৃহসজ্জা অঙ্কন
করিয়ে নেয়া।
জয়েন উদ্দিনও
লেডি ইম্পে
ও তার
গার্হস্থ্যের চিত্র
অঙ্কন করিয়েছিলেন।
এমন অন্তত
দুটো চিত্রকর্ম
পাওয়া যায়।
ছবিগুলো ভারতীয়
ধারার হলেও
এখানে ছায়া
দেয়ার ক্ষেত্রে
জয়েন সূক্ষ্ম
কাজ দেখিয়েছেন।
এতে ছবিতে
উপস্থিত ব্যক্তিদের
বাস্তব বলে
মনে হয়।
ভেলোরের ইয়েল্লাপা ভারতীয়
চিত্রকলার কোম্পানি
ধারায় আত্মপ্রতিকৃতির
অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।
ভেলোরের শিল্পী
ইয়েল্লাপা এক্ষেত্রে
ব্যতিক্রম। তিনি
আত্মপ্রতিকৃতি অঙ্কন
করেছিলেন বলে
বিশ্লেষকরা বিশ্বাস
করেন। এক্ষেত্রে
পশ্চিমা চিত্রকর্মের
সঙ্গে ইয়েল্লাপার
স্টাইলে পার্থক্য
আছে। ইয়েল্লাপাকে
একটি সওদাগরি
টেবিলের পেছনে
পা ভাঁজ
করে বসে
থাকতে দেখা
যায়। পশ্চিমা
শিল্পীরা সাধারণত
টেবিলে বসা
কিংবা ইজেলের
সামনে দাঁড়ানো
অবস্থায় নিজেদের
চিত্রিত করেছেন।
ইয়েল্লাপার বিশেষত্ব
হচ্ছে তিনি
মানুষ ও
তার পোশাকআশাকের
ডিটেইল আঁকতেন।
সেপয়স
অব মাদ্রাজকে উদাহরণ
হিসেবে উপস্থাপন
করা যায়।
এ ছবিতে
কোম্পানির ছয়জন
সিপাহিকে দেখা
যায়। তারা
সবাই পূর্ণাঙ্গ
ইউনিফর্মে ছিলেন।
বাম থেকে
ডানে যথাক্রমে
মাদ্রাজ হর্স
আর্টিলারি, মাদ্রাজ
লাইট ক্যাভালরি,
দ্য মাদ্রাজ
রাইফেল কর্পস,
দ্য মাদ্রাজ
পাইওনিয়ারস, মাদ্রাজ
নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি
ও মাদ্রাজ
ফুট আর্টিলারির
সৈনিককে চিত্রিত
করা হয়েছে।
প্রত্যেক সৈন্য
বিভাগের ইউনিফর্মের
ডিটেইল খুব
সুন্দরভাবে অঙ্কিত।
মাদ্রাজে বসবাসের
কারণে ইয়েল্লাপা
কোম্পানির সৈন্যদের
উর্দি সম্পর্কে
ওয়াকিবহাল ছিলেন।
ধারণা করা
হয়, ১৮০৬
সালের ভেলোর
বিদ্রোহের পর
ইয়েল্লাপা এ
ছবি আঁকার
চিন্তা করেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের
সিপাহি বিদ্রোহের
৫০ বছর
আগে দক্ষিণ
ভারতে সিপাহিদের
মধ্যে অসহিষ্ণুতা
দেখা দেয়।
মূল কারণ
ছিল সিপাহিদের
পোশাকের ওপর
নিয়ন্ত্রণ। তাদের
ধর্মীয় বিভিন্ন
চিহ্ন ধারণে
তাদের বাধা
দেয়া হয়।
যেমন হিন্দুদের
কপালে তিলক
ও মুসলিমদের
দাড়ি। এছাড়া
পাগড়ি ও
টুপি ব্যবহারেও
নানা রকম
বিধিনিষেধ আরোপ
করা হয়।
অর্থাৎ পুরো
বিষয়টি কোম্পানির
ইউনিফর্মের সঙ্গে
সম্পর্কিত। এসব
বিষয় মাথায়
রেখেইে ইয়েল্লাপা
সৈন্যদের পূর্ণাঙ্গ
ইউনিফর্মে আঁকার
বিষয়টি ভেবেছিলেন।
ইউনিফর্ম ছাড়াও
ইয়েল্লাপা ভারতীয়
সাধারণ মানুষ
ও দাপ্তরিক
কর্মচারীদের স্পষ্ট
ছবি এঁকেছিলেন।
এর মধ্যে
হিন্দুদের বিভিন্ন
বিভাগ ও
বৈষ্ণবদের উপস্থাপন
কৌতূহলোদ্দীপক। গুলাম আলী
খান মোগল
দরবারি চিত্রকরদের
মধ্যে গুলাম
আলী খান
ছিলেন শেষ
ব্যক্তি। তিনি
দ্বিতীয় আকবর
(শাসনকাল ১৮০৬-৩৭)
ও বাহাদুর
শাহ জাফরের
(শাসনকাল ১৮৩৭-৫৭)
দরবারে কর্মরত
ছিলেন। দরবারি
শিল্পী হিসেবে
কাজ করার
পাশাপাশি তিনি
তার অঙ্কনে
ব্রিটিশ ধারার
কারণে ব্রিটিশ
পৃষ্ঠপোষকতা লাভ
করেন। এদের
মধ্যে অন্যতম
ছিলেন উইলিয়াম
ফ্রেজার ও
জেমস স্কিনার।
গুলাম আলীর
ছবির বৈশিষ্ট্য
ছিল তিনি
সোনালি কাগজে
জলরঙে আঁকতেন।
এর পাশাপাশি
কালো মার্জিন
ব্যবহার করতেন
তিনি। ফ্রেজারের
পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি
বেশকিছু ছবি
আঁকেন। এ
ছবিগুলো ফ্রেজার অ্যালবাম থেকে
পাওয়া যায়।
সেখানে দেখা
যায়, গুলাম
আলীর আঁকা
ছবিগুলোর বিষয়বস্তু
ছিল সাধারণ
গ্রামবাসী, সৈন্য,
ভারতীয় অভিজাতরা
এবং গ্রামের
পরিবেশ। ফ্রেজারের মৃত্যুর
পর অ্যালবামের
কাজ বন্ধ
হয়ে যায়।
এরপর গুলাম
আলী জেমস
স্কিনারের পৃষ্ঠপোষকতা
লাভ করেন।
তিনি ১৮০১
খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল
আর্মিতে যোগ
দেন। এখানে
একটি অনিয়মিত
পদাতিক বাহিনী
গঠন করে
তিনি নাম
করেন। এটি
‘স্কিনারস
বয়েজ’ নামে
অধিক পরিচিত।
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়
হলো এ
বাহিনী ক্রমান্বয়ে
‘লাইট
ক্যাভালরি’তে
উন্নীত হয়
এবং এ
নামে ভারতীয়
সেনাবহিনীতে এখনো
একটি দল
রয়েছে। রণক্ষেত্রে
আহত স্কিনার
বলেছিলেন, তিনি
বেঁচে ফিরলে
একটি গির্জা
তৈরি করবেন।
১৮২৬ সালে
তিনি মেজর
রবার্ট স্মিথকে
এ দায়িত্ব
দেন। গুলাম আলী
খান এ
গির্জার বাইরের
ও ভেতরের
দৃশ্যের অনুপুঙ্খ
চিত্র অঙ্কন
করেছেন। স্থাপনার
চিত্র আঁকায়
গুলাম আলীর
আগ্রহ ছিল।
এর আগে
তিনি প্রায়
৩১টি দালান
ও স্মৃতিস্তম্ভের
চিত্র এঁকেছেন।
যদিও ছবিগুলো
প্রাথমিক দর্শনে
ভারতীয় সনাতন
ধারারই মনে
হয়, কিন্তু
মূলত যে
দৃষ্টিকোণ থেকে
ছবিগুলো উপস্থাপিত
তা পুরোপুরি
ভারতীয় নয়।
রঙ ও
পদ্ধতিতে ইউরোপীয়
প্রভাব লক্ষ
করা যায়।
ধারণা করা
হয়, ভারতে
আসা ইংরেজ
শিল্পী বা
আর্টের শিক্ষকদের
দ্বারা তিনি
প্রভাবিত হয়েছিলেন। সীতা রাম এ
তালিকায় সীতা
রাম অন্যতম
আগ্রহোদ্দীপক শিল্পী।
তার সম্পর্কে
কেবল এটুকু
জানা যায়
যে তিনি
একজন বাঙালি
হিন্দু ছিলেন।
বর্তামানে তাকে
জলরঙের বিশেষজ্ঞ
বলে মানা
হয়। সীতা
রামের পৃষ্ঠপোষক
ছিলেন ফ্রান্সিস
রোডন। ভারতে
আসার পরপর
১৫ মাস
ধরে তিনি
দিল্লি থেকে
কলকাতার নান
জায়গা ঘুরে
বেড়িয়েছেন। সীতা
রামকে তিনি
তার দেখা
নানা স্থান
ও স্থাপনা
চিত্রিত করার
ব্যাপারে পৃষ্ঠপোষকতা
করেন। সীত রামের
চিত্রকর্ম দেখে
বোঝার উপায়
নেই যে
এগুলো কোনো
ভারতীয় শিল্পীর
আঁকা। জলরঙের
ছবিগুলো পুরোপুরি
ইউরোপীয় ধারা
অনুসরণ করে।
ভারতীয় ফ্ল্যাট
পেইন্টিংয়ের সঙ্গে
কোনো মিল
নেই। তার
রঙের ব্যবহার,
বিষয়বস্তুর উপস্থাপন
পুরোপুরি ইউরোপীয়
ধারা অনুসরণ
করে। গ্রেট গান
অব আগ্রা
বিনিথ দ্য
শাহ বুর্জ
এর
অন্যতম উদাহরণ। কোম্পানি আমলে
ভারতীয় শিল্পীদের
আঁকা এসব
ছবি বেশির
ভাগ ক্ষেত্রে
পারিবারিক অ্যালবামে
পরিণত হয়।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে
থাকার কারণে
ছবিগুলো জনসমক্ষেও
আসেনি। তবে
কখনো কখনো
এগুলোকে প্রদর্শনীতে
তুলে ধরা
হয়েছে। সেখান
থেকেই গুলাম
আলী, সীতা
রাম, জয়েন
উদ্দিন, ইয়েল্লাপাদের
পাওয়া যায়।
এ ছবিগুলোয়
চিত্রকলার ভারতীয়
ধারার পাশাপাশি
চিত্রাঙ্কনের নানা
কৌশলেরও পরিচয়
পাওয়া যায়।
চিত্রকলার বাইরে
ঔপনিবেশিক ভারতের
মানুষের চালচলন,
পোশাক, সংস্কৃতিরও
পরিচয় ধারণ
করে একেকটি
চিত্র। ইয়েল্লাপার
পোর্ট্রেট
অব মোগল
আর্টিস্ট ছবিতে থাকা
শিল্পীর দুই
পাশের কর্মচারী,
শেখ আমীরের
সহিস এমনকি
জয়েন উদ্দিনের
নীলকণ্ঠ পাখি
ভারতীয় চিত্রকলা
ও ঔপনিবেশিক
ইতিহাসের সাক্ষী। সূত্র:
হ্যাজেল স্টেইনারের
ব্লগ
মাহমুদুর রহমান: লেখক