২০২০ সালের এপ্রিলে
‘ফরগটেন
মাস্টার্স’ নামে
একটি চিত্র
প্রদর্শনীর আয়োজন
করেছিল ব্রিটিশ
লাইব্রেরি। আয়োজক
প্রতিষ্ঠান ওয়ালেস
কালেকশনকে কুড়িখানেক
চিত্র ও
পাণ্ডুলিপি ধার
দিয়েছিল দ্য
ব্রিটিশ লাইব্রেরি।
সেখানে ছিল
হালদার নামে
অপরিচিত বাঙালি
চিত্রকরের চারটি
ছবি। প্রথমবারের
মতো এ
ছবিগুলো সাধারণের
জন্য উন্মুক্ত
করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক ইতিহাস
নিয়ে আঁকা
চিত্রকর্মগুলো নিয়ে
প্রদর্শনীর কিউরেটর
ছিলেন বিখ্যাত
মোগল ইতিহাস
লেখক উইলিয়াম
ড্যালরিম্পল। কোম্পানি শাসনামলে
স্কটিশ সার্জন
ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিল্টনের
নির্দেশনায় (১৭৬২-১৮২৯)
আঁকা ছবিগুলোর
মধ্যে বাঙালি
ভদ্রলোকের আঁকা
চিত্রগুলোর দিকে
মনোযোগ দেয়া
যেতে পারে।
হালদারের আঁকা
উল্লুক, শ্লথ
ভালুক, কাঁকড়াভুক
বানর কিংবা
জারবিলসের (ইঁদুর
প্রজাতির সদস্য)
যে ছবি
রয়েছে তা
যে প্রকৃতি
বিজ্ঞানের ইতিহাসে
গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন
হতে পারে,
তাতে সন্দেহ
নেই। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে
বুকাননের সংগ্রহ
নিয়ে অনেক
কিছু জানা
গেছে। সেখানে
ড. রালফ
ব্রিজ নামে
এক মত্স্যবিজ্ঞানী
কাজ করতেন।
তিনি বুকাননের
‘ফিশেস অব
দ্য গ্যাংঞ্জেস’ নিয়ে গবেষণা
করেছিলেন। চিত্রকর
হালদার নিয়ে
তিনি ফরাসি
প্রাণিবিদ অঁরি
দো ব্লেঁভাইলের
একটি নিবন্ধের
প্রতি গবেষকদের
দৃষ্টি আকর্ষণ
করেন। ১৮১৬
সালে ‘পার লো
সোসিয়েত ফিলোম্যাথিক দো প্যারিস’ নামে একটি
সায়েন্স বুলেটিনে
ওই লেখা
প্রকাশ করেছিলেন
ব্লেঁভাইল। সেখানে
তিনি কার্ভাস
নাইগার নামে
একটি প্রাণীর
প্রসঙ্গ তোলেন।
এখানে ভিত্তি
ছিল ভারতীয়
চিত্রকর হালদারের
আঁকা একটি
ড্রয়িং। স্পটে
বসেই আঁকা
হয়েছিল চিত্রটি।
সে আর্টিকেলটি
পড়ার পর
১৯ শতকের
আরো একাধিক
সাময়িকী পড়েছেন
গবেষকরা। সেখানে
খতিয়ে দেখার
চেষ্টা করা
হয়েছে অন্য
কোনো প্রাণিবিদের
লেখায় প্রাণিবিজ্ঞানী
দো ব্লেঁভাইলের
কথা এসেছে
কিনা। সে
সূত্রে বাঙালি
চিত্রকরের কথা
উঠে আসে
কিনা। দেখা
গেল ১৮১৯
সালে জার্মান
প্রকৃতিবিজ্ঞানী লরেঞ্জ
ওকেনের সম্পাদনায়
প্রকাশিত সাময়িকী
আইসিসে তার
কথা উঠে
এসেছে। উভয়ের
লেখায় এক
জায়গায় মিল—
তা হলো
কার্ভাস নাইগার
হচ্ছে ভারতীয়
সম্বর হরিণ
বা বড়
শিংঘা হরিণ।
তিনি সেখানে
উল্লেখ করেন,
চিত্রটি স্পটে
বসেই এঁকেছিলেন
ভারতীয় ওস্তাদ
চিত্রকর হালদার।
তবে প্রাণীটি
নিয়ে তেমন
বিস্তারিত তথ্য
পাওয়া যায়নি।
ভারতের কোন
অংশে প্রাণীটির
দেখা মিলেছে
সে বিষয়টি
তুলে আনেননি
তারা। কার্ভাস নাইগার
নিয়ে অনুসন্ধানে
ব্রিটিশ লাইব্রেরির
সংগ্রহে থাকা
একটি চিত্রের
দিকে মনোযোগ
দেয়া হয়।
১৮০৮ সালে
লন্ডনের লিডেনহল
স্ট্রিটে কোম্পানির
লাইব্রেরিতে চিত্রটি
জমা দিয়েছিলেন
ফ্রান্সিস বুকানন।
চিত্রটিতে রয়েছে
চিত্রকর হালদারের
নামও। সাম্বার
হরিণের ওই
চিত্রটিসহ ব্রিটিশ
লাইব্রেরিতে হালদার
অঙ্কিত ২৮টি
ছবি রয়েছে।
১৭৯৫-১৮১৮
সালের দিকে
এগুলো আঁকা।
বুকানন তখন
ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানিতে সার্জন
হিসেবে কর্মরত
ছিলেন। ভারতীয়
উপমহাদেশের বিভিন্ন
অংশে ঘুরে
বেড়ানোর সঙ্গে
সঙ্গে সেখানকার
উদ্ভিদ ও
প্রাণিজগতের নমুনা
সংগ্রহ করছিলেন। চিত্রকলার ঐতিহাসিক
ও ন্যাচারাল হিস্ট্রি ড্রয়িংস ইন
দি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির লেখক
মিলড্রেড আর্চার
মনে করেন,
তত্কালীন ক্যালকাটা
বোটানিক গার্ডেনসের
সুপারিনটেনডেন্ট উইলিয়াম
রক্সবার্গ হালদারকে
নিয়োগ দিয়ে
থাকতে পারেন।
রক্সবার্গ ও
বুকাননের মধ্যে
নিয়মিতই যোগাযোগ
হতো। আর্চারের
অভিমত, বুকাননের
সঙ্গে হালদারের
যোগাযোগের সূত্রধর
ছিলেন রক্সবার্গ। বর্তমান বাংলাদেশের
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয়
জেলা লক্ষ্মীপুরে
১৭৯৫-১৭৯৭
সালে হালদারকে
প্রথম নিয়োগ
দিয়েছিলেন বুকানন।
কোম্পানির কারখানায়
১৭৯৮ সাল
পর্যন্ত কাজ
করেছিলেন ওই
স্কটিশ সার্জন।
ভারত বিস্তৃত
গঙ্গা নদীর
মিঠাপানির মাছ
নিয়ে গবেষণা
করছিলেন তিনি।
ওই বিভিন্ন
প্রজাতির প্রাণী
ও উদ্ভিদের
ছবি আঁকার
জন্য এক
বাঙালি চিত্রকরকে
নিয়োগ দিয়েছিলেন
বুকানন সাহেব। রালফ ব্রিজের
মতে, মিঠাপানির
মাছের ছবি
আঁকার দায়িত্ব
পড়েছিল হালদার
ঘাড়ে। বুকানন-হ্যামিল্টন
সেগুলো পরীক্ষা
করে প্রত্যেকটি
নমুনার বর্ণনা
লিখতেন। খুবই
দক্ষতার সঙ্গে
প্রত্যেকটি মাছের
ছবি এঁকেছিলেন
হালদার। আউটলাইন
আঁকার ক্ষেত্রে
কালি ও
কলম ব্যবহার
করেছেন। তারপর
সেগুলো রঙ
করতে রুপার
গুঁড়ো ব্যবহার
করেছেন। বুকানন লক্ষ্মীপুর
ছেড়ে যাওয়ার
পরও হালদার
তার সঙ্গী
হয়েছিল কিনা
বিষয়টি সম্পর্কে
স্পষ্ট তথ্য
পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী কয়েক
বছর বুকানন
চট্টগ্রাম, মহীশূর
ও নেপালে
কর্মরত ছিলেন।
সেখানে বেশ
কয়েকটি জরিপ
পরিচালনা করেছেন
কিংবা ১৭৭৮-১৮০৩
সালের মধ্যে
কোম্পানির হয়ে
দাপ্তরিক পরিদর্শন
করেছেন। ১৭৯৯
সালে হয়তো
অল্প সময়ের
জন্য কলকাতায়
ফিরেছিলেন বুকানন।
রক্সবার্গের শারীরিক
অসুস্থতার কারণে
বোটানিক গার্ডেনসের
সাময়িক দায়িত্বে
ছিলেন তিনি। ১৮০৩ সালে
নেপাল থেকে
ফেরার পর
বুকাননকে ব্যারাকপুরের
সার্জন হিসেবে
নিয়োগ দেন
লর্ড ওয়েলসলি।
১৮০১ সালে
ব্যারাকপুরকে গভর্নর
জেনারেলের বাসভবন
হিসেবে রূপ
দেয়া হয়েছিল।
ওয়েলেসলি সেখানে
ব্যারাকপুর মেনাজেরি
প্রতিষ্ঠা করেন
এবং ১৮০৩-১৮০৫
সালে বুকানন
তার সুপারিনটেনডেন্ট
হিসেবে দায়িত্ব
পালন করেন।
ভারতবর্ষ থেকে
সংগৃহীত সব
নমুনা ওই
মেনাজেরিতে নিয়ে
আসা হয়।
ব্রিটিশ লাইব্রেরির
আর্কাইভে সংরক্ষিত
তথ্য প্রমাণাদিতে
এটা স্পষ্ট
পাখি ও
স্তন্যপায়ী প্রাণীর
ছবি আঁকার
জন্য ব্যারাকপুরে
যে একদল
শিল্পী সমাবেশ
ঘটেছিল তার
গুরুত্বপূর্ণ সদস্য
ছিলেন হালদার।
তার সমসাময়িক
চিত্রকরদের মধ্যে
ছিলেন চট্টগ্রামের
গুরু দয়াল,
মহাঙ্গু লাল
ও বিষ্ণু
প্রসাদ।
সূত্র: স্ক্রল ইন