সূচনালগ্ন থেকেই
কাওয়ালি লিখিত
রূপ পেয়েছিল।
তবে গানের
ক্ষেত্রে দল
থেকে দল,
এক অঞ্চল
থেকে অন্য
অঞ্চলে পরিভ্রমণের
ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে
মুখে মুখে
তা বিস্তৃতি
লাভ করে।
তখনো কণ্ঠ
ধরে রাখার
মতো প্রযুক্তি
আবিষ্কার হয়নি।
প্রযুক্তির উন্নতির
সঙ্গে যখন
তা সম্ভব
হলো, সংরক্ষণ
ও প্রচারের
স্বার্থে তখন
থেকেই কাওয়ালি
রেকর্ড করা
শুরু হয়।
ঔপনিবেশিক যুগে
এসে গ্রামোফোন
আবিষ্কারের ফলে
কাওয়ালি জনপ্রিয়
হওয়া আরো
সহজ হয়।
মাহফিলে যাওয়া
সবার পক্ষে
সম্ভব হতো
না, কিন্তু
গ্রামোফোনের ডিস্কের
মাধ্যমে বহুদূরে,
বহুদিনের জন্য
প্রিয় কাওয়ালিটি
শোনা সম্ভব
হয়। দক্ষিণ
এশিয়ার মুসলিম
পরিবারগুলোর মধ্যে
গ্রামোফোনের প্রতি
আগ্রহ তৈরি
হয় গত
শতকের তিরিশের
দশকের শেষ
দিকে। এরপর
একে একে
যেসব কাওয়ালি
রেকর্ড হয়েছে
তা সে
সময়ের মতো
আজও উর্দুভাষী
ও কাওয়ালিপ্রেমীদের
কাছে পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ায়
রেকর্ডিংয়ের ইতিহাস
বহু পুরনো
এবং সেখানে
ঔপনিবেশিক উদ্যোক্তাদের
একচেটিয়া প্রভাব
ছিল। এখানে
ব্রিটিশ গ্রামোফোন
কোম্পানির একচেটিয়া
ব্যবসা ১৯০৮
সালে শুরু
হয় এবং
১৯৭০ পর্যন্ত
তা বজায়
ছিল। কাওয়ালির
রেকর্ডিংয়ের ইতিহাস
এ কোম্পানির
ভারতে কাজ
শুরু করার
আগের। ১৯০২
সালে কোম্পানির
একজন এজেন্ট
এখানে ভ্রমণে
এসে প্রথম
কাওয়ালি রেকর্ড
করেন। সে
সময়ে পিয়ারু,
কালু ও
ফখর-এ-আলম
নামে যে
তিনজন কাওয়ালের
গান রেকর্ড
করা হয়,
তারা সে
সময় জনপ্রিয়
হওয়া শুরু
করেন এবং
গ্রামোফোন রেকর্ডই
তাদের পরিচিতি
এনে দেয়।
কিন্তু তখনো
খরচ ও
নানা কারণে
গ্রামোফোন রেকর্ড
কঠিন ছিল।
১৯৩০ সালে
শুরু হয়ে
এ দশকের
শেষে দেশীয়ভাবে
জাপানি ফোনোগ্রাফ
সংযোজন শুরু
হলে এর
বিস্তার সহজ
হয়। বিশের দশকে
গ্রামোফোন কোম্পানির
সঙ্গে আরো
কিছু কোম্পানি
রেকর্ডিং শুরু
করলে এক
ধরনের বৈচিত্র্য
লক্ষ করা
যায়। কোম্পানিগুলো
আঞ্চলিক পছন্দ
অনুসারে কাওয়ালি
রেকর্ড করত—দিল্লিতে
উর্দু-ফারসিভাষী
অভিজাতদের পছন্দ
অনুসারে গানের
কথা মাথায়
রাখা হয়
এবং অন্যদিকে
মুম্বাইয়ে গুরুত্ব
পায় মারাঠি
ও গুজরাটি।
কিন্তু এরপর
গ্রামোফোন কোম্পানি
বৃহত্তর স্বার্থে
সব ধরনের
কাওয়ালি রেকর্ড
ও প্রচারের
সিদ্ধান্ত নেয়
এবং এতে
কাওয়ালির বিস্তৃতি
আরো সহজ
হয়। কাওয়ালি
বিশেষজ্ঞ আকমল
হায়দরাবাদির মতে,
এতে হিজ
মাস্টারস ভয়েসের
একজন প্রযোজকের
মাথা থেকে
জনপ্রিয় ঘরানার
কাওয়ালি প্রচারের
চিন্তা আসে।
এখান থেকেই
শহুরে কাওয়ালদের
সুযোগ তৈরি
হয় এবং
তাদের কাওয়ালি
রেকর্ড ও
প্রচার হতে
থাকে। প্রথম
দিকে শহুরে
শিক্ষিত উর্দু-ফারসিভাষী
ব্যবসায়ী, চাকুরে
ও সংস্কৃতিমান
মানুষে তা
গ্রহণ করেছিল। কাওয়ালি রেকর্ডের
প্রথম দশকে
দেখা যায়
এ সময়ের
কাওয়ালিগুলো সহজ
ও প্রচলিত
উর্দুতে লেখা।
রাসুলের নাত,
শিয়াদের মর্সিয়া
এখানে প্রাধান্য
পায়। কালু
কাওয়ালের ‘হাম
মাজার-এ-মোহাম্মদ
পে মর
যায়েঙ্গে’ জনপ্রিয়
হয়েছিল। ইসমাইল
আজাদের ‘মোহাম্মদ
হামারি বারি
সুনভা লে’র
কথাও স্মরণ
করা যায়।
তবে এ
সময় রেকর্ড
কোম্পানিগুলো সব
ধর্মের মানুষকেই
তাদের ক্রেতা
হিসেবে পেতে
চাইলে তারা
সব ধরনের
গান প্রচার
শুরু করে।
এক্ষেত্রে জনপ্রিয়
ধরনের গান
থেকে উপাদান
নিয়ে কাওয়ালিতে
যোগ করা
হয়। কাওয়ালিতে
বর্তমানে ব্যবহূত
নানা বাদ্যযন্ত্রের
ব্যবহার মূলত
কাওয়ালির সূচনা
থেকে ছিল
না। রেকর্ড
কোম্পানির হাত
ধরে নতুন
নতুন বাদ্যযন্ত্র
যুক্ত হয়।
কাওয়ালিতে এমনকি
ব্যাঞ্জোও ব্যবহূত
হয়েছে। সাতচল্লিশে দেশভাগের
পর দুটো
কারণে রেকর্ড
কোম্পানি ও
গ্রামোফোনের প্রভাব
কমে যায়।
প্রথমত, দেশভাগের
ডামাডোল, দ্বিতীয়ত,
রেডিওর সহজলভ্যতা।
এ সময়ে
ভারতে কাওয়ালির
জনপ্রিয়তায় ভাটা
পড়ে, কিন্তু
পাকিস্তানে কাওয়ালি
রেকর্ডের চাহিদা
বাড়তে দেখা
যায়। রেকর্ড
কোম্পানিগুলো সে
চাহিদা পূরণ
করেছে। তারা
নানা মাধ্যমে
কাজ করেছে।
যেমন পিয়ারু,
কালুদের স্টুডিওতে
এনে তাদের
সলো পারফরম্যান্স
রেকর্ড করার
পাশাপাশি নানা
দরগাহে আয়োজিত
মাহফিলও রেকর্ড
করা হতো।
৪৫ আরপিএম
ডিস্ক, এরপি
রেকর্ডে সেসব
কাওয়ালি দক্ষিণ
এশিয়ার মানুষের
ঘরে পৌঁছে
যেত। এখনো
অনেক বনেদি
বাড়ি ও
সংগ্রহশালায় এসব
রেকর্ডের দেখা
পাওয়া যায়।
সূত্র: His
Master’s Voice? Exploring Qawwali and ‘Gramophone Culture’ in South Asia, Regula Burckhardt Qureshi