গত ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বণিক বার্তায় প্রকাশিত ‘শিল্পপ্রেমে অনন্য দম্পতির ধূসর কর্মকাণ্ড’ শীর্ষক সংবাদের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মো. সাজ্জাদ হোছাইন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদে বলা হয়েছে, রাজীব সামদানী কখনই কোনো ধরনের আর্ট ডিলিং বা বিক্রি কিংবা শিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০২০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ঢাকা আর্ট সামিটে নয় বরং বঙ্গবন্ধুর বিশেষ প্রদর্শনী ও অন্য একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিলেন। ২০২১ সালে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সঙ্গে যৌথভাবে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে ফরাসি ফটোগ্রাফার অ্যান ডি হেনিংয়ের আলোকচিত্র নিয়ে একটি প্রদর্শনী আয়োজন করেছিল সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন।
প্রতিবাদে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা আর্ট সামিট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের শিল্পকর্ম বেচাকেনা করে না অথবা এ উদ্দেশ্যে কোনো কার্যক্রমও করে না এবং ঢাকা আর্ট সামিট ও সামদানীর কোনো রকম ‘আর্থিক লুণ্ঠনের’ সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সিলেটে সামদানীর কোনো রিসোর্ট নেই এবং অনির্ভরযোগ্য উৎসের ওপর ভিত্তি করে অভিযোগটি করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ রেহানা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাড়ি থেকে অনেকগুলো শিল্পকর্ম লুট হয়েছে। এসব শিল্পকর্ম সরবরাহ ও লুণ্ঠনের সঙ্গে সামদানীর জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবাদে বলা হয়েছে, বিদ্বেষপূর্ণ অভিপ্রায়ে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। রাজীব সামদানী সে সময় দেশে ছিলেন না। প্রতিবেদনে রাজীব সামদানীকে অসম্মান করা এবং গোল্ডেন হারভেস্ট গ্রুপকে দুর্বল হিসেবে বোঝানোর উদ্দেশ্যে শুধু গোল্ডেন হারভেস্ট ‘এগ্রো’ শাখা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে বলে সামদানী ফাউন্ডেশনের প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়েছে, তথ্য যাচাইয়ের জন্য তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
তাছাড়া প্রতিবাদপত্রে ২০২৩ সালে ঢাকা আর্ট সামিটের সময়ে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক প্রস্তাবের বিষয়টিরও অবতারণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আলোচ্য প্রতিবেদনটিকে বিশেষভাবে আর্থিক স্বার্থ দ্বারা প্রণোদিত বলে ধারণা করছে সামদানী ফাউন্ডেশন।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: বণিক বার্তার প্রতিবেদনে শিল্পকর্মের আড়ালে রাজীব সামদানী ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ধরনের ধূসর কার্যক্রম এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বণিক বার্তার কাছে পাঠানো প্রতিবাদপত্রটি রাজীব সামদানীর স্বাক্ষরিত নয়। বরং তার প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত। ফলে গণমাধ্যমের নীতি হিসেবে এটি প্রতিবাদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তা সত্ত্বেও সাংবাদিকতার নৈতিক জায়গা থেকে বণিক বার্তা প্রতিবাদটি প্রকাশ করছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে করা হয়েছে, যা বণিক বার্তার প্রকাশিত প্রতিবেদনটির যথার্থতাকে সমর্থন করে। গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক অনিয়ম ও বন্ডের অর্থ ফেরত না দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বন্ডের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিএসইসির অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা গোল্ডেন হারভেস্টের কারখানা ও কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে রাজীব সামদানীকে পাননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার রাজীব সামদানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রয়াত শিল্পপতি দ্বীন মোহাম্মদ ও তার পরিবারের সঙ্গে রাজীব সামদানীর প্রতারণা এবং তার ব্যক্তিগত বিষয়ের মামলাসংক্রান্ত তথ্যও বণিক বার্তার কাছে ছিল। কিন্তু আলোচ্য প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার কারণে সেটি প্রকাশ করা হয়নি।
বণিক বার্তা আরো মনে করে, গত ৫ আগস্ট যেসব শিল্পকর্ম লুণ্ঠন হয়েছে সেখানে দেশের গুণী শিল্পীদের অনেক মূল্যবান শিল্পকর্মও ছিল, যেগুলো অমূল্য সম্পদ। ফলে মূল্যবান এসব সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল সেটি তদন্ত হওয়া দরকার এবং এসব চিত্রকর্ম উদ্ধার করে রাষ্ট্রের হেফাজতে নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি।
তাছাড়া বণিক বার্তার পক্ষ থেকে সামদানী ফাউন্ডেশনকে দেয়া বাণিজ্যিক প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য হচ্ছে দেশের আইন ও বিধিবিধান অনুসারে বৈধ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই বণিক বার্তার বিজনেস টিমের পক্ষ থেকে এ ধরনের বাণিজ্যিক প্রস্তাব দেয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের বাণিজ্যিক প্রস্তাব দেশের সব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের প্রমিত চর্চা। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ শীর্ষ গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও একই ধরনের চর্চা করা হয়ে থাকে। গণমাধ্যমের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও সংবাদ প্রকাশনা কার্যক্রম পুরোপুরি আলাদা বিষয়। তাই বাণিজ্যিক প্রস্তাবের সঙ্গে আলোচ্য প্রতিবেদনের কোনো সম্পর্ক নেই।