বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা নদীর পানি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি I রংপুর ও কুড়িগ্রাম

তিস্তার পানি বাড়ায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল দুপুর ১২টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। পানি বাড়ার কারণে এরই মধ্যে রংপুর ও কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার চরাঞ্চল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে অনেক ফসলি জমি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার মধ্যরাতে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। কিন্তু গতকাল সকাল ৯টার পর তা আবার বিপৎসীমার নিচে নেমে যায়। পানি বেশি বেড়েছে কাউনিয়ার তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে। গতকাল সকাল ৬টায় সেখানে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। দুপুর ১২টায় তা দুই সেন্টিমিটার কমে যায়। 

রবিউল ইসলাম জানান, পানি বাড়ার কারণে কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ও বালাপাড়া ইউনিয়নের হায়বদখাঁ চর, গদাই ও তালুক শাহবাজ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ইছলি, কোলকোন্দ, বিনবিনা, ও গজঘণ্টার ছালাপাক চর। 

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এক হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে ভাঙন ঠেকাতে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বালির বস্তা ফেলা হয়েছে।’

কাউনিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘তিস্তার পানি বেড়ে চরাঞ্চলের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে নয়টি পরিবারের বসতভিটা।’

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, শুকনা খাবারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত মাঠ প্রশাসন।

এদিকে তিস্তায় পানি বাড়ায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার শত শত হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চলসহ নদীর আশপাশের নিচু এলাকা। 

রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের আব্দুল বারেক বলেন, ‘তিনদিন ধরে তিস্তার পানি বাড়ছে। গত রাতে বাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।’

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিরমেলা এলাকার কৃষক শামসুল বলেন, ‘বন্যায় আমার দুই একর জমির আমন তলিয়ে গেছে। বাদামখেতও তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে না গেলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।’

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবারের তথ্যানুযায়ী জেলায় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল ১৫৯ হেক্টর জমির আমনসহ অন্যান্য ফসল। গতকাল রাত থেকে পানি আরো বেড়েছে। গতকালের তথ্যে নিমজ্জিত জমির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান গতকাল বিকালে বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এ জেলার ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় আজকের মধ্যেই নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন