চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদি। গতকাল নৌ-পরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে এ কথা জানান তিনি। এদিন সচিবালয়ের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইউএই রাষ্ট্রদূত।

চট্টগ্রাম বন্দরে ইউএই সরকার বিনিয়োগ করতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ইউএই বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, নিটওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পূর্ণ উদ্যমে আরো বৃহৎ পরিসরে নতুনভাবে কাজ করতে আগ্রহী ইউএই সরকার।’

তিনি জানান, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডিপি (দুবাই পোর্ট) ওয়ার্ল্ড বর্তমানে ছয় মহাদেশে ৬০টির বেশি সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ১০টি দেশে তাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। 

রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদি বলেন, ‘আমাদের লন্ডন গেটওয়ে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায়ও ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমিরাত সরকার বিশ্বাস করে, বাংলাদেশেও বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে।’

রাষ্ট্রদূতের বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে বহুমাত্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্য সব ক্ষেত্রেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানাই।’

এছাড়া বাংলাদেশী নাবিকদের জন্য দুবাইয়ের ভিসা জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে সহজ উপায়ে ট্রানজিট ভিসা ইস্যু করার আহ্বান জানান তিনি। তার এ প্রস্তাবে তাৎক্ষণিকভাবে ইতিবাচক সাড়া দেন রাষ্ট্রদূত।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পাটজাত পণ্য আমদানির আহ্বান জানান উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সুপারশপগুলোয় প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুবাইয়ের সুপারশপগুলোয়ও এসব পণ্য, যা পরিবেশের ক্ষতিকর সেগুলো ব্যবহারে বিধিনিষেধ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমিরাত সরকার বাংলাদেশ থেকে অত্যন্ত মানসম্মত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতে পারে।’

বাংলাদেশের পাট ও বস্ত্র শিল্পে আমিরাত সরকারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সারা বিশ্বেই পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও বস্ত্র কলগুলোয়ও বিদেশী বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমি আশা করব, সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাংলাদেশের পাট ও বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ করবে।’

উপদেষ্টার এ আহ্বানকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রদূত উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিতে অনুরোধ করেন। 

বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। এ সময়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিক ও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন