প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে সামিটের ব্যাখ্যা ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

ছবি : সংগৃহীত

গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বণিক বার্তার প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘এলএনজি আমদানি নীতির সুযোগ লুফে নেয় বিশেষ গোষ্ঠী’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছে সামিট গ্রুপ।

সামিটের বক্তব্য: প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সামিটকে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তটি হয় মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে। কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই এ কাজ পাইয়ে দেয়ার পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর একক সিদ্ধান্ত ও চাপ ছিল।’ 

সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড (এসওএসসিএল) ১১ অক্টোবর, ২০২১ সালে ‘ক্রয়, মালিকানা, পরিচালনা ও (সরকারকে) হস্তান্তর (বিওওটি)’-এর ভিত্তিতে দেশের তৃতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয়। 

ওই প্রস্তাবনা বিবেচনার জন্য, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করে। এ কারিগরি কমিটির সঙ্গে সামিট জুন ২০২৩ (প্রায় দেড় বছর) পর্যন্ত প্রকল্প চুক্তির শর্তসমূহ বিস্তর পৰ্যালোচনা করে। জুন ২০২৩-এ প্রকল্প প্রস্তাবনাটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সুপারিশসহ অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতে গৃহীত হয়। এরপর আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ দুই পক্ষের (কারিগরি কমিটির সঙ্গে সামিটের) আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের উপস্থিতিতে শর্তাবলি-সংক্রান্ত আলোচনা সাপেক্ষে একাধিকবার দরকষাকষি হয় ও ‘পেজ টার্ন’ সম্পাদিত হয়। ১২ অক্টোবর ২০২৩-এ পেট্রোবাংলা ও সামিট, উভয় পক্ষ টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) ও বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) অনুস্বাক্ষর করে তা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে দেয়। এ চুক্তি দুটি নভেম্বর ২০২৩-এ আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতে ডিসেম্বর ২০২৩-এ সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। 

৩০ মার্চ, ২০২৪ তারিখে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সামিট এলএনজি টার্মিনাল-২-এর টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ সামিটের প্রস্তাবনার পরে প্রায় আড়াই বছর ধরে এ প্রকল্প চুক্তি দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় ক্রয় প্রক্রিয়া মেনে সম্পন্ন করা হয়।

বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহে অতিপ্রয়োজনীয় তৃতীয় এফএসআরইউ টার্মিনালটি বাস্তবায়নের জন্য সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় একটি গ্যাস স্টেশন, ছয় কিলোমিটারের সাব-সি গ্যাস পাইপলাইন ও মুরিং অবকাঠামো নির্মাণ করতে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোম্পানিদের নিযুক্ত করে সামিটের এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ করতে প্রায় তিনটি শীত মৌসুম লাগবে। কেবল সামিট এলএনজি-২ টার্মিনালটি সফলভাবে কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কোনো ধরনের পেমেন্ট পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানদণ্ড বিবেচনায় সামিটের প্রস্তাবিত ট্যারিফ সবচেয়ে ন্যূনতম। 

প্রতিবেদকের বক্তব্য: দেশে ভাসমান তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে সামিটকে অনুমতি দেয়া হয় গত বছরের ১৪ জুন। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সে সময় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে টার্মিনাল স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির (বিশেষ আইন) আওতায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সামিট টার্মিনাল নির্মাণের কাজটি পায়নি। ফলে সেটি কতটুকু যৌক্তিকতার ভিত্তিতে ও কোন প্রক্রিয়ায় কাজটি পেয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। টার্মিনাল নির্মাণে যাচাই-বাছাই ছাড়াই এ কাজ পাইয়ে দেয়ার পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর একক সিদ্ধান্ত ও চাপ ছিল, সেই বিষয়টি জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার অধীনস্থ বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখানে প্রতিবেদক নিজস্ব কোনো বক্তব্য প্রতিবেদন উপস্থাপন করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন