চাহিদা হ্রাস ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি

দুই বছরের ব্যবধানে সবজি রফতানি কমেছে ৭৭ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বরাবরই বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, বিমানের কার্গো ও কনটেইনারের খরচ বৃদ্ধি এবং মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতির কারণে সবজি রফতানি এখন নিম্নমুখী। দুই বছর আগেও যেখানে ৬০ হাজার টন সবজি বিদেশে রফতানি হয়েছে, সমাপ্ত অর্থবছরে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ এ সময়ে রফতানি কমেছে ৭৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। 

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে কোনো নোটিস ছাড়াই ধাপে ধাপে ভাড়া বাড়িয়েছে পরিবহন খাতের সংস্থাগুলো। বিমানের কার্গো খরচ ও রেফা কনটেইনারের (রেফ্রিজারেটেড কনটেইনার বা তাপমাত্রা-সংবেদনশীল কনটেইনার) ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। ভারতের কলকাতা থেকে কেজিপ্রতি মাত্র দুই থেকে আড়াই ডলারে পণ্য পাঠানো যায় লন্ডনে। অথচ বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠাতে ৫ ডলারের বেশি খরচ হয়। 

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের (সমুদ্রবন্দর) তথ্যমতে, সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাজা শাক-সবজি (কুমড়া, বাঁধাকপি, টমেটো) রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬৬৯ টন, হিমায়িত শাক-সবজি ১ হাজার ৪০৬ টন এবং আলু ১১ হাজার ১২৭ টনসহ মোট সবজি রফতানি হয়েছে ১৪ হাজার ২০২ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাজা শাক-সবজি ৩ হাজার ১৭৬ টন, হিমায়িত শাক-সবজি ১ হাজার ১৮৭ টন এবং আলু ২৯ হাজার ৫৬০ টনসহ মোট সবজি রফতানি হয়েছে ৩৩ হাজার ৯২৩ টন। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে তাজা শাক-সবজি ৫ হাজার ৫৮২ টন, হিমায়িত শাক-সবজি ২ হাজার ২৮ টন এবং আলু ৫৩ হাজার ২৪ টনসহ মোট সবজি রফতানি হয়েছে ৬০ হাজার ৬৩৪ টন। অর্থাৎ গত দুই বছরের ব্যবধানে সবজি রফতানি কমেছে ৪৬ হাজার ৪৩২ টন বা ৭৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে সবজি জাতীয় ফসলের মধ্যে আলু সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়। কিন্তু চীন, ভারত, রাশিয়ার মতো আলু উৎপাদনকারী দেশ কম মূল্যে আলু রফতানি করায় পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। অথচ ২০১৫-১৬ সালের দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে আলু রফতানিতে উপরের সারিতে ছিল।

এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শিম, বেগুন, কাঁকরোল, পটোল, মুখীকচু, লাউ, চাইনিজ ক্যাবেজসহ বিভিন্ন সবজি ও শাক রফতানি হয়। 

রফতানিকারকরা বলছেন, দেশীয় বাজার থেকে ১০-১৫ টাকা বেশি দরে সবজি কিনতে হয় রফতানিকারকদের। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হিমায়িত সবজির চাহিদা থাকলেও বিমানের কার্গো খরচ ও রেফার কনটেইনারের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সবজি ও ফল রফতানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলো যেখানে অর্গানিক শাক-সবজি ও ফল রফতানি করছে, সেখানে আমাদের উৎপাদিত পণ্যে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক উপদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অথচ বিদেশীরা রাসায়নিকযুক্ত এসব সবজি ও ফল আমদানিতে আগ্রহী নয়।

চট্টগ্রাম ফ্রেস ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স গ্রুপের সভাপতি মাহবুব রানা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ফল ও সবজি বিদেশে রফতানি একটি সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু গত ছয় মাসে ১৭ বার কার্গোবাহী বিমানের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এক কেজি আলুর জন্য ভাড়া গুনতে হয় প্রায় ৭০০ টাকা। যেখানে ভারতের এ খাতের ব্যবসায়ীরা বিমানভাড়া দেন মাত্র ২৫০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী রফতানিকারকরা আগ্রহ হরিয়ে ফেলছেন।’

অন্তত ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী সবজি রফতানি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিমানে করে সবজি না পাঠিয়ে আমরা সমুদ্রপথে রেফার কনটেইনারের মাধ্যমে পচনশীল ফল, শাক-সবজি পাঠানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে কনটেইনারের ভাড়া ১ থেকে দেড় হাজার ডলার ছিল, সেটা বেড়ে ৫-৬ হাজার ডলারে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ দিলে সবজি ও ফল রফতানিতে লস আরো বাড়বে।’

সার্বিক প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে সবজি রফতানির পরিমাণ কমে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা রফতানিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশে রফতানি বাড়ানোর জন্য তাগাদা দিয়েছি।

কার্গো বিমান ও রেফার কনটেইনারসহ অন্যান্য কনটেইনারের ভাড়া কমানো গেলে সবজি রফতানি বৃদ্ধি পাবে বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন