ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রথম মাস উদযাপন করা হচ্ছে। এ বিপ্লব ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তার শাসনে দেশে দুর্নীতি ও ভঙ্গুর অর্থনীতি তৈরি হয়। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের গৌরব ফিরিয়ে আনা।

তিনি তরুণ, শ্রমিক ও দিনমজুরদের স্মরণ করে বলেন, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়েছেন। আমরা তাদের মনে করে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে তিনি আহত এবং দৃষ্টিশক্তি হারানোদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত মাসে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি শহীদদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তরুণ বিপ্লবীরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা পূরণে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, তারা তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য বিপ্লবের সময় রাস্তায় নেমেছিল। এখন তাদের পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে। তিনি আরো বলেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি সবাইকে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি জানান, একমাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের প্রথম কাজ হলো জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এরই মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর তদন্ত শুরু করেছে।

জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও আমলাদের আত্মসাৎ করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বিপ্লবের সময় গুরুতর আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আহতদের চোখের আলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে এবং শহীদ ও আহতদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত রয়েছে।

আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারকে সহায়তার জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, যাদের শাহাদাতের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে আমরা তাদের কখনোই ভুলব না।

তিনি বলেন, সরকার বলপূর্বক গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং দেশে গুম সংস্কৃতি বন্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের সবগুলো ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনের কাজ চলছে।

তিনি আরো বলেন, জাতির উদ্দেশে দেয়া শেষ ভাষণে তিনি সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। সরকার রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী নেতা ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে। তাদের সমর্থনও পেয়েছে। এছাড়া প্রবাসীরাও জাতি পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

ড. ইউনূস শহীদদের পরিবারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি জানান, শিগগিরই তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুঃশাসন ও স্বৈরাচার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি পূরণ করা। এজন্য আমাদের দরকার একতা ও সমন্বয়।

শহীদদের রক্তকে বৃথা যেতে না দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে তিনি বলেন, আমরা তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়বই। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন