চাল আমদানি লাগছে না, উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

গত আমন ও বোরো মৌসুমে দেশে রেকর্ড চাল উৎপাদন হয়েছে। ফলে গত অর্থবছরে দেশে চাল আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। এখনো দেশের সরকারি গুদামে চালের মজুদ আছে ১৪ লাখ টনের বেশি। উৎপাদনের এ ধারা ধরে রাখতে পারলে আগামীতেও দেশে চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুদকে ‘সন্তোষজনক’ মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ কারণে চাল আমদানিরও কোনো প্রয়োজন পড়বে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে খাদ্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৮ টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ১৯ টন। তিন সপ্তাহ আগে ৭ আগস্টও চালের মজুদ ছিল ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৪ টন। অর্থাৎ এরপর দেড় লাখ টনের বেশি মজুদ বেড়েছে। এছাড়া গমের মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার টন। ধানের মজুদ রয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার টনের বেশি।

সাধারণত আমন ও বোরো দুই মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত আমন মৌসুমে চাল উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টন, যা গত যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এছাড়া গত বোরো মৌসুমেও রেকর্ড চাল উৎপাদন হয়। ২ কোটি ২২ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয় ২ কোটি ২৪ লাখ টন। উৎপাদনের এমন রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ায় গত অর্থবছর কোনো চাল আমদানি করতে হয়নি। গত অর্থবছর দেশে চালের কোনো সংকটও তৈরি হয়নি। ফলে চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরেও চাল আমদানি করা লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে দেশে সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয় ৫০ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ন্যূনতম ১২ লাখ টন চালের মজুদ থাকতে হয়। সে হিসাবে আমাদের মজুদ এখন বেশি। গত আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন বেশি হওয়ায় মজুদ বেড়েছে। এবার চালের কোনো অভাব নেই। বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়েও যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। তাই এ বছরও হয়তো চাল আমদানিরও প্রয়োজন পড়বে না।’

তবে উৎপাদন ধরে রাখতে কৃষিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, সার উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গড়ে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে প্রতি বছর কৃষি উৎপাদন না বাড়াতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সেজন্য এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আর ইউরিয়া সার আমদানির পরিবর্তে নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এখন আমরা মাত্র ১০ লাখ টনের মতো উৎপাদন করি। তিনটি সার কারখানার মধ্যে একটি চালু আছে। বাকি দুটি কারখানা চালু রাখতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব কারখানা চালুর মাধ্যমে উৎপাদন সক্ষমতা উন্নীত করতে হবে ২০-২৫ লাখ টনে।’

দেশের কৃষি উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত উৎপাদন দেখানোটা ক্ষতিকর। বিগত সময়ে কৃষি উৎপাদনের তথ্য বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা ছিল। আর মূল্যস্ফীতি দেখানো হতো কম। এটা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। আগের উৎপাদনের সব তথ্য পর্যালোচনা করা দরকার।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক ও আইনি কাঠামোয় প্রথম নজর দিচ্ছে। তবে খাদ্য সরবরাহ ঠিকমতো না পেলে মানুষ ১০ দিন পরই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। তখন শুধু তারুণ্য দিয়ে হবে না। তাই আসন্ন আমন ও বোরো উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। এজন্য কৃষিবিজ্ঞানী এবং খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও এনজিওর সঙ্গেও বসতে হবে। শুধু হুকুম দিয়ে চলবে না। আগেও দেখা গেছে, দেশে আমন উৎপাদন ব্যাহত হলে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তাই মানুষের খাবার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সরবরাহ সংকটে সাময়িকভাবে কিছুটা দাম বেড়েছিল। তবে এখন সরবরাহ চ্যানেল পুরোপুরি ঠিক হয়েছে। ফলে চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও কমে আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন