কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রসারে ভর্তুকি অব্যাহত চান উদ্যোক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও প্রয়োজনীয় কৃষি শ্রমিকের জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে ধান, আলু, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে শ্রমিকের চাহিদা বাড়লেও এখন প্রয়োজনীয়সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যায় না। বাড়তি মজুরি দিয়েও গত আমন মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকট দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমন পরিস্থিতিতে গত সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল ফসল আহরণে অপচয় কমানো, উৎপাদন বৃদ্ধি, আহরণের সময় বাঁচানো ও উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনা। 

এ লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের ১২ ধরনের ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র দেয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা। ২০২০-২৫ সাল মেয়াদে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। এর মাধ্যমে হাওর ও উপকূলীয় এলাকার ৭০ শতাংশ ও সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের জুনে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর ভর্তুকির টাকা দেয়া হবে না বলে গুঞ্জন উঠেছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে খাতসংশ্লিষ্টদের। 

তারা বলছেন, ডলারের মুদ্রাহার প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনিতেই যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে। তাই এখন ভর্তুকি বন্ধ করা হলে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। সে রকমটা হলে সার্বিক উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগে প্রভাব ফেলতে পারে। 

এ বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কৃষি যন্ত্র ব্যবহারে প্রথাগত পদ্ধতির চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম খরচ পড়ছে কৃষকদের। কিন্তু এখন ডলারের দাম বাড়ায় আমাদের কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে টাকার সংকটে এবার ভর্তুকি পাওয়া যাবে না। কিন্তু এটা চালু থাকা উচিত। পাশাপাশি স্বল্প সুদে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। আর কৃষি নীতিমালায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের ঘোষণা দেয়া হলেও এখানে যন্ত্রপাতির জন্য আলাদা করে উল্লেখ করা উচিত।’

দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ পুরোটাই প্রায় আমদানিনির্ভর। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত আমদানি করা যাচ্ছে না জানিয়ে এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘শতভাগ মার্জিনে এলসি খোলার কথা বলছে একটি ব্যাংক। কিন্তু এভাবে আমরা এলসি খুলব কীভাবে। এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। গত ১৫-২০ দিন ধরে এমনটা হচ্ছে।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সফিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘একটি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে ভর্তুকির কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে আমাদের কর্মপরিকল্পনা কী হবে তা নিয়ে কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠকের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। আশা করছি, দ্রুতই এ বৈঠক থেকে একটি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন