দেশের কৃষি খাতে বালইনাশকের বাজার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার। তবে এর অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। এ খাতে আধিপত্য করছে প্রধানত বিদেশী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান রয়েছে ১০ শতাংশেরও কম। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যথাযথ নীতি সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বালাইনাশকের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। দেশেই বালাইনাশকের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো গেলে এ বাবদ কৃষকের ব্যয় অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হবে।
খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, বালাইনাশক বিধিমালায় আমদানিকারকদের বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে এখনো নীতিগত অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। ফলে আমদানিকারকরা সুবিধা নিয়ে বাজারে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। এখানে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা গেলে তা স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন প্রসারে ভূমিকা রাখবে। ফলে কৃষকের ব্যয়ও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এসব বিষয়ে নিয়ে কৃষি, শিল্প ও আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএম)। যদিও এর কোনো সমাধান হয়নি।
বালাইনাশক উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের ভাষ্যমতে, এখন দেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাত্র ২২টি। কিন্তু আমদানি করছে প্রায় ৭৫০ প্রতিষ্ঠান। নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে বিষয়টিকে স্থানীয় উৎপাদনমুখী করে তোলা সম্ভব হলে দেশে উৎপাদনকারীর সংখ্যা বাড়বে। ফলে আমদানির পরিবর্তে বালাইনাশককে রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোয় বালাইনাশকের বেশ চাহিদা রয়েছে। আফ্রিকায়ও এর বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। চাহিদার শতভাগ স্থানীয় উৎপাদননির্ভর করা সম্ভব হলে এক পর্যায়ে এসব দেশেও বাংলাদেশের বালাইনাশক রফতানি করা যাবে।
উৎপাদনকারীদের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি ও ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উৎপাদনকারীদের একক সোর্স থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমদানিকারকরা বিভিন্ন সোর্স থেকে আমদানির সুযোগ পায়। ফলে তারা কম মূল্যে পণ্য আমদানি করতে পারলেও উৎপাদনকারীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ফলে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তারা সক্ষমতায় পিছিয়ে যায়। আবার উৎপাদনকারীদের কাঁচামাল আমদানি করার জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদাভাবে ছাড়পত্র নিতে হয়। এতে দীর্ঘ সময় লাগায় বন্দরে পণ্য আটকে থাকে। ফলে পোর্ট ডেমারেজ দিতে হয় অনেক। এ কারণে শুল্কছাড়ের সুবিধাগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কিন্তু আমদানিকারকদের ক্ষেত্রে এমন কোনো ছাড়পত্র নিতে হয় না।’
এর আগে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির সোর্স উন্মুক্ত রাখার জন্য ২০২১ সালে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে এ উদ্যোক্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা জারি করা হলেও একটি সিন্ডিকেট এটি বাস্তবায়ন করছে না। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বালাইনাশক কারিগরি কমিটি (পিটাক) থেকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। বৈষম্যমূলক নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো গেলে কৃষক পর্যায়ে বালাইনাশকের দাম অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হবে। দেশেই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো গেলে বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশে উৎপাদিত বালাইনাশক পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে উদ্যোক্তারা নতুন কৃষি সচিবের সঙ্গে দেখা করে সমাধানের বিষয়ে চেষ্টা করবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের পরিচালক এসএম সোহরাব উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উৎপাদনকারীদের জন্য একাধিক সোর্স রাখার বিষয়ে আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আজই (গতকাল) একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলে এ সমস্যা আর থাকবে না।’
সর্বশেষ এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত গতকালের বৈঠকটির সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করা হয়নি।