বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক ও চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের জেরে গতকাল অন্তত ১৬৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। এর মধ্যে ঢাকার আশুলিয়া অঞ্চলের কারখানা রয়েছে শতাধিক। বাকিগুলো গাজীপুরের। শিল্প পুলিশ ও বিজিএমএইএর নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুরে গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিক ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এতে সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। পরে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও বিজিবির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আজ তৈরি পোশাক কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহায়তা দেবে। বিশৃঙ্খলা হবে না এমন আশ্বাস পাওয়ার পর আমরা কারখানা খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশ নিজেদের মতো করে পরিকল্পনা করছে। বিক্ষোভের কারণে আজ ১৬৭ কারখানা ছুটি হয়ে গেছে। কয়েকটি কারখানায় ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।’
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের আশপাশে কয়েকশ কারাখানা রয়েছে। সকালে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করলেও কাজ না করে বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে একের পর এক কারখানা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ।
শিল্প পুলিশ জানায়, ছুটি ঘোষণার পর কিছু কারখানার শ্রমিকরা বেরিয়ে গিয়ে অন্যান্য কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এরপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আরো অনেক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ সময় সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রপের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানে সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। এর মধ্যে চাকরির দাবিতে কিছু মানুষ কারখানার সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
গতকাল ছুটি ঘোষণা করা হয় শারমিন গ্রুপের একটি কারখানায়ও। এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘সকালে কারখানায় কাজ শুরুর পর বাইরে কিছু লোকজন অফিসের দুটি মিনিবাস ভাংচুর করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত কারখানায় ঢুকে ভাংচুরের আশঙ্কা থাকে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হয়।’
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলের কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঝামেলা শুরু হয়। পরে একে একে কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
কয়েক দিন ধরে গাজীপুরে বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে। বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতন পরিশোধসহ নানা দাবিতে এ আন্দোলনে নেমেছেন তারা। গতকালও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের কাজ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা। এসব কাজ করতে এসে আমরা অনেক কিছু দেখছি। নানা রকম স্বার্থের কারণে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বহিরাগতরা কাজ করছে। যারা আন্দোলন করছে, তারা শ্রমিক বয়সী, কিন্তু তাদের অধিকাংশ শ্রমিক নয়। এসব বহিরাগত কেন উসকানি দিচ্ছে, কারখানা ভাংচুর করছে, তা বলতে পারছি না।’
গাজীপুরের শ্রীপুরের ধনুয়া এলাকায় আর এ কে সিরামিকস টাইলস অ্যান্ড স্যানিটারি প্লান্টের শ্রমিকরা গত বছরের ইনক্রিমেন্ট এবং কিছু কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কর অবরোধ করেন। কারখানার স্যানিটারিওয়্যারের কাস্টিং সুপারভাইজার মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমাদের গত বছরের ইনক্রিমেন্ট ফেব্রুয়ারিতে দেয়ার কথা। কিন্তু আজও আমরা পাইনি। কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেও সমাধান পাইনি। আর আমাদের কারখানার বেশির ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভারতীয়। তাদের সঙ্গে আমাদের মতের মিল নেই। তারা আমাদের কোনো দাবিদাওয়া মানতে রাজি হয় না। আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে। তাই আমরা ভারতীয় কোনো কর্মকর্তা চাই না।’
বিজিএমইএর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদ মনসুর গণমাধ্যমে বলেন, ‘বহিরাগতদের ডিস্টার্বের কারণে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় অনেকগুলো কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরের কারখানা ৫৫টি।’
এদিকে তৈরি পোশাক কারখানার এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সিরামিকস কারখানা ও ওষুধ কারখানাগুলোতেও।