নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যার অবনতি, নয় জেলায় উন্নতি

ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫২ লাখ, মৃত বেড়ে ২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

বন্যায় ফেনী সদর হাসপাতালেও যাতায়াত করতে হচ্ছে ভেলায় করে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে বন্যাকবলিত ১১ জেলার মধ্যে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পানি কমতে শুরু করেছে বাকি নয় জেলায়। বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি গতকালও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন কোনো জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত বন্যায় ১১ জেলার ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫২ লাখ। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। 

গতকাল দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, ‘ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। নতুন করে কোনো জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।’ তিনি জানান, এবারের আকস্মিক বন্যায় ১১ জেলার ৭৩ উপজেলার ৫৪৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কোনো কোনো স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলা হলেও নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে অবনতির খবর পাওয়া গেছে। নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মাইজদীতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ বৃষ্টি আজও অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা শহর মাইজদী, চাটখিল ও সেনবাগের অনেক এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। 

গতকাল বিকালে স্থানীয়রা জানান, এখনো ফেনী জেলার বন্যার পানি প্রবেশ করায় নোয়াখালীর নতুন নতুন অনেক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় বিভিন্ন উপজেলার ২০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ফেনীর বেশির ভাগ পানি নোয়াখালী হয়েই মেঘনা নদীতে নেমে যাচ্ছে। ফলে কিছু পানি সেনবাগসহ আশপাশের উপজেলায় ঢুকে পড়েছে। এতে পানি তুলনামূলক বেড়েছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলে পানি সরতে শুরু করবে।’

এদিকে নোয়াখালী জেলার পানি প্রবেশ করায় লক্ষ্মীপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এছাড়া শনিবার রাতভর বৃষ্টি হওয়ার কারণেও জেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এর মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় ১৩ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া সম্ভব হয়েছে।

বন্যার প্রভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিগুণ হয়েছে শাক-সবজির দাম। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপণ্যসহ বেশির ভাগ জিনিসপত্রের জন্য তারা ফেনীর ওপর নির্ভরশীল। বন্যার কারণে ফেনীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় পণ্য সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। গতকাল দুই উপজেলায়ই পানি কমেছে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে শুরু হয়েছে যাত্রী পারাপার। তবে গাজীর বাজার এলাকায় সেতু ভাঙা থাকায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়নি।

কুমিল্লার তিতাসে বন্যার স্রোতে ভেসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে প্রবল স্রোতে ভেসে যায় তারা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন। নিহত দুই শিশু হলো আয়েশা (১০) ও ছামিয়া (৯)। তারা সম্পর্কে চাচাতো বোন। 

চাঁদপুরে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির প্রভাবে কচুয়া, শাহরাস্তি ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলার প্রায় ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পানির স্তর কমে এসেছে বেশির ভাগ নদীতে। গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৭ লাখের বেশি।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন