টানা দুই বছর ছোট ও মাঝারি গরুর বিক্রি বেড়েছে, চাহিদা কমেছে বড় গরুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি— বণিক বার্তা।

টানা দুই বছর কোরবানির বাজারে বেড়েছে পশুর চাহিদা। এর মধ্যে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হলেও কমেছে অস্ট্রেলিয়ান বড় গরুর চাহিদা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারি ও প্রান্তিক চাষীরা বেশি  লাভের আশায় অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড় বাজারে নিয়ে আসেন। কিন্তু এ ধরনের গরুতে চর্বি বেশি থাকায় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে এবারো রাজধানীর হাট ও খামারগুলোতে অবিক্রিত পশুর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বড় ষাঁড় ছিল চোখে পড়ার মত।

আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবারের ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ পশু কোরবানি হয়েছে। ২০২৩ সালে সারা দেশে কোরবানিকৃত পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৬টির বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে কোরবানি হয়েছে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি।

এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোরবানির জন্য এবার মোট ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু মজুদ ছিল। সে অনুযায়ী এবার ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৯টি পশু অবিক্রিত থেকে গেছে। এত পশু অবিক্রিত থাকায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। তবে সবচেয়ে বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে বড় বড় গরুর মালিকদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদন বেড়েছে। এর পাশাপাশি বেড়েছে পশু বিক্রিও। বাংলাদেশ ডেইরিফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ বছর এক কোটি ৩০ লাখ পশু মজুদ ছিল এবং কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখের মতো। এ দুটো সংখ্যা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এ হিসেবে প্রায় ২৫-২৬ লাখ পশু অবিক্রিত রয়েছে। অবিক্রিত থাকলেও গত দুই বছর পশু বিক্রি বেড়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো ইঙ্গিত। এবার পশুর দামও হাতের নাগালে ছিল। আমরা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি এটাই তার প্রমাণ।

অবিক্রিত পশুর মধ্যে বড় গরু ছিল তবে তা সংখ্যায় খুব বেশি নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের বারবার বলেছি অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড়গুলো দেখতে সুন্দর হলেও ওজন বেশি হওয়ার এর দেহে চর্বি বেড়ে যায়। যে একবার এ ধরনের গরু কেনে সে দ্বিতীয়বার এ ধরনের গরু এড়িয়ে চলে। সবাই মাংসের জন্য গরু কেনে। কেউই চায় না গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি হোক।

তিনি আরো বলেন, আমরা খামারীদের বারবার পরামর্শ দিয়েছি দেশী জাতের মাঝারো ও ছোট গরু পালন করেন। বড় গরু পালন করতে চাইলে সেটাও যেন দেশীয় জাতের হয়। যারা দেশীয় জাতের গরু পালন করেছেন তাদের বিক্রি কিন্তু ভালো হয়েছে। ২৫ লাখ পশু অবিক্রিত রয়েছে, এর মধ্যে বড় সংখ্যায় হবে এক হাজারের মত। তা সত্ত্বেও এবারের কোরবানির বাজার পশু বিক্রেতাদের জন্য ইতিবাচক ছিল।

উল্লেখ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ১৮২, চট্টগ্রামে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৫২০, রাজশাহীতে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১১১, খুলনায় ১০ লাখ ৮ হাজার ৮৫৫, বরিশালে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৩৮, সিলেটে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪২, রংপুরে ১১ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৩ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭টি পশু কোরবানি হয়েছে।

কোরবানি হওয়া পশুর মধ্যে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৯ গরু, ১ লাখ ১২ হাজার ৯১৮ মহিষ, ৫০ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৯ ছাগল, ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৪৯ ভেড়া ও ১ হাজার ২৭৩টি অন্যান্য পশু।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন