শেষ হলো কান চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের আসর। গত শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় কান চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। মূল ভবন প্যালে ডে ফেস্টিভ্যালে হয়েছিল এ আয়োজন। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের সব বিচারক ও উৎসব কর্তৃপক্ষসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা। ঘোষণা করা হয় মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। এ বছর সেরা সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে মার্কিন সিনেমা ‘আনোরা’। অর্থাৎ কানের সবচেয়ে বড় পুরস্কার স্বর্ণপাম জিতেছে আনোরা। এছাড়া সেরা চলচ্চিত্রকারের পুরস্কার পেয়েছেন মিগুয়েলে গোমেজ। ‘গ্র্যান্ড ট্যুর’ সিনেমার জন্য তিনি এ পুরস্কার পান। তবে চমক দিয়েছে ভারত। স্বর্ণপামের পর সেরা ধরা হয় ‘গ্রাঁ পিঁ’কে। এটি জিতে নিয়েছে ভারতের সিনেমা ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’।
প্রায় ৩০ বছর পর কানের মূল মঞ্চে পৌঁছে ভারতের সিনেমা। ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’ দিয়ে একরকম ইতিহাসই সৃষ্টি হলো। সারা দুনিয়ার সিনেমা ও সিনেমাভক্তদের চমকে দিয়েছে এ ঘোষণা। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন পায়েল কাপাডিয়া। এটি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। এর আগে তিনি বেশকিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।
কান
উৎসবে পায়েল নতুন নন। ২০১৭ তার ১৩ মিনিটের ফিল্ম
‘আফটারনুন ক্লাউডস’ কান
উৎসবের শিক্ষার্থী নির্মাতাদের বিভাগ সিনেফঁদাসোতে নির্বাচিত হয়। ২০২১ সালে কান উৎসবেই গোল্ডেন আই জিতেছিলেন ‘আ
নাইট অব নোয়িং নাথিং’ তথ্যচিত্রের
জন্য। এছাড়া ২০১৯ সালে ১৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র
উৎসবে পুরস্কার জিতে নেন পায়েল। সে বছর ইন্টারন্যাশনাল
কম্পিটিশন (ডকুমেন্টারি) বিভাগে ‘অ্যান্ড হোয়াট ইজ দ্য সামার
সেয়িং’-এর
জন্য শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার পান তিনি।
পায়েলের সিনেমাটিকে ‘ভারতীয় সিনেমা’ বলা যায়, কেননা এর নির্মাতা ও অভিনেত্রীরা ভারতীয়। তবে এটি প্রযোজনা করেছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান পেতি ক্যাওস। প্রযোজক হিসেবে আছে থমাস জাকিম ও জুলিয়ান গ্রাফের নাম। তবে এর সঙ্গে ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চক অ্যান্ড চিজ ও অ্যানাদার বার্থও আছে। এদিক থেকে অনসূয়া সেনগুপ্তর গল্পটা আলাদা। আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন তিনি। তবে ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করেননি। বুলগেরিয়ান নির্মাতা কনস্ট্যান্টিন বোজানভ পরিচালিত ‘দ্য শেমলেস’ সিনেমায় অভিনয় করে এ পুরস্কার পেয়েছেন অনসূয়া। তিনি কলকাতার মেয়ে। অর্থাৎ এ বছর একাধিক সিনেমা ও বিভাগে কান উৎসবে সাফল্য পেয়েছে সিনেমার ভারত।
ফিরে আসা যাক সেরা সিনেমার বিষয়ে। আনোরা একটি কমেডি-ড্রামা। শন বেকার পরিচালনা করেছেন এটি। রটেন টমেটোজে ৯৬ শতাংশ ভোট ও আইএমডিবিতে ৮ দশমিক ২ রেটিং পেয়েছে সিনেমাটি। সেরা নির্মাতার পুরস্কার পাওয়া মিগুয়েল গোমসের সিনেমাটি পিরিয়ড ড্রামা। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের বার্মা এ সিনেমার পটভূমি। রটেন টমেটোজে ৭৫ শতাংশ ভোট ও আইএমডিবিতে ৭ রেটিং পেয়েছে সিনেমাটি।
এছাড়া আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে চীনের গুয়ান হু পরিচালিত ‘ব্ল্যাক ডগ’। সৌদি আরবের ‘নোরাহ’ পেয়েছে স্পেশাল মেনশন। দক্ষিণ ফ্রান্সে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দ্যুবুসি থিয়েটারে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছে ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’। ডেমি মুর ও রে লিওটা অভিনীত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন কোরাইল ফারগেট। উৎসবে ‘এমিলিয়া পেরেজ’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নিয়েছেন যথাক্রমে জোয়ি সালদানা, আদ্রিয়ানা পাজ, সেলেনা গোমেজ ও কার্লা সোফিয়া। ‘কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছেন জেসি প্লেমনস। উৎসবে ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর জন্য জুরি প্রাইজ পেয়েছেন জ্যাক অডিয়াঁর।
এ বছর কান উৎসবে প্রিমিয়ার হয়েছে ইরানি নির্মাতা মোহাম্মদ রসুলফের ‘দ্য সিড অব আ সিক্রেড ফিগ’। সিনেমাটি নিয়ে ইরানে তার ওপর নানা চাপ ছিল। ইরান থেকে তিনি পালিয়ে কানে অংশ নিয়েছেন। এ সিনেমার জন্য সেরা চিত্রনাট্যের বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন রসুলফ। সিনেমার ওপর রাষ্ট্রীয় চাপ ও অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশকে ছাপিয়ে সিনেমা নির্মাণ ও তার প্রচারের জন্যই বিশেষ করে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে খ্যাতিমান এ নির্মাতাকে।