নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধির হারে শুভঙ্করের ফাঁকি: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: বণিক বার্তা/ফাইল

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মোট মজুরি ৫২ থেকে ৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হলেও, বাস্তবে বৃদ্ধির তা  ২৫ থেকে ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।  মজুরি বোর্ডের নিকট নিজেদের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে এ তথ্য জানায় টিআইবি।

মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণেই বেতন বাড়ানোর দাবি করে আসছে পোশাক শ্রমিকরা ও তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। এদিকে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ীও, পাঁচ বছর পরপর শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনার বিধান রয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। 

নূন্যতম মজুরি বোর্ডকে প্রেরিত চিঠিতে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত নূন্যতম মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসেবে পূর্ববর্তী গ্রেড সাত বা নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে মূল মজুরি নূন্যতম ৫২৩২ দশমিক ৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত নতুন মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৬৭০০ টাকা। অর্থাৎ এই গ্রেডে মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও, তা প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। গ্রেড চারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। একইভাবে, গ্রেড তিন, দুই ও এক-এর ক্ষেত্রে মূল মজুরি প্রকৃত বৃদ্ধি পাবে ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রতিবছর মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বাড়লে ২০২৩ সালে এসে নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে নূন্যতম মোট মজুরি টাকা হওয়ার কথা ৯৬৯৯ দশমিক ১৩ টাকা। নতুন প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী এই গ্রেডে সর্বমোট মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে ১২৫০০ টাকা। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশ সর্বমোট মজুরি বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও, তা প্রকৃত বিচারে বেড়েছে মাত্র ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক এর ক্ষেত্রে মোট মজুরি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে মাত্র ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ৯৩শতাংশ।

এছাড়া মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরো কম। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে পঞ্চম গ্রেডে পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫৫৭২ দশমিক ২৬ টাকা, যেখানে নতুন প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬৭০০ টাকা। মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে বলা হলেও তা মূলত বাড়ছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক- এ মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ১৬দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ। সর্বমোট মজুরির হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে একজন শ্রমিকের ৯৯১৩ দশমিক ৫০ টাকা পাওয়ার কথা। সর্বমোট মজুরি এই গ্রেডে ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১২৫০০ টাকা করা হয়েছে বলা হলেও, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে সর্বমোট মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ২৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক-এ প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূল মজুরি সর্বমোট মজুরির ৬০ শতাংশ ধরা হলেও, বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী তা ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বছর প্রতি ৫ শতাংশ মূল মজুরি বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হলেও, সামনের দিনে তুলনামূলক কম মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। যা এই মজুরি কাঠামোর বড় দুর্বলতা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক দশমিক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামগ্রিক বিবেচনায় পোশাক শ্রমিকদের নতুন প্রস্তাবিত নূন্যতম মজুরি জীবনধারণের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, দেশের সাধারণ মজুরি কাঠামো, জীবনযাপনের ব্যয় এবং এ সংক্রান্ত পরিবর্তন, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবীদের জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক বিবেচ্য, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং উচ্চ কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়সমূহ মাথায় রাখার কথা বলা হয়েছে। নতুন মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিভাবে বিবেচনা করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। বরং শ্রমিকের  নূন্যতম জীবনমান ও প্রয়োজন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাপন ব্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়সমূহ মোটেই গুরুত্ব পায়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন