দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শেষ হচ্ছে আজ ভোর ৬টায়। একদিন বিরতি দিয়ে আগামীকাল ভোর থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ, যা শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চলবে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।’ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও জনগণকে এ কর্মসূচি সফল করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী আবারো একতরফা নির্বাচনের বন্দোবস্ত করছে। নির্বাচন কমিশন যে সরকারের পথরেখা অনুসারে চলবে, তার প্রমাণ নিজেরাই দিচ্ছে। তারা সরকারের সাজানো প্রশাসনের কোনো রদবদল করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এটিই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একদলীয় বাকশালী নির্বাচন।’
ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর এখন পর্যন্ত ২২ কর্মদিবসের মধ্যে ১৯ দিনই হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ২৯ অক্টোবর এবং ১৯ ও ২০ নভেম্বর হরতাল এবং বাকি ১৬ দিন অবরোধ ডেকেছে দলটি। তবে এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বা পিকেটিং সেভাবে চোখে পড়ছে না। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোই বরং রাস্তায় নেমে মিছিল-সমাবেশ করছে। এসব কর্মসূচিতে বিশেষ করে বাসে চোরাগোপ্তা হামলা চলছে শুরু থেকেই। প্রায় প্রতিদিনই বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে রাজধানীসহ সারা দেশে ২৭টি যানবাহন পুড়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে ট্রেনের তিন বগিতে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বেলা আড়াইটায় বাসটিতে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট তা নিয়ন্ত্রণে আনে। এ তথ্য নিশ্চিত করে মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, বিআরটিসির একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
এর আগে ভোর ৪টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় তিনটি বাসে ও একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপির হরতাল কর্মসূচিতে দেশের ১৬ স্থানে আগুন লাগার তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে রাজধানীতে তিনটি; ঢাকা বিভাগে একটি; রাজশাহী বিভাগের নাটোর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে সাতটি; চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সাতকানিয়া উপজেলায় চারটি এবং জামালপুরে একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে নয়টি বাস, একটি কাভার্ড ভ্যান, ছয়টি ট্রাক, একটি সিএনজি ও একটি ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে যায়।
এদিকে হরতালের দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীতে প্রথম দিনের তুলনায় গণপরিবহন চলেছে অনেক বেশি। সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহনও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে সকালের দিকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। বেলা বাড়লে যাত্রী চাহিদার ভিত্তিতে কিছু বাস ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। অবরোধে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী পরিবহন, তেলবাহী পরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা (এস্কর্ট সার্ভিস) দিচ্ছে র্যাব। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে
আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। তাই দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী পরিবহন, তেলবাহী লরিসহ অন্যান্য যান চলাচলে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে র্যাব।’