সরকার বৃহত্তর বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টে ব্যবস্থা নিচ্ছে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমান সরকার বৃহত্তর বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আরো বেশি পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে আসতে পারে সেজন্য আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং দুদিনব্যাপী ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০২৩-এর উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩৯টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছি। এগুলো বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এককভাবে কোনো দেশ যদি একখণ্ড জমি চায় আমরা তাও দেব, আবার যদি কেউ যৌথ উদ্যোগে করতে চান সেটাও করা হবে অথবা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে করতে চাইলে সেটাও করা হবে।’

তিনি জানান, তার সরকার অনেকগুলো সংস্থা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (এইচটিপিএ) ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ)। বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোয় ওয়ান স্টপ পরিষেবাও চালু করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তম ভোক্তাবাজারে পরিণত হবে বলে আমাদের ধারণা। তখন যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকেও বাংলাদেশ যেন ছাড়িয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেই প্রচেষ্টাই আমাদের রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশাল জনসংখ্যা আছে। সেটাকে আমরা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাব। তাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে আমরা গড়ে তুলছি।’

টানা তিন মেয়াদে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলো ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিন গুণ বেড়ে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লাখ কোটি থেকে বেড়ে ৫০ দশমিক ৩১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।’

সরকারের বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ওপর ভিত্তি করে আজকের এ টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার, কৌশলগত অবস্থান, উচ্চ মুনাফা, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রফতানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাপক হারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ। পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতুর রেললাইন সংযোগ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।’

দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা আরো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই। প্রচেষ্টাকে আরো জোরদার করি। আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণও নেই। কারণ আমরা একটি বিজয়ী জাতি।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, এফআইসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসের এজাজ বিজয় প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন