
নবান্ন উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলী, মোকামতলা, মহাস্থান এলাকায় শেষ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছ মেলা। গতকাল আয়োজিত মেলায় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা কমিটির কর্মকর্তারা।
মেলা আয়োজক কমিটি জানায়, শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর নবান্ন উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলী, মোকামতলা, মহাস্থান এলাকায় বসে মাছ মেলা। শত শত বছর ধরে চলে আসা এ মেলার মূল বিষয় থাকে বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রথম কবে ও কখন এ মেলা শুরু হয়, তার সঠিক ইতিহাস জানা না থাকলেও বহু বছর ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলাকে ঘিরে শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী, রথবাড়ী, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্যাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গণেশপুর, রহবল শিবগঞ্জসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে চলে নানা আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়।
মেলার মাছ ব্যবসায়ী শিহাব হোসেন জানান, মেলায় হরেক রকম পণ্যসামগ্রী পাওয়া গেলেও মাছ মেলা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মেলার মাছ দিয়ে মেয়ে ও জামাইকে আপ্যায়ন করার রীতি গড়ে উঠেছে। আবার জামাইরা বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খাওয়ান। তিনি প্রায় ২৬ বছর ধরে এ মেলায় মাছের ব্যবসা করছেন। তার কাছে ১৬ কেজি ওজনের রুই মাছ ছিল। এছাড়া কাতল, সিলভার কার্প মাছ ছিল ১০-১৩ কেজি ওজনের। উথলী মাছের মেলায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ আসে। মেলা উপলক্ষে প্রচুর মাছ বেচাকেনা হয়। মেলায় আগের রাতেই মাছ আসতে শুরু করে। আর বেচাকেনা হয় কাকডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত।
মাছ কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর মোহন্ত জানান, বহু আগে থেকে এ এলাকার মানুষ নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। এদিন প্রতিটি বাড়ি আত্মীয়স্বজনের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয়। মূলত তাদের জন্যই বড় বড় মাছ কিনতে মেলায় আসা হয়। তার ঠাকুরদার কাছে শুনেছেন, প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এ মেলা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে মেলা।
শিবগঞ্জ উথলী মাছ মেলা কমিটির ইজারাদার আজিজুল হক জানান, অগ্রহায়ণের শুরুতে একদিনের মেলা হয়ে আসছে এখানে। মেয়ে-জামাই, স্বজনদের দেশীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেলায় আসা বড় বড় দেশীয় প্রজাতির মাছ। ভোর থেকে মাছ নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। শতাধিক দোকানে ১৫ কেজি ওজনের বাঘাইড়, বোয়াল, রুই, কাতল, চিতল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে। একদিনে মেলায় প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি মাছ বিক্রি হয়েছে।