দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত জ্বালানি পণ্য ডিজেল। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকেই শতভাগ আমদানিনির্ভর এ পণ্যের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানির পরিমাণ কমে গেছে। এতে বিক্রির পরিমাণও নিম্নমুখী হয়েছে। পাশাপাশি দেশে চলমান অনেকগুলো মেগাপ্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে আসায় এবং বিদ্যুৎ প্লান্টগুলোয় ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার বাড়ায় ডিজেলের চাহিদা কমেছে।
জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য বলছে, পরিবহন খাত ছাড়াও কৃষি সেচ ও বিদ্যুৎ খাতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ডিজেল বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৫ হাজার ৯০৯ টন। চলতি অর্থবছরের একই সময় জ্বালানি পণ্যটির বিক্রি নেমেছে ১৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫৪ টনে। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ২০ দশমিক ২১ শতাংশ। এমনকি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ১৪ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টন। অর্থাৎ গত তিন অর্থবছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ডিজেল বিক্রির পরিমাণ সর্বনিম্নে নেমেছে।
বিপিসির তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে জুলাইয়ে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬, আগস্টে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬১১, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৯১ হাজার ৩০৪ ও অক্টোবরে ৩ লাখ ২২ হাজার ১৮৩ টন ডিজেল বিক্রি করেছে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ে ৪ লাখ ২৬ হাজার ১৭৯, আগস্টে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫, সেপ্টেম্বরে ৪ লাখ ১২ হাজার ২৬১ ও অক্টোবরে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৬ টন ডিজেল বিক্রি করেছিল বিপিসি। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বিক্রি কমেছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৫ টন।
ডিজেল বিক্রি কমলেও চলতি অর্থবছরে বেড়েছে উড়োজাহাজের জ্বালানি (জেট ফুয়েল) বিক্রি। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৬ টন জেট ফুয়েল বিক্রি হয়েছে, যা ২০২২-২৩ সালের একই সময়ে বিক্রি হওয়া ১ লাখ ৫২ হাজার ২০১ টনের চেয়ে বেশি। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ফার্নেস অয়েল বিক্রির পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৪৮৫ টন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৬ হাজার ১৭৪ টনে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫ হাজার ৬৮৯ টন ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়েছিল। এদিকে জেট ফুয়েল ও ফার্নেস অয়েলের বিক্রি বাড়লেও সামান্য কমেছে অকটেন ও পেট্রলের বিক্রি।
বিপিসির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলছেন, ‘ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপিসির কাছে অনেক বকেয়া পায়, যার কারণে বাজারে ডিজেলের চাহিদা থাকার পরও আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। যদি এলসির মূল্য পরিশোধ ও ডলারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ করা যাবে। তখন আমাদের চাহিদা বা চুক্তি অনুযায়ী তারা ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি সরবরাহ করবে। তখন ডিজেল বিক্রিতে সমস্যার মুখে পড়তে হবে না।’
বিপিসির পরিচালক (বিপণন) ও যুগ্ম সচিব অনুপম বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, পেমেন্ট নিয়ে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিছুটা সমস্যা থাকলে সেটাও সমাধানের জন্য কথাবার্তা চলছে। কারণ ডলারের সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, এটা এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। সমস্যা সত্ত্বেও আমাদের কাছে আসা সরবরাহপত্র অনুযায়ী আমরা ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি।
বিপিসির এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি দেশে ফার্নেস অয়েলের বিক্রি বেড়েছে, কিন্তু ডিজেলের বিক্রি কমেছে। এর ব্যাখ্যা হলো, দেশের সরকারি বা বেসরকারি পাওয়ার প্লান্টগুলোয় এখন ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার বেড়েছে। এ কারণে তাদের ডিজেলের চাহিদা কমে গেছে।’