
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আওয়ামী লীগেরও চাওয়া। তবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি বাংলাদেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে এ দেশের জনগণ ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিসা নীতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। যদি কোনো কারণে নির্বাচন বানচালের কোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।’
তিনি বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগের ঘোষণায় বিরোধীদের কথাও বলা হয়েছে। এবার বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করতে পারবে না। এতে জনগণের জীবন বাঁচবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কে নিষেধাজ্ঞা দিল আর কে দিল না, তাতে কিছু যায়-আসে না। আমার ছেলেও এখানে আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়িঘর আছে। যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে-যায় না। আমাদের বাংলাদেশ তো আছেই।’
কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না, তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। ভিসা নীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে কিছু বলার নেই। কারো শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। জনগণের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় এসেছি এবং আছি। শুধু আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে আমার কিছু বলার নেই। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা জানান, খালেদা জিয়া বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তা সত্ত্বেও সরকারপ্রধান হিসেবে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড স্থগিত করে বাড়িতে থাকার এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, তার সরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) আওতা থেকে বের করে এনে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রথম আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তাদের সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে কারচুপির জন্য ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অসংখ্য নির্বাচন করেছে, যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তাই নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদের সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।’
যারা বিশৃঙ্খলা বা দেশের সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তাদের ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
দুর্নীতির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাপক দুর্নীতি থাকলে বাংলাদেশ বিশাল উন্নয়নের রোল মডেল হতে পারত না। সরকার শুধু মেগা প্রকল্পই তৈরি করেনি, উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।’
সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো অপপ্রচারে কান দেবেন না। কিছু লোক আছে, যারা দেশের কল্যাণ চায় না। প্রবাসীরা সচেতন থাকলে এ স্বার্থান্বেষী মহল সফল হতে পারবে না।’ এ সময় তিনি যথাযথ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়, তাদের নেতা কে—প্রশ্ন শেখ হাসিনার।
একই দিন সন্ধ্যায় ‘নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটন আওয়ামী লীগ’ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি তার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে?
বিএনপি নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, ইনশা আল্লাহ। পলাতক আসামি, অস্ত্র চোরাচালানকারী, খুনি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী (তাদের নেতা) এই যদি একটি দলের নেতা হয়, তবে মানুষ কেন সেই দলকে এবং তাকে ভোট দেবে? তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ সঠিকভাবে ভোট দেবে। বাংলাদেশের জনগণের অন্তত অনুধাবন করা উচিত যে তারা নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে এবং নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ায় আজ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। যারা বিদেশে থাকেন, তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বিদেশে কারো সঙ্গে কথা বলা যেত না, এখন মানুষ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে।’