ইশ সোধির ঘূর্ণিতে এলোমেলো বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিজেদের দুর্গ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ইশ সোধির ঘূর্ণিতে নাকাল বাংলাদেশ। ভারতের লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণ করা ৩০ বছর বয়সী কিউই এ লেগ স্পিনার গতকাল একাই নিলেন ৬ উইকেট। তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে (৬/৩৯) ভর করে বাংলাদেশকে ৮৬ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা স্বাগতিকরা ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে গুটিয়ে যায়। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের কোনো স্পিনারের এটাই সেরা বোলিং ফিগার। দেশের হয়ে তার চেয়ে সেরা বোলিংয়ের নজির আছে ছয়টি, যার সবই পেসারদের। ট্রেন্ট বোল্ট ও শেন বন্ডের দুটি এবং টিম সাউদি ও স্কট স্টাইরিসের একটি। 

এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০-তে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। বৃহস্পতিবার প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হয়। মঙ্গলবার একই মাঠে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। 

ধোনির ঘূর্ণি বলের কোনো জবাব বাংলাদেশের ব্যাটারদের যেন জানা ছিল না। অধিনায়ক লিটন দাসকে ষষ্ঠ ওভারে ফিরিয়ে শুরুটা অবশ্য করেছিলেন পেসার কাইল জেমিসন। এরপর সোধির ঘূর্ণিতে এলোমেলো স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনআপ। তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, তৌহিদ হৃদয়, তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসানকে টানা আউট করেন তিনি। 

মাঝে বুক চিতিয়ে লড়াই করা মাহমুদউল্লাহ শিকার হন অফস্পিনার কোল ম্যাককনচির। এরপর আবার সোধির আঘাত। ৩৮তম ওভারের শেষ বলে তিনি বোল্ড করেন হাসান মাহমুদকে। নিজের শেষ ওভারেও উইকেট পেতে পারতেন সোধি। যদিও স্লিপে তার ক্যাচ ছাড়েন অ্যালেন। ক্যাচটি নিতে পারলে তার বোলিং ফিগার দাঁড়াত ১০-১-৩৯-৭! এর পরও ব্যক্তিগত রেকর্ডটা তিনি ঠিকই গড়েছেন। ওয়ানডেতে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ৪/৫৮।

দুটি ছক্কা ও একটি বাউন্ডারি মেরে কিউইদের খানিকটা হতাশ করা নাসুমকে সাজঘরে ফেরান জেমিসন। তিনি লং-অনে ট্রেন্ট বোল্টকে ক্যাচ দেন। ৪২তম ওভারের প্রথম বলে খালেদ আহমেদের স্টাম্প গুঁড়িয়ে কিউইদের দাপুটে জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক লোকি ফার্গুসন।  

গতকালের ম্যাচে সবার চোখ ছিল তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহর দিকে। এ দুজনের ব্যাটই যে শুধু হেসেছে! তামিম ৫৮ বলে ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৪ ও মাহমুদউল্লাহ ৭৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৪৯ রান করেন দলের বিপদের সময়। 

বিশ্বকাপ সামনে রেখে দুজন রান পাওয়ায় তারা যেমন স্বস্তি খুঁজে পাবেন, তেমনি সমর্থক ও ম্যানেজমেন্টও। কেননা সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে বেশ ভুগেছে। ওপেনিংয়ের সংকট রয়েই গেছে। আর মিডল অর্ডারও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ার পুরনো অভ্যাসটা মাঝে মধ্যেই দেখা যায়। এ অবস্থায় তামিম ও মাহমুদউল্লাহর রান পাওয়াটা যেন প্রচণ্ড গরমের মাঝে এক পশলা বৃষ্টি!

তামিম, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের পর চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে গতকাল ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহর সামনে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রানের ক্লাবে নাম লেখানোর সুযোগ ছিল। যদিও মাইলফলক থেকে মাত্র এক রান দূরে থেমেছেন তিনি। ৪৯ রান করায় এখন তার নামের পাশে রানসংখ্যা ৪৯৯৯!

২১৯ ম্যাচে ৪ হাজার ৯৫০ রান নিয়ে শুরু করা এ ডানহাতি ব্যাটার ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। দলীয় ৭০ রানে তৌহিদ হৃদয় আউট হয়ে গেলে বিপর্যয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন। তামিমের সঙ্গে তার জুটিটা আশা দেখাচ্ছিল। যদিও তামিমের বিদায়ে মাত্র ২২ রানে শেষ হয় সেই জুটি। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে শেখ মেহেদী হাসানকে নিয়ে ৬৩ বলে ৪২ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। সোধির স্পিনে মেহেদী বোল্ড হলে জুটিটা আর বড় হয়নি। নাসুম আহমেদকে নিয়ে ১৫ রান যোগ করে মাহমুদউল্লাহ নিজেই সাজঘরে ফিরে যান। 

৮৮ বলে ১০৬ রান প্রয়োজন ছিল। চাপের সেই মুহূর্তে কোল ম্যাককনচির শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন অ্যালেনকে। বাংলাদেশের শেষ ভরসা হিসেবে টিকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়ে নিভে যায় লড়াইয়ের শেষ আলোটুকুও। এরপর ১৯ রানের মধ্যে বাকি তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এর আগে মুস্তাফিজুর রহমান (২/৫৩) শুরুতেই দুই উইকেট নিয়ে কিউইদের চাপে রাখেন। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে অভিষিক্ত পেসার খালেদ আহমেদ ও স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান উভয়ই তিন উইকেট নিয়ে অতিথি দলকে আড়াইশ রানের কাছাকাছি আটকে দেন। নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদ নেন একটি করে উইকেট। 

৩৬ রানে তিন উইকেট পতনের পর ব্লান্ডেল ও নিকোলস চতুর্থ উইকেটে ১১১ বলে ৯৫ রান তুলে বিপর্যয় সামাল দেন। নিকোলসকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন খালেদ। এরপর মেহেদীর স্পিনে সফরকারীরা চাপে পড়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের টম ব্লান্ডেল ৬৬ বলে ৬৮ ও হেনরি নিকোলস ৬১ বলে ৪৯ রান করেন। শেষ দিকে সোধি (৩৫), জেমিসন (২০), ম্যাককনচি (২০) ও ফার্গুসন (১৩) দলের সংগ্রহটা ভদ্রস্থ করেন। 

উইকেটকিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান ও চোটে পড়া বোলার তানজিম হাসানের জায়গায় গতকাল একাদশে আসেন পেস বোলার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ। এদিন ওয়ানডেতে দেশের হয়ে ১৪৬তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ঘটে খালেদের। অভিষেকে প্রথম ওভারেই উইকেট শিকার করেছেন খালেদ। পরে নেন আরো দুটি উইকেট। তবে দল হেরে যাওয়ায় অভিষেকটা মধুর হলো না তার। 

পরাজিত দলের অধিনায়ক লিটন দাস বলেছেন, ‘তাদের লোয়ার অর্ডার খুবই ভালো করেছে। আজ উইকেট খুব খারাপ ছিল না। কিন্তু আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যাট করতে পারিনি। আমাদের দুই সিনিয়র সদস্য (তামিম ও মাহমুদউল্লাহ) ব্যাটিংয়ে আজ ভালো করেছেন। আমাদের একজনকে ৮০, ৯০ কিংবা ১০০ করতে হতো।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ৪৯.২ ওভারে ২৫৪ (ব্লান্ডেল ৬৮, নিকোলস ৪৯; মেহেদী ৩/৪৫, খালেদ ৩/৬০)। বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ১৬৮ (মাহমুদউল্লাহ ৪৯, তামিম ৪৪; সোধি ৬/৩৯, জেমিসন ২/৩২)। ফল: নিউজিল্যান্ড ৮৬ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: ইশ সোধি (নিউজিল্যান্ড)। সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ১-০-তে এগিয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন