
বিশ্বের অন্যতম তিন পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন নিজেদের পরমাণু শক্তি বাড়াচ্ছে। এ লক্ষ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করেছে দেশ তিনটি। সম্প্রতি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণে এমনটা জানা গেছে। খবর সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য সুড়ঙ্গ খননসহ একাধিক অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশগুলো। এ নিয়ে গবেষণায় তিন দেশের তিন থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, কয়েক বছর আগের তুলনায় পারমাণবিক কর্মসূচির পরিধি বাড়িয়েছে দেশগুলো। এক্ষেত্রে উত্তর মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জে পারমাণবিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়েছে রাশিয়া। চীন জিনজিয়াং প্রদেশে ও নেভাদার মরুভূমিতে একই কার্যক্রম জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবারি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জেমস মার্টিন সেন্টার ফর নন–প্রোলিফারেশন স্টাডিজের অধ্যাপক জেফ্রি লুইস বলেন, ‘তিন দেশের তিন এলাকার যে স্যাটেলাইট ছবি পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সবক’টিতেই নতুন সুড়ঙ্গ ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। গুদাম হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া ওই এলাকগুলোয় যানবাহন চলাচলও বেড়েছে।’
বিশ্বজুড়ে সামরিক কর্মকাণ্ড কমাতে কাজ করেন অধ্যাপক জেফ্রি লুইস। এসব ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র হয়তো নতুন করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো শুরু করেছে। এসবের পেছনে অনেক ধরনের ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।’
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলো দেখানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক সেড্রিক লেইটনকে। অধ্যাপক লুইসের সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, ‘ছবি থেকে এটা পরিষ্কার যে তারা শুধু তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নের জন্য কাজ করছে না; নতুন করে পরীক্ষা চালানোর জন্যও কাজ করছে।’
পারমাণবিক অস্ত্র ও এর ঝুঁকি নিয়ে গত মাসে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তেনিও গুতেরেস। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘চলতি বছর আমরা ভয়ংকর অবিশ্বাস ও বিভক্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ঠিক এ সময়ে বিশ্বজুড়ে ১৩ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে। দেশগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নে আরো কাজ করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব ধ্বংসের একটি রেসিপি।’
সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে পড়েছে প্রায় পুরো বিশ্ব। একদিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া। এতে বিরোধ বাড়ছে বড় অর্থনীতি ও পরমাণু সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে। ফলে বড় ধরনের বৈশ্বিক সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়ছে। এর মধ্যেই সামনে এল এমন তথ্য।
প্রসঙ্গত, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ১৯৯৬ সালে ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে, সামরিক কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো নিষিদ্ধ। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের তালিকায় এ তিন দেশও রয়েছে। তবে চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো পদক্ষেপ নেয়নি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর ঝুঁকি রয়েই গেছে।