৬-৯ সুদের হার একটি ভুল পদক্ষেপ ছিল

ড. সেলিম রায়হান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক। মূল্যস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, সরকারের ভূমিকা ও বাজার সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

সপ্তাহখানেক আগে আলু, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এটি এখন পর্যন্ত কার্যকারিতা প্রমাণ করতে পারেনি। সরকার কেন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারল না?

আমরা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির কথা বলছি। এখন এ মূল্যস্ফীতি শুধু আলু, পেঁয়াজ অথবা ডিমের ওপর নির্ভর করছে না, সামগ্রিকভাবে সবকিছুর দাম বেড়েছে। এটি মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। আমরা গত মাসের যে হিসাব দেখলাম, তাতে দেখা যাচ্ছে গত দেড় দশকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে। এমন না যে এটা শুধু কয়েক মাসের ব্যাপার। এটা গত মাসের শুরুর দিক থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে, কোনো মাসগুলোয় কিছুটা হয়তো কমেছে। পরের মাসগুলোয় আবার বেড়ে গেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর একটা বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, এমনকি যারা মধ্যবিত্ত তারা যথেষ্ট চাপের মধ্যে আছে, সংসার খরচ চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। আমি মনে করি যে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য পদক্ষেপগুলো যেভাবে হওয়া উচিত ছিল, যে সময়ে যে উদ্যোগগুলো নেয়া দরকার ছিল, সঠিক সময়ে সে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়নি বলে সেটার ফল আজ আমরা দেখতে পারছি। তবে এটা ঠিক মূল্যস্ফীতির ট্রিগার যদি আমরা বলি, অবশ্যই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব ফেলেছিল। বৈশ্বিক পর্যায়ে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেল। বিশেষ করে সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত হলো। কিন্তু এতদিন পর এসে মূল্যস্ফীতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করলে আমার মনে হয় ব্যাপারটা যৌক্তিক হবে না। এর মধ্যে সরকার তো কয়েক দফা তেলের দাম বাড়িয়েছে। এমনকি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অন্যান্য যে পণ্য অথবা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার ছিল, বিশেষ করে মনিটরিং পলিসি, ফিসক্যাল পলিসি, বাজার ব্যবস্থাপনা, সেখানেও কিন্তু বেশকিছু ঘাটতি রয়েছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব গত বছর কয়েক মাস ছিল। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ অনেক দেশ এমনকি শ্রীলংকা দুই অংকের মূল্যস্ফীতি থেকে ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আমাদের দেশ কেন পারল না?

ঠিক বলেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যে প্রভাব সেটা কয়েক মাস বা গত বছর হয়তো একটা সময় পর্যন্ত ছিল। তারপর কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমা শুরু হয়েছে। সে সুফল আমরা নিতে পারিনি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। আর সে সাফল্যের জায়গাগুলো যদি আমরা দেখি, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এ পুরোটা সময়জুড়ে পেরেছে। আমরা যদি শ্রীলংকার কথা বাদও দিই তাহলে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরো অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কী দরকার ছিল যা আমরা করতে পারিনি। আর কোন পদক্ষেপ যা সে দেশগুলো করতে পেরেছে। আমি তিনটি বিষয়ের কথা বলব যেখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। নীতিনির্ধারণে ঘাটতি আছে এবং সে নীতি বাস্তবায়নে ঘাটতি আছে। প্রথমত, মুদ্রানীতি। আমরা জানি যে সাম্প্রতিক সময় অর্থাৎ নতুন মনিটরিং পলিসি করার আগ পর্যন্ত ৬-৯ যে সুদের হার যা আমরা চালিয়ে গেলাম। এটি আসলে কোনোভাবে বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা যে দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি তারা এমন ফিক্সড সুদের হার মেইনটেইন করেনি। এ রকম সময়ে মূল্যস্ফীতি যখন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে, তখন তারা মুদ্রানীতিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক একেবারেই করতে পারেনি। দীর্ঘ সময় ধরে তারা সুদের হারের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গকে ব্যবহার করতে পারেনি। এরপর আমরা দেখলাম, সুদের হারে যখন তারা আপওয়ার্ড অ্যাডজাস্টমেন্ট করল নতুন মুদ্রানীতিতে, সেটাও কিন্তু আমরা বলছি যথেষ্ট নয়। এ অ্যাডজাস্টমেন্টে যে সামান্য সুদের হার বেড়েছে তা সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারবে না। এটা এমন যে যখন দীর্ঘ সময় ধরে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেননি, তখন দু-এক জায়গায় যদি হঠাৎ অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হয়, সেটার ফল রাতারাতি পাওয়া যাবে এ আশা করা ভুল। সুতরাং এখন আমরা যে মূল্যস্ফীতির চিত্রটা দেখছি সেটা দীর্ঘ সময়ের, সঠিক নীতিনির্ধারণের প্রয়োগ করতে না পারার একটা ফল। সরকার কিন্তু একটা বড় পরিমাণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এবং সেই ঋণ বাজারে নতুন করে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার সামগ্রিকভাবে আমি যদি ম্যাক্রো পলিসির দিক থেকেও দেখি, সেটা হচ্ছে যে এক্সচেঞ্জ রেট বা মুদ্রা বিনিময় হারে বেশ কয়েক বছর ধরে একটি পলিসি সরকার নিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে স্থিতিশীল রাখার পন্থা অনুসরণ করছে। কিন্তু প্রয়োজনে যখন অবমূল্যায়ন দরকার, তখন সেটা করা হয়নি। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে টাকার ২৫-৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এটি কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে, আমদানীকৃত পণ্য যেগুলো আছে সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে এবং ডলারের বিপরীতে টাকায় দাম বেড়ে গেছে। দ্বিতীয় যে বিষয় সেটি সরকারের রাজস্বনীতি। সেখানে যে অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার ছিল সেটি হলো এ সংকটকালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর বিভিন্ন করছাড় দেয়া। আমদানি পণ্যের দাম বৈশ্বিক বাজারে যখন বেড়েছে, টাকার যখন ২৫-৩০ ভাগ ডেপ্রিসিয়েশন হয়েছে, তখন আমদানীকৃত অনেক পণ্যের ওপর সরকার একই হারে কর রেখে দিয়েছে। সেই করটা কিন্তু নতুনভাবে দেশের ভেতর অনেক পণ্যের দাম কমাতে সহায়ক হয়নি। আমি মনে করি, রাজস্বনীতির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জায়গায় কর অ্যাডজাস্টমেন্ট করে এবং করছাড় দিয়ে হলেও দেশের বাজারে আমদানীকৃত পণ্যের একটা সহনীয় মূল্য বজায় রাখার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যেত, সে জায়গায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা সাফল্য দেখতে পাইনি। কোনো কোনো খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে সরকার কর কমিয়েছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমরা তো একটি আমদানিনির্ভর দেশ। আমরা শিল্প উৎপাদনের জন্য প্রচুর কাঁচামাল আমদানি করি এবং সেসব জায়গায় কিন্তু একই করহার থাকার কারণে দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম বেশি রয়ে গেছে। তাতে ওইসব কাঁচামাল ব্যবহার করে যে পণ্যগুলো দেশে উৎপাদন হচ্ছে সে পণ্যের দামও কিন্তু উচ্চই রয়ে গেছে। এখন তৃতীয় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনা। এখানে এক ধরনের নৈরাজ্য রয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এ রকম সংকটের সময় বাড়তি সুযোগ নেয়ার জন্য সাময়িক সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে যেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। কেন পণ্যের দাম এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এর কোনো জবাব তাদের কাছে নেই। এ রকম বাজার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম কার্যকরী ব্যবস্থা দেখা যায়নি।

আপনি কি সিন্ডিকেটের কথা বলছেন?

এটাকে সিন্ডিকেট বলতেই পারেন, অবশ্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন ভোক্তা অধিকার বলছে যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একচেটিয়াভাবে দাম নির্ধারণ করছে যাতে তারা বাজারে এক ধরনের সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা করেছে। আবার কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহকারী হাতে গোনা কয়েকজন। সেক্ষেত্রে ভোজ্যতেল, চিনি, সেখানে আমদানীকারক মাত্র কয়েকজন।

আমি যদি ভোজ্যতেল বা চিনির কথাই ধরি, যারা এগুলো আমদানি করছে তারা কিন্তু এটা শুধু প্রক্রিয়াজাত করেই বিক্রি করছে, বাইরে থেকে ক্রুড অয়েল আনছে। সেটিকে পরিশোধন করছে। চিনির ক্ষেত্রেও তারা এভাবে বিক্রি করছে। এখানে ভ্যালু অ্যাডিশনের পরিমাণ কিন্তু কম। শুধু এ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সুবিধার জন্য ভোক্তাদের কষ্ট দেয়া হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যদি সরাসরি চিনি বা ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়, তাহলে এসব ভোজ্যপণ্যের দাম কম হবে। আমার কাছে মনে হয়, বাজারের সর্বস্তরেই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের বিভিন্ন বাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ হওয়া দরকার। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে নানা ধরনের ভ্যারিয়েশন দেখা যায়। এক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে না পারা একটি ব্যর্থতা। আর এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রহীনভাবে চলতে থাকা আসলে বাজার ব্যবস্থাপনার এক বিরাট দুর্বলতাই প্রকাশ করে। আমাদের সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন প্রতিযোগিতা কমিশন। তাদের কাজ হচ্ছে সামগ্রিকভাবে বাজারের অব্যবস্থাপনা তদারকি করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তবে সামগ্রিক যে অব্যবস্থাপনার চিত্র, তাতে তাদের যে লোকবল, সামর্থ্য সেটি কিন্তু একেবারেই সীমিত। 

যেসব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, বাজার ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে পেরেছে, তারা একটি প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের মধ্যে বাজার ব্যবস্থা রাখতে পেরেছে। আমাদের দেশের মতো হুটহাট করে কিছু অভিযান পরিচালনা করছে এ রকম নয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বাজারের মধ্যে একটি সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন। যেখানে ব্যবসায়ী, স্থানীয় ভোক্তার পাশাপাশি সরকারি প্রশাসনও এ ধরনের একটি তদারকির মধ্যে থাকবে। না হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। 

এখন সবার মনেই একটা প্রশ্ন যে বাজার কি নির্দিষ্ট কিছু ভোগ্যপণ্যের জন্য গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি? দেখা যাচ্ছে যে তারা পণ্যের দাম নির্ধারণ করছে, অথচ তাদের কাছে মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে না। এ অস্বচ্ছতা, জবাবদিহিহীনতার ফলে বাজার অব্যবস্থাপনা দিন দিন প্রকট হচ্ছে বলে আমার ধারণা। 

সুতরাং আমি মনে করি, শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠায় আমাদের একটি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার, না হলে মুদ্রাস্ফীতি কমানো সম্ভব না। আর অন্যদিকে এটাও মনে করার কোনো কারণ নেই যে কেবল সুদের হার বাড়ালেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনা এগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা যদি সমন্বিতভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একদমই কঠিন হয়ে পড়বে। 

গত আগস্টের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে বেশি। গ্রামের মানুষ তো উৎপাদনকারী ও ভোক্তা। গ্রামে শহরের চেয়েও খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়াকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গ্রাম ও শহরের মধ্যে মূল্যস্ফীতির ব্যবধান ব্যাখ্যা করা আসলেই একটু কঠিন। তবে এখানে আনুমানিকভাবে আমরা বলতে পারি, কয়েক দশকে আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে, যার প্রভাব কিন্তু গ্রামেও পড়েছে। সেখানে আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাইরেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়েছে। যেমন টিভি, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক পাখা। এসব ব্যবহারের ফলে তাদের জীবনযাপনের অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। উল্লিখিত যেসব পণ্যের কথা বললাম এগুলো কিন্তু আমদানির ওপর নির্ভরশীল। যার ফলে হয়তো গ্রামেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। 

আরেকটি বিষয় হতে পারে কিনা যে রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে গ্রামের মানুষও স্রেফ ভোক্তায় পরিণত হচ্ছে, যার ফলে কৃষির উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।

গ্রামে একদিকে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, পাশাপাশি উৎপাদকের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। এছাড়া অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করছে এমন সংখ্যাও বেশি। অন্যদিকে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, যারা ক্ষুদ্র কৃষক তারা যে পরিমাণ উৎপাদন করছেন সেটা দিয়ে তাদের সারা বছরের খোরাকি পূরণ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তাদের খোরাকির একটা অংশ বাজার থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে যাতে সামগ্রিকভাবে বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বাজারের ওপর গ্রামীণ লোকজনের নির্ভরশীলতা বাড়ায় এর মূল্যের প্রভাবও গ্রামীণ ক্রেতাদের ওপর পড়েছে যার ফলে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন