বিআইডিএসের সেমিনারে বক্তারা

সরকারি কেনাকাটায় সর্বনিম্ন দরদাতার কাজ পাওয়াই উৎকৃষ্ট পদ্ধতি নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্তমানে সরকারি কেনাকাটায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেয়া হয়। কিন্তু এতে করে ভালো মানের দরদাতারা কাজ না পেয়ে নিম্ন দরদাতারাই কেনাকাটার কাজ বাগিয়ে নেয়। এতে কাজের মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকে তেমনি কম মূল্যে দরপত্র আহ্বান করে পরে আবার ব্যয় বাড়াতে হয় কিন্তু উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে তা অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ। এতে সর্বনিম্ন দর দেয়ার প্রবণতা কমার পাশাপাশি কাজের মানও বাড়বে। 

গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থার মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফাহাদ খলিল। ‘কম্পিটিটিভ প্রকিউরমেন্ট উইথ এক্স পোস্ট মোরাল হ্যাজার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার মণ্ডলসহ বিআইডিএসের গবেষকরা।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ফাহাদ খলিল বলেন, ‘সর্বনিম্ন দরদাতার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাজ্যেও অনেক আলোচনা হয়েছে একসময়। কম দরদাতাই যে ভালো, বিষয়টি এমন নয়। আবার অনেক প্রতিযোগী থাকাটাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। তাই চিলি, চীন, ইতালি, জাপান, পেরু, সুইজারল্যান্ড এবং তাইওয়ানসহ কয়েকটি দেশে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের প্রতিযোগীরা অটোমেটিক বাতিল হয়ে যায়। প্রতিযোগী কমানোর জন্য এট্রি ফি, প্রাথমিক পর্যালোচনা, ডিপোজিটসহ বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি বর্তমানে পদ্ধতির সঙ্গে বেমানান মনে হলেও প্রতিযোগী কমিয়ে রাখাটা একটি কৌশল।’

এক্ষেত্রে ইতালির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে সব বিডারের মধ্য থেকে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের নিচের সব বিডারকে বাদ দেয়া হয়। আর এর ওপরের পর্যায়ের সর্বনিম্ন বিডারকে কাজটা দেয়া হয়। ফলে এখানে সর্বনিম্ন দর দেয়ার প্রতিযোগিতা থাকে না। আবার ইতালিতে সব বিডারের মোট দরের একটি গড় হিসাব বের করা হয়। পরে গড়ের নিকটবর্তী বিডারকে কাজটা দেয়া হয়। আর কাজের মান ঠিক রাখার জন্য বোনাস রাখলে ঠিক সময়ে কাজ শেষ করা যায়। একই সঙ্গে ঠিকমতো কাজ না করলে জোরালো শাস্তি দেয়ার বিধান রাখা যায়। আর ক্রয় কার্যক্রমে বিডার বাছাই করেই দায়িত্ব শেষ না করে বরং নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজ আদায় করে নেয়া এবং মনিটরিংয়ের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।’

সভাপতির বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, এখানে তিন বছরের কাজ ১৩ বছর লেগে যাওয়ার সংবাদ আমরা প্রায়ই সংবাদে দেখি। হয়তো সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাওয়ায় এমনটি ঘটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। দেশের বিদ্যমান ক্রয় পদ্ধতি সংস্কারের সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এটি সরকার ভেবে দেখতে পারে। নতুন প্রজন্মের কিছু ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক থেকে বেশি হারে ডিপোজিট সুদ দিয়ে থাকে। এটা সর্বনিম্ন বিডারের মতো কোনো বিষয় কিনা সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. আব্দুস সাত্তার মণ্ডল বলেন, আইসিটি খাতে এখন আরো ভালো বিডার পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সেখানে সর্বনিম্ন দরদাতা সব কাজ পাচ্ছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও একটি কারণ। তবে অনলাইন টেন্ডার চালু হওয়ায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। 

প্রশ্নোত্তর পর্বে অধ্যাপক ফাহাদ খলিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিউট্রাল বিশেষজ্ঞ দিয়ে বিডারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। প্রতিযোগী কম হলে দুর্নীতি এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতার হারও কমে আসে বলে জানান তিনি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন