
বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব এফেরিসিস সচেতনতা দিবস-২০২৩ পালিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে
একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ। আমেরিকান সোসাইটি ফর এফেরেসিস প্রতি বছর সেপ্টেম্বর
মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার বিশ্ব এফেরেসিস সচেনতা দিবস পালন করার নির্দেশনা প্রদান করে
থাকে। এফেরেসিস ডোনার এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে
ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে এ দিবসটি পালিত হয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিএসএমএমইউর
ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে উক্ত দিবসটি পালিত হলো।
এফেরেসিস
সচেতনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত থেকে বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার
উদ্বোধন করেন। পরে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ক্লাস রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
হয়। সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ঐ সভায়
সভাপতিত্ব করেন ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল
ইসলাম।
প্রধান
অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘প্রতিটি দিবসের উদ্দেশ্য থাকে জনসচেতনতা সৃষ্টি
করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর ট্রান্সফিউশন
মেডিসিন বিভাগ উদ্বোধন করেছিলেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও রোগীদের জীবন
বাঁচাতে রক্তের বিরাট অবদান রয়েছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু জনসাধারণের রক্তদানে যেমন
এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, একই সঙ্গে রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োনীয়তাও
অনুভব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক,
শিক্ষার্থীরা বর্তমানে রক্ত নিয়ে প্রচুর গবেষণা করছেন। যার কারণে রক্তের মাধ্যমে
বর্তমানে অনেক জটিল জটিল রোগের সেবা বাংলাদেশেই দেয়া সম্ভব হচ্ছে। সে কারণেই
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
গবেষণা খাতে বরাদ্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই গবেষণার সুফল হিসেবে রোগ
প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমন সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে
রোগীদের রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
উপাচার্য
তাঁর বক্তব্যে মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে
বলেন, ‘রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই বরং রক্তদানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে
রক্তদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ রক্তদানের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।’
আলোচনা
সভায় অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিভাগে আরো অত্যাধুনিক চিকিৎসা
ব্যবস্থা সংযোজন করা হচ্ছে। যার ফলে রক্তরোগে আক্রান্ত কোনো রোগীকে দেশের বাইরে
উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।’
আলোচনা
সভায় অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সহকারী অধ্যাপক
ডা. সোনিয়া শারমিন, গবেষণা সহকারী ডা. খান আনিসুল ইসলাম, মেডিক্যাল অফিসার ডা.
ফিরোজা বেগম, ডা. সুর্বণা সাহা, ব্লাড প্রোগ্রাম অফিসার ডা. নাদিয়া শারমিন তৃষা,
কাউন্সিলর ও মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক সুব্রত বিশ্বাস, চিফ রেসিডেন্ট ডা. খাদিজাতুল
কোবরা, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডা. মেহেদী হাসান, ডা. রনি রায়সহ ছাত্র-ছাত্রী, অত্র
বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীরা উপস্থিত
ছিলেন।
এফেরেসিস
প্লাটিলেট ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এফেরেসিস
প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই বিভাগ থেকে
করোনাকালীন কনভালেসেন্ট প্লাজমা সংগ্রহ এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সরবরাহ করা
হয়েছে। বন্ধ্যাত্বসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য স্টেম সেল সংগ্রহ ও চাহিদা মোতাবেক
সরবরাহ করা হচ্ছে। লিভার ডায়ালেসিস ও থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ চিকিৎসা সেবা
দেয়া হচ্ছে। গুলেন বারী সিনড্রম, মাইয়েসথেনিয়া গ্রেভিস, রেনাল এলোগ্রাফট রিজেকশন,
এসএলই উয়িথ আরপিজিএন, ক্রোনিক ইনফ্লামেটারি ডিমাইলেটিং পলিনিউরোপ্যাথি,
ট্রান্সভারস মাইলাইটিস, মাল্টিপোল মাইলোমা, ফ্যামেলিয়ার হাইপারলিপিডিমিয়া,
এটিপিক্যাল হিমোলাইটিক ইরেমিক সিনন্ড্রম, ডিকমপেনসেটেট লিভার সিরোসিস, থ্যাইমোমা,
সিকেল সেল ডিজিস, গ্রেভস ডিজিস, এ্যাকুট অন ক্রোনিক লিভার আক্রান্ত রোগীদের
প্লাজমা এক্সচেঞ্জ করা হচ্ছে।