উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর সংকল্প নিয়ে হাভানায় শেষ হয়েছে জি৭৭ সম্মেলন। ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া এ আয়োজনে শতাধিক দেশের প্রতিনিধিরা ছাড়াও ৩০ জনেরও বেশি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেন। সদস্য না হয়েও সম্মেলনে যোগ দিয়েছে চীন। ‘জি৭৭ প্লাস চায়না’ ব্লকের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে বেইজিং। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা, প্রবৃদ্ধিতে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা, ঊর্ধ্বমুখী বাণিজ্য ঘাটতি ও ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই বাড়ছে বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা। খবর নিক্কেই এশিয়া।
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জি৭৭। বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ১৩০টি দেশ ব্লকটির সদস্য। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত বিশ্বের বৃহত্তম বহুজাতিক সহযোগিতা সংস্থা। বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বসবাস ব্লকটিতে। এতে অন্তর্ভুক্ত জাতিসংঘের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য। সদস্য না হলেও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে চীনের সঙ্গে। জোটের সঙ্গে চীনের এ সম্পর্ক পরিচিতি পেয়েছে ‘জি৭৭ প্লাস চায়না’ নামে।
সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও বাণিজ্য ঘাটতির কারণে গরিব দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। চীন ও জি৭৭ ভুক্ত দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’ আন্তোনিও গুতেরেস মনে করেন, উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য জি৭৭ প্লাস চায়না একটা আশার আলো হিসেবে কাজ করবে। তৈরি করবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। সম্মেলনে আরো ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থার প্রতি জোর এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়।
আন্তোনিও গুতেরেস জি৭৭ এবং চীনকে বহুজাতিকতাবাদের প্রসারকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিউবার বিশেষজ্ঞ র্যামন পিচস বলেন, ‘জি৭৭ ও চীনের হাভানা সম্মেলন বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতির পাশাপাশি ভূমিকা রাখবে জলবায়ু সমস্যায় এগিয়ে আসার মাধ্যমে।’ সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়।
১৯৯০-এর দশক থেকেই জি৭৭-এর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বাড়ছে। এবারের সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-ক্যানেল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে চীনের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ ত্বরান্বিত হয়েছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মাধ্যমে।’
ইউনিয়ন অব দ্য কমোরোসের প্রেসিডেন্ট আজালি আসুমানি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনেন। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট কভিড-১৯ মহামারীর সময় চীনের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘চীনের বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেখে আমি অভিভূত।’
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওরতেগা দাবি করেছেন, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে বেইজিং। অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে চীন দীর্ঘদিন ধরেই দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিল, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশটির ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য লি শি। এ আয়োজনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উদীয়মান দেশগুলোয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা এবং সেজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো।
হন্ডুরাস গত মার্চে তাওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। জি৭৭-এর সদস্যদেশগুলো নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তারের মাধ্যমে বিন্যস্ত হচ্ছে নতুন বাস্তবতায়।