অটো রিকশা পাল্টে দিয়েছে ট্রান্সজেন্ডার নারীর জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: এপি

লজ্জা-সংশয় ও পরিবারের তুচ্ছতাচ্ছিল্য উপেক্ষা করে আগেই পথে নেমেছিলেন ভারতের ট্রান্সজেন্ডার নারী প্রীতি। এখন বিদ্যুচ্চালিত অটো রিকশা আরো গভীরভাবে পাল্টে দিয়েছে তাকে। প্রীতির স্বচ্ছল জীবন হয়ে উঠেছে অন্য ট্রান্সজেন্ডার নারীদের জন্য উদাহরণ। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এপি তুলে ধরে তার জীবন বদলে ঘটনা।

প্রীতি জানান, শারীরিক গঠনের জন্য তাকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়েছে। তবে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে দাতব্য সংস্থার দেয়া অটো রিকশা।

ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় প্রীতিকে নিয়ে পরিবারে ছিল অস্বস্তি। এশিয়ার অনেক দেশে সাধারণত যেমনটা হয়ে থাকে। একপর্যায়ে তাকে পরিবার থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে।

প্রীতি জীবিকার সন্ধানে প্রথম পা রাখেন বেঙ্গালুরুতে। সহায়-সম্বলহীন ও নিঃসঙ্গ জীবনে শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। পদে পদে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় তাকে দলিত করেছে, সুযোগ হয়নি স্বাভাবিক কোনো কাজ পাওয়ার। তাই জীবিকার প্রথম উপার্জন শুরু ভিক্ষবৃত্তি দিয়ে। এভাবে কেটে গেছ এক দশক। প্রীতির ভাষ্য, ‘আমি কখনো এমন জীবন চাইনি।’

৩৮ বছরের প্রীতি এখন ভালো আছেন, দৈনিক দুই হাজার রুপি আয় করছেন তিনি।

নারীদের জন্য ব্যতিক্রমী হলেও এ পেশা প্রীতিকে আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে দাতব্য সংস্থা শিশু মন্দির। গতবছরের মার্চে প্রতিষ্ঠানটি প্রীতিকে শুধু অটো রিকশাই দেয়নি। দিয়েছে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি ও নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

ভারতে নারীদের অটো রিকশা চালানো বা মালিকানা খুব একটা দেখা যায় না। যদিও দেশটির রাস্তায় লাখ লাখ তিন চাকার বাহনগুলো চলে। সে হিসেবে প্রীতিকে অটো রিকশার গর্বিত মালিক বলা-ই যায়।

সমাজ বিশ্লেষকরা দাতব্য সংস্থার এমন উদ্যোগকে সাহসী বলে অভিহিত করেন। ভারতে বর্তমানে এই বৈদ্যুতিক বাহনের চাহিদা আকাশচুম্বী। এর মাধ্যমে বাড়ছে কর্মসংস্থানও। প্রীতির উদাহরণ দেখিয়ে দিয়েছে এটি ট্রান্সজেন্ডার নারীদের সাবলম্বী করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

তারা বলছেন, যদিও ইভি অনুদানের ঘটনা কম। তবে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের এমন কর্মসংস্থান অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।  

এ বৈদ্যুতিক যান পরিবেশ বান্ধব ও এর মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে বলে জানান দাতব্য সংস্থা শিশু মন্দিরের মহাসচিব সি আনন্দ। তিনি আরো জানন, সংস্থাটি ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ যাবৎ ১৭টি অটো রিকশা অনুদান হিসেবে বিতরণ করেছে।

অটো রিকশার পাশাপাশি প্রীতিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স পেতে সহায়তা করেছে শিশু মন্দির।

আর্থিক উন্নয়নের পাশাপশি এমন উদ্যোগ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতেও সাহায্য করছে বলে মনে করছেন সমাজ চিন্তকরা। বেঙ্গালুরু ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্টাডি অব সায়েন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক এসব উদ্যোগ স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে।

তার মতে, প্রীতির মতো আরো ট্রান্সজেন্ডার নারীদের যদি এ বৈদ্যুতিক বাহন চালাতে উৎসাহিত করা যায়- তাহলে সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। সার্বিকভাবে দেশের কল্যাণেও তাদের ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন