
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি মাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৬৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২ হাজার ২০১ জন সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ২০১ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯২৬ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরের ১ হাজার ২৭৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ছয়জন ঢাকার ও দুজন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫১ হাজার ২৭ আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়েছে ৫৫ হাজার ৪০২ জন। এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ১ লাখ ১৭৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৭ হাজার ৮১০ ও ঢাকার বাইরের ৫২ হাজার ৩৬৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যান গত ২৪ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। চলতি বছর ঢাকায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ৯৫৩ ও ঢাকার বাইরে ৫৬ হাজার ৬৭৭ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ১ হাজার ২৭৫ জন ঢাকার বাইরের।
দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তিন মাস ধরে রোগী ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের এ সময়ে এসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগটির প্রাদুর্ভাবে বৈচিত্র্য দেখা গেছে। মূলত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এ রোগ আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। গত বছরের ওই দুই মাসে হাসপাতালে সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী ভর্তি হতে দেখা গেছে। সে বছরেও বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক পরিবর্তনে দেখা গিয়েছিল। একই ধারার বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন রোগতত্ত্ববিদরা।
সরকারের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বলছে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ ও জুনে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। চলতি আগস্টের ২৩ দিনে ডেঙ্গুতে ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত জুলাইয়ে সর্বাধিক ২০৪ জনের মৃত্যু হয়। জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ছয়, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে দুই, মে মাসে দুই ও জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
দেশে প্রথম ২০০০ সালে ডেঙ্গু রোগতত্ত্বের গুরুত্ব পায়। সে বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় ও মারা যায় ৯৩ জন। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু। সে সময় ডেঙ্গুকে ঢাকা ফিভার নামে অভিহিত করা হয়। ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে মারা যায় ২৮১ জন। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক অর্থাৎ এক লাখের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। মারা যায় ১৬৪ জন।