
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা ও
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভাতা ২ হাজার টাকা করার দাবিসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে
সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ। আগামী ৬ দিনের মধ্যে এ দাবি না মানলে বড়
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে
সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে
জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে এক অবস্থান
কর্মসূচিতে এসব দাবি জানানো হয়।
আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক
সমাজের সংহতি সমাবেশের আহ্বায়ক সালমা মাহবুব। এর মধ্যে দাবি না মানলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও
সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোট আইনুন নাহার সিদ্দিকা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল হাকিম রানা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু
সরকার, জাতীয় বধীর সংস্থার
সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস রিপনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
১১ দফা দাবিগুলো হলো— ২০২৩-২৪ জাতীয় বাজেটেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা
মাসিক ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা
এবং শিক্ষা উপবৃত্তি মাসিক ২ হাজার টাকা করতে হবে।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভাতা ও উপবৃত্তি উভয়ই বরাদ্দ করতে হবে,
প্রতিবন্ধীদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে
বিশেষ নীতিমালা (কোটা) প্রণয়ন, চলতি বাজেটেই বাংলাদেশ
ব্যাংকে ১ হাজার কোটি টাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উদ্যোক্তা
তহবিল গঠন, অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন
অধিদফতরকে কার্যকর করা, বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট এবং
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, আদালতসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে
বিনামূল্যে বাংলা ইশারা ভাষার দোভাষী সেবা নিশ্চিত করা, শিক্ষা
ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা, নিরন্ন, শ্রমজীবী-মেহনতি প্রতিবন্ধী মানুষদের
১টি বাড়ি ১টি খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করা। এছাড়াও
গুরুতর প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য ও কেয়ারগিভার ভাতা চালু
করা, প্রবেশগম্য অবকাঠামো এবং গণপরিবহন নিশ্চিতে
সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয়
সংসদ, স্থানীয় থেকে জাতীয়, সব
পর্যায়ে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা ও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট করার দাবি জানানো হয়েছে।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ১১ দফা দাবি
নিয়ে রাষ্ট্র বা সরকারকে স্মারকলিপি দিতে দিচ্ছে না। বরং শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, যারা হুইল চেয়ার বসে কাজ করেন রাষ্ট্রীয় পুলিশ তাদের হুইল চেয়ার ফেলে
দিয়েছে, লাথি মেরেছে। এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক, কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। মানুষের
ন্যায্য অধিকারের কথা কি আপনি শুনবেন না? সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেছে প্রতিবন্ধীরা স্বাক্ষর করতে জানেন না। এটি
একটি বর্ণবাদী কথা। এটি যদি ইউরোপের কোনো দেশে বলতো তার নামে শমন জারি হতো।
এই বর্ণবাদী বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই। এগার দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, রাষ্ট্রের
দায়িত্ব প্রত্যেক মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। শিক্ষা উপবৃত্তি ২ হাজার টাকা
করতে হবে। মন্ত্রী যখন বলেন তারা স্বাক্ষর করতে পারেন। এর দায় কার? প্রতিবন্ধীরা কোনো বোঝা নয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার সক্ষমতা অনুযায়ী
কর্মসংস্থান তৈরি করা।
স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, প্রতিবন্ধীদের
হুইলচেয়ারে লাথি মেরে প্রকৃত অর্থেই সরকার নিজের অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে লাথি মেরেছে, জনগকে লাথি
মেরেছে।
মওলানা ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, আপনারা বক্তৃতা, বিবৃতিতে
উন্নয়নের গল্প বলেন। এই মানুষগুলো না খেয়ে থাকলে সেটা কি উন্নয়ন? এ দাবি মেনে নেন নাহলে এই ১১ দফাই আপনাদের খেয়ে ফেলবে। অধিকার যদি দিতে
না পারেন আপনাদের ক্ষমতায় থাকার দরকার নাই। যারা অবহেলিত তাদের যদি রক্ষা করতে না
পারেন তাহলে মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুর গল্প বলবেন না।