ল্যানসেটের গবেষণা—

ভারতে ডায়বেটিসে আক্রান্ত ১০ কোটির বেশি মানুষ

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি: ডাউন টু আর্থ।

১৪০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে কমপক্ষে ১০ কোটি ১০ লাখ মানুষই ডায়বেটিসে আক্রান্ত। ননকমিউনিকেবল রোগটিতে আক্রান্তের হার দেশটির মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য উদ্ধৃত করে এ হিসাব দিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চালানো অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ লোক প্রি-ডায়বেটিক পরিস্থিতে আছে। সংখ্যার হিসাবে এ পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ। আর আক্রান্ত ১০ কোটি ১০ লাখের অধিকাংশই টাইপ ২ ডায়বেটিক। 

বিবিসি বলছে, আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ছিল, ভারতে হয়তো ৭ কোটি ৭০ লাখ লোক ডায়বেটিসে আক্রান্ত হতে পারে, আর প্রি-ডায়বেটিসের ঝুঁকিতে থাকতে পারে বড়জোর আড়াই কোটি মানুষ। তবে বর্তমান গবেষকরা বলছেন, দেশটিতে ডায়বেটিসের হার তাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। 

ভারতের সবগুলো রাজ্য নিয়ে বড় পরিসরে চালানো সমীক্ষা বলতে দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড অ্যান্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত গবেষণাটিই প্রথম। গবেষণার প্রধান লেখক এবং ‘‌ডা. মোহনের ডায়াবেটিস স্পেশালিটিস সেন্টারের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আর এম অঞ্জনা বলেছেন, যদি কেউ প্রি-ডায়বেটিক হন, তাহলে তিনি খুব দ্রুতই ডায়বেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। দেখা গেছে, প্রি-ডায়বেটিকদের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন। 

সারাদেশের সবগুলো রাজ্য থেকে ২০ বছরের বেশি বয়সী ১ লাখ ১৩ হাজার মানুষকে নিয়ে উল্লিখিত সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে। ভারতের সবগুলো রাজ্য নিয়ে বড় পরিসরে চালানো সমীক্ষা বলতে দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড অ্যান্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত গবেষণাটিই প্রথম। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ডায়বেটিসের প্রকোপ দেখা গেছে গোয়া (২৬ দশমিক ৪), পুদুচেরি (২৬ দশমিক ৩) ও কেরালায় (২৫ দশমিক ৫)। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও অরুণাচল প্রদেশে ডায়াবেটিসের প্রকোপ আপাতত কম থাকলেও দ্রুত এ হার বৃদ্ধির ঝুঁকির কথা জানানো হয়েছে। 

গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী বেশি দেখা যায় বলেও তথ্য দিয়েছে ওই গবেষণা। 

বোম্বে হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ রাহুল বাকশি বিবিসিকে জানিয়েছেন, পরিবর্তিত জীবনধারা, শহরে স্থানান্তর, অনিয়মিত কাজের সময়, বসে থাকার অভ্যাস, মানসিক চাপ, দূষণ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ফাস্ট ফুডের সহজলভ্যতা ভারতে ডায়াবেটিক রোগী বৃদ্ধির কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ। তিনি বলেন, ডায়বেটিস এখন আর আগের মতো শহুরে বা বিত্তশালীদের রোগ নয়। আমি গ্রাম থেকেও অনেক রোগীকে ডায়বেটিসের চিকিৎসা নিতে আসতে দেখেছি। এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক অনেক শিশুর মধ্যেও এখন ডায়বেটিস শনাক্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কমবয়সী রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন এ কনসালটেন্ট।

ডায়বেটিস দুই ধরনের। টাইপ ১ ডায়বেটিস হলে মূলত শরীরের ‘‌ইনসুলিন কারখানা’ বা বেটা সেলগুলো আক্রান্ত হয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার মতো ইনসুলিন শরীরে তৈরি হয় না। অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়বেটিস হয় মূলত অনিয়মিত জীবনযাপনের ফলে। এক্ষেত্রে সাধারণত শরীরের চর্বি ইনসুলিন হরমোনের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। 

বিশ্বজুড়েই প্রতি ১১ জনে ১ জনের ডায়বেটিসে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। ভয়াবহ ননকমিউনিকেবল রোগটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, কিডনি বিকল হওয়ার পাশাপাশি অঙ্গবিচ্ছেদেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন